জানুয়ারি ২০, ২০২৪ ২১:১২ Asia/Dhaka

দাসত্বের যুগ আজো শেষ হয়নি। কথিত এই আধুনিক যুগেও পাচার হচ্ছে নারী ও কন্যা! মানুষ পাচার করে তাদেরকে দাস বা যৌন-দাসী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক হিসেব অনুযায়ী পাচার হয়ে যাওয়া মানুষদের চারভাগের তিন ভাগই নারী ও কন্যা। লজ্জাজনক বাস্তবতা হল এটা যে ইউরোপ ও আমেরিকায় এসব মানব পাচার ও যৌন দাসত্ব খুবই লাভজনক ব্যবসা। 

আধুনিক যুগে দাস প্রথার নির্মমতা নিয়ে ছায়াছবি নির্মাণ করেছেন স্টিভ ম্যাককুইন। তার ওই ছায়াছবির নাম একজন দাসের ১২ বছরের দাসত্ব বা টুয়েলভ ইয়ার্স অফ অ্যা স্লেভ। এ ছায়াছবি নির্মাণের পর বিশ্ব-সমাজের অনেকের দৃষ্টিই এই সংকটের দিকে নিবদ্ধ হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলও'র রিপোর্ট অনুযায়ী যেসব শ্রমিকদের দিয়ে জোর করে কাজ করানো হয় তাদের শতকরা ৫৬ ভাগই হচ্ছেন এশিয়ান, আর ১৮ শতাংশ হচ্ছে আফ্রিকান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহাসিক গৃহযুদ্ধের আগে দাস ছিল চল্লিশ লাখ, আব্রাহাম লিংকন দাস প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সত্ত্বেও বর্তমানে একবিংশ শতকে সেখানে দাসের সংখ্যা আগের সেই দাসসংখ্যা থেকে পাঁচ ছয় গুণ বেশি!

ইউরোপীয় জোটের রিপোর্ট অনুযায়ী এই মহাদেশে প্রতি বছর দাসের সংখ্যা বাড়ছে পাঁচ লাখ করে। অবৈধ মানব পাচার থেকে আয় করা হচ্ছে এক হাজার কোটি ডলার।  অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার পর এটাই হচ্ছে সবচেয়ে লাভজনক অবৈধ ব্যবসা যার মূল টার্গেট হচ্ছে যৌন দাসত্ব। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বে বিশ লাখ নারী দেহ-ব্যবসায় লিপ্ত হতে বাধ্য হন অথবা তাদেরকে পতিতাবৃত্তির দিকে ঠেলে দেয়া হয়। আর তাদের খদ্দেররা হচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অথবা ইউরোপীয় দেশগুলোর! মানব পাচারের ব্যবসা ১৯৯০ সালে যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত বেশ জোরালো গতিতে অব্যাহত ছিল। এরপর ১৯৯৩ সালে ইউরোপীয় জোটের দেশগুলোর মধ্যে শেঙ্গগেন চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে সীমান্তে চলাফেরা সহজতর হওয়ার সুবাদে মানব পাচারও আরও সহজ হয়ে পড়ে। অতীতে তৃতীয় বিশ্ব, বিশেষ করে  আফ্রিকার দেশগুলো থেকে মানব পাচার করা হত। কিন্তু বর্তমানে ইউরোপের কন্যা ও নারীদেরকেও এই মহাদেশেরই এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাচার করা হচ্ছে। এদের বেশিরভাগকেই পাচার করা হয় পূর্ব ইউরোপ থেকে পশ্চিম ইউরোপে।

মস্কোসহ পূর্ব ইউরোপের যেসব নারী ও কন্যা পশ্চিম ইউরোপে পাচার হচ্ছেন তাদেরকে প্রথমে উন্নত দেশের নাগরিকত্ব ও উন্নত জীবন বা চাকুরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আকৃষ্ট করা হয়। কথিত সভ্যতা ও মানবাধিকারের কেন্দ্রভূমি মনে করে এইসব নারী ওইসব প্রতিশ্রুতিকে সত্য ভেবে মানব পাচারকারীদের ফাঁদে পা দিয়ে শেষ পর্যন্ত যৌন দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হন। ইউরোপের গ্রামগুলো থেকেও কম শিক্ষিত অনেক যুবতীকে একইভাবে ধোঁকা দিয়ে শহরে এনে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর সাত লাখেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি গত চৌঠা জানুয়ারি ২০২৩ সমাজের বিভিন্ন স্তরের নারীদের এক সমাবেশে বলেছেন, নারী সমাজের ব্যাপারে পাশ্চাত্যের কলুষিত অবস্থা এতেই প্রকাশ পায় যে তারা নারীর মান সম্মানের ওপর এতসব আঘাত হানা সত্ত্বেও নিজেদের নারী অধিকারের ধারক-বাহক বলে মনে করছে!  নারীর ওপর এতসব আঘাত ও অসম্মানই হল তাদের দৃষ্টিতে নারীর স্বাধীনতা, কিন্তু এসব তো স্বাধীনতা নয় বরং দাসত্ব। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এ প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, 

 ইরানে ইসলামী বিপ্লবের আগে কোনো কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তিও মনে করতেন যে নারী ও পুরুষের সম্পর্কের বিষয়ে পশ্চিমাদের কথিত স্বাধীনতার চর্চা করা হলে এক শ্রেণীর  পুরুষদের চোখ ও অন্তরের ক্ষুধাগুলো মিটে যাবে, ফলে কোথাও আর যৌন বিষয়ে অনিয়ম বা অনাচার থাকবে না! কিন্তু আপনারা দেখুন পশ্চিমাপন্থী বা পশ্চিমা সমাজের পুরুষদের  চোখ ও অন্তরের ক্ষুধাগুলো মিটে যাওয়া তো দূরের কথা তাদের এ সংক্রান্ত লালসা বা যৌন হামলার সংখ্যা শত গুণ বেড়ে গেছে! কর্মক্ষেত্রে, পথে-ঘাটে, বাজারে ও সর্বত্র-এমনকি সামরিক বাহিনীর মত ইস্পাত-কঠিন নিয়মতান্ত্রিকতার পরিবেশেও নারীরা যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। এসবই হচ্ছে পারস্পরিক সম্মতির বাইরের অবৈধ ও জোরপূর্বক যৌনাচার। আর পারস্পরিক সম্মতির ব্যভিচার তো আছেই! পাশ্চাত্যে আজ যৌনতা নিয়ে চলছে ব্যবসা, চলছে যৌন দাসত্ব, নৈতিকতা ও মানবিকতার সীমারেখাগুলো ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে, এমনসব বিষয়কে সেখানে বৈধতা দেয়া হচ্ছে ও স্বাভাবিক করে দেয়া হচ্ছে যা সব ধর্মেই নিষিদ্ধ। সমকামিতা সব ধর্মের দৃষ্টিতেই মহাপাপ। ওরা এসবকেও আইনি বৈধতা দিচ্ছে এবং বাস্তবিকই কোনো লজ্জাও অনুভব করছে না! 

পাশ্চাত্যে পাচার হওয়া নারী ও কন্যারা ধর্ষণসহ নানা ধরনের যৌন ও মানসিক নিপীড়ন এবং মাদক দ্রব্য ব্যবহারের শিকার হন। এইসব ঘটনার ব্যাপক বিস্তারের ফলে পাশ্চাত্যে অপহৃত নারী ও কন্যাদের মধ্যে পতিতাবৃত্তির ব্যাপক বিস্তার ঘটছে। পাচার হওয়া নারীদের সবচেয়ে বেশি যে তিনটি দেশে নেয়া হয় সেই দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। সাধারণত পাচারকারীরা ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, টেক্সাস ও লাসভেগাসে তাদের বাজার খুলে থাকে। আধুনিক যুগের এইসব দাসপ্রথা ও যৌন দাসত্বের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে না মার্কিন সরকার। হয়তো ১৮ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বিশাল আয় যৌন দাসত্বের এইসব খাত থেকে অর্জিত হয় বলে মার্কিন সরকার অনানুষ্ঠানিকভাবে এইসব লজ্জাজনক ও অবৈধ ব্যবসাগুলোর অবাধ কার্যক্রম চালু রেখেছে। 

১৯৯২ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিএনএন এক রিপোর্টে জানিয়েছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বিখ্যাত পার্কে প্রতিদিন সকালে ধর্ষণের শিকার বালিকা বা তরুণী মেয়েদের লাশ পাওয়া যেত। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক সমিতির রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি বছর দেশটিতে সাত লাখেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন। আর এদের ২১ শতাংশেরই বয়স ১৮ বছরেরও কম। এ ছাড়াও দেশটির প্রতি চার নারীর একজন তাদের জীবনসঙ্গীর হাতে প্রবল মারধোরের শিকার হন, ফলে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। প্রতি বছর বিশ হাজারেরও বেশি মার্কিন নারী তাদের জীবনসঙ্গীর হাতে নিহত হন এবং এক্ষেত্রে স্বামীরা শাস্তি হিসেবে মাত্র ছয় বছর কারাভোগ করেন। ১৯৯৫ সালে এ পি ওয়াটসন নামের এক ব্যক্তির হাতে এক নারী প্রবল মারধোরের শিকার হন। এর শাস্তি হিসেবে ওয়াটসন তিন মাস জেলে থাকেন। অথচ উইলিয়াম লিংকন নামের এক ব্যক্তি বিমানবন্দরে বিড়ালকে লাথি মারায় ছয় বছর সশ্রম কারাদণ্ড পান। এই হচ্ছে পাশ্চাত্যে নারী স্বাধীনতার অবস্থা। অর্থাৎ বিড়ালের চেয়েও তাদের মূল্য কম! অথচ অনেকে এই অবস্থাই এশিয়াতেও আমদানি করতে চান। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ