মার্চ ০৩, ২০২৪ ১৮:৫৬ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা! আজ ৩ মার্চ রোববারের কথাবার্তার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • বিদেশি প্রভুদের পদতলে বসে মোসাহেবি করেছে আওয়ামী লীগ: রিজভী-ইত্তেফাক
  • কিশোর গ্যাং বন্ধে গোড়া থেকে ধরতে হবে: প্রধানমন্ত্রী-ডেইলি স্টার বাংলা
  • এলপি গ্যাসের দাম আরও বাড়ল-যুগান্তর
  • মতামত-এভাবে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়লে মানুষ বাঁচবে কী করে-প্রথম আলো
  • সারা দুনিয়ার মানুষ এ বিচার দেখছে: ড. ইউনূস- মানবজমিন 

কোলকাতার শিরোনাম:

  • ‘মঙ্গলবার ইস্তফা দেব’, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘোষণা,-আনন্দবাজার পত্রিকা
  • মোদির সভায় বিজেপিতে যোগ, ভোটে তমলুকের প্রার্থী হচ্ছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়!-সংবাদ প্রতিদিন
  • সুদীপকে রোজভ্যালির দালাল বলে আক্রমণ কুণালের-গণশক্তি
  • তৃণমূলের জন্য ‘দরজা খোলা’ রাখছে কংগ্রেস শিবির-আজকাল

 

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি- 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. দেশের মানুষ ভালো আছে: অর্থমন্ত্রী। দৈনিক মানবজমিনের এ খবর সম্পর্কে আপনি কী বলবেন?

২. লোহিত সাগর ও বাব আল-মান্দেবে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য আমেরিকা দায়ী। একথা বলেছে ইয়েমেন। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর

মতামত-এভাবে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়লে মানুষ বাঁচবে কী করে-প্রথম আলো

সরকারের নির্বাহী আদেশে এক বছরের মধ্যে আবারও গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ল। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে গড়ে ইউনিটপ্রতি ৭৫ পয়সা আর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে গড়ে ইউনিটপ্রতি ৭০ পয়সা। এতে বাসাবাড়িতে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের জন্য ইউনিটপ্রতি ২৮ পয়সা আর সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের জন্য ১ টাকা ৩৫ পয়সা বেড়েছে। সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ইউনিটপ্রতি ৪৩ পয়সা।

এটাই শেষ নয়; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বক্তব্য অনুসারে, আগামী তিন বছরে ধাপে ধাপে এভাবে বিদ্যুতের দাম ‘সমন্বয়’ করা হবে, অর্থাৎ বৃদ্ধি করা হবে। (বিদ্যুতের দাম ধাপে ধাপে বাড়বে, প্রথম আলো, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত এমন একটি সময়ে নেওয়া হলো, যখন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় এমনিতেই মানুষ ব্যাপক চাপে রয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি মাসে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ এবং বিদ্যুতের দাম জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন দফায় প্রতি মাসে গড়ে ৫ শতাংশ করে বাড়ানোর কারণে তা মূল্যস্ফীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লে গ্রাহককে একদিকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ কিনতে বাড়তি খরচ করতে হয়, অন্যদিকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে উৎপাদিত সব পণ্যের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেগুলোর জন্যও বাড়তি মূল্য দিতে হয়।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়বে, এ কারণে পরবর্তী সময়ে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানোর চাপ তৈরি হবে। গত বছর বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাসের দাম ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা করায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে, যা এ বছর বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

আর এ বছর গ্যাসের দাম ১৪ টাকা থেকে ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা করায় তা সামনের দিনগুলোয় বিদ্যুতের দামের আরও বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া শিল্পকারখানার ক্যাপটিভ বা নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা করার কারণে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রনির্ভর শিল্পকারখানার উৎপাদন খরচও বাড়বে।

এর ফলে একদিকে অপরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও উচ্চহারে কেন্দ্র ভাড়া ধরে চুক্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো স্থানীয় উৎসের জ্বালানি অনুসন্ধান ও উত্তোলনে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এর পরিবর্তে এলএনজি, তেল ও কয়লার মতো আমদানিনির্ভর প্রাথমিক জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এভাবে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় কৃষি, শিল্পসহ সব খাতে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে, যার প্রভাব মাল্টিপ্লেয়িং ইফেক্ট আকারে গোটা অর্থনীতিতে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতিতে এমনিতেই বিপর্যস্ত নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হবে।

বেইলি রোডে আগুন কত হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে-প্রথম আলো

নাজিয়া আহমেদ। অনেক নামের ভিড়ে আলাদা করে হয়তো এই নামের মানুষটাকে চিনতে পারা যাবে না। কিন্তু গণমাধ্যমে দুই শিশুসন্তান আরহান আহমেদ (৭) ও আবিয়াত আহমেদের (৩) সঙ্গে নাজিয়ার ছবিটা দেখলে চেনা যেতে পারে। বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের বহুতল ভবনে গত বৃহস্পতিবার রাতের আগুনে যে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে নাজিয়াও আছেন। আছে তাঁর দুই শিশুসন্তান আরহান ও আবিয়াত। তাঁরা আমার আপনজন।  

সেদিন সন্ধ্যার পর বাইরে যাওয়ার বায়না ধরেছিল আবিয়াত। বয়সে ছোট্ট, তবু তো আবিয়াতের বড় ভাই আরহান। সে বুঝিয়েছিল বড়দের মতো করে। রোজকার মতো আবিয়াতের কপালে চুমু দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন মা। কিন্তু আবিয়াত তো অবুঝ। বাসায় বাবা সায়েক আহমেদ আশিক থাকলে হয়তো সে বুঝত। বাবা বাসায় নেই, তাই বায়নাটা তার বেশি। বাধ্য হয়ে মা দুই সন্তানকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় নাজিয়া তাঁর খালাতো তিন বোনকেও সঙ্গে যাওয়ার কথা বললে, তাঁরাও রাজি হয়ে যান।

এরপর তাঁরা ছয়জন মিলে ঘুরতে ঘুরতে রাতের খাবার খেতে যান বেইলি রোডের সাততলা ভবন গ্রিন কোজি কটেজে। ঠিক কোন রেস্তোরাঁয় তাঁরা খেতে গিয়েছিলেন, তা আমরা জানি না। জানি না, কারণ তাঁদের ছয়জনের কেউ-ই আজ আর আমাদের মাঝে নেই। জানি না, তাঁদের ওই সময়ের আরও অনেক কথাই। এতসব না–জানা নিয়ে এখন আমাদের আয়ু অবধি পথ চলতে হবে।

গ্রিন কোজি কটেজে যখন আগুন লাগে, তখন রাত পৌনে ১০টা। স্বামী আশিককে ফোনে আগুন লাগার বিষয়টি জানিয়েছিলেন নাজিয়া। হুড়োহুড়ি করে ভবনটির নিরাপদ জায়গায় বেরও হয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ দেখেন, ছোট ছেলে আবিয়াত দলছাড়া। সঙ্গে নেই। ছোট ছেলেকে ফেলে এসে কোথায় যাবেন এই মা! তাই আবারও আশিককে ফোনে বিষয়টি জানিয়ে বড় ছেলের হাত শক্ত করে ধরে ছোট ছেলেকে খুঁজতে ভেতরে চলে যান তিনি। এরপর ফোনে আর তাঁকে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি সঙ্গে থাকা তিন খালাতো বোনকেও।

এরপর শুরু হয় উদ্ধারকাজ। ছোট্ট আবিয়াতের মরদেহ পাওয়া যায় ভবনটির তিনতলার সিঁড়িতে। এর কয়েক ঘণ্টা পর নাজিয়া ও তাঁর বড় ছেলের মরদেহ উদ্ধার হয় ভিন্ন জায়গা থেকে। তাঁদের কারও গায়ে আগুনে পোড়া ক্ষত নেই। ধারণা করা হচ্ছে, দমবন্ধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।

আচ্ছা, মা-ভাইকে হারিয়ে ধোঁয়া আর অন্ধকারে আবিয়াত কি হৃদয়চেরা আর্তনাদ করেছিল? আমরা না জানলেও বুঝতে পারি। আরহানেরও হয়তো একই অনুভূতি হয়েছিল! নিজেকে ওই সময়ের আবিয়াত ভেবে দেখেছি, ওই ধোঁয়ায় ওই অন্ধকারে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মা, মা বলে চিৎকার করছি খুব, কিন্তু আমার চিৎকার মা শুনতে পারছে না। এমনকি কারও কানে পৌঁছাতে পারছে না ওই চিৎকার। সবাই সবার মতো ছোটাছুটি করছে। বড়দের পাশে অন্ধকারে আমি ছুটতে পারছি না। বাঁচতে চাইছে সবাই। মায়েরা বাঁচাতে চাইছে তাঁদের সন্তানদের। কিন্তু আমার মা, আমার ভাই আমার কাছে আসতে পারছে না। ধোঁয়ায় খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। বুকের ভেতর গুমরে উঠছে। ভয়ে মা হারানো-ভাই হারানো আমার চোখে অশ্রু, কিন্তু কান্নার শব্দ আসছে না। ধীরে, থেমে যাচ্ছে সব। হঠাৎ করে আর কিছু বলতে পারি না। মা-ও কি একইভাবে খোঁজেনি আমায়! তিনিও অন্ধকারে আমার ভাইয়ের হাত শক্ত করে ধরে হতাশ হয়ে কাঁদেননি শেষবার! কেঁদেছেন নিশ্চয়ই। মায়ের বুকের ভেতরও নিশ্চয়ই ঢুকে পড়েছিল দ্রুতগামী রেলগাড়ির হাওয়া। আমরা আর কেউ কাউকে খুঁজে পাইনি। কিন্তু অনেক পরে সবাই আমাদের খুঁজে পেয়েছে, নিথর। আর কোনো দিন না-পাওয়ার মতো করে শেষবার খুঁজে পেয়েছে আমাদের।

ছোট্ট আবিয়াত থেকে বের হয়ে এবার ভিন্ন কথা বলি, ‘অরণি’ শব্দের অর্থ জানেন নিশ্চয়ই। চকমকি পাথর; যে কাঠ ঘষে আগুন জ্বালানো যায়। সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে নয়, সন্তান হারানো-মা হারানো-ভাই হারানোর কষ্টে আর এক বুক অন্ধকার জমিয়ে দম বন্ধ হয়ে নিদারুণ যন্ত্রণায় মৃত্যু হয়েছে নাজিয়া, আরহান ও আবিয়াতের। শুধু তাঁরা নন, একইভাবে মৃত্যু হয়েছে ফৌজিয়া আফরিন (২২) ও তাঁর বোন সাদিয়া আফরিন, মায়শা কবির (২১) ও তাঁর বোন মেহেরা কবির (২৯), ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক লুৎফুর নাহার করিম (৫০) ও তাঁর মেয়ে জান্নাতিন তাজরী নিকিতা (২৩), বুয়েটের শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিন (১৯) ও লামিসা ইসলাম (২০), বরগুনার মো. নাঈম (১৮) এবং দ্য রিপোর্ট ডটকমের প্রতিবেদক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী বা বৃষ্টি খাতুনসহ (২৫) ৪৬ জনের। তাঁদের কেউ গিয়েছিলেন শিশুসন্তানদের নিয়ে, কেউ গিয়েছিলেন স্বজনদের নিয়ে, কেউ গিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। কারও কারও জীবন চলত ওই ভবনে থাকা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে।

তাঁদের সবার আয়ু ঝরে গেল আগুনে। আমি জানি আরহান-আবিয়াতের আদুরে শৈশব। অথচ তারা জেনে গেল, এই দেশে বড় হওয়া মানা। মায়ের সঙ্গে খেতে গেলে এই দেশে আগুনে-ধোঁয়ায় বন্ধ হয়ে আসে ছোট ছোট দম; বুকচেরা আর্তনাদে কান্না করলেও কেউ শুনতে পায় না। ব্যাখ্যার অতীত এই বেদনা।

যে কারও মৃত্যুর পর শোকের গন্ধ লেগে থাকে বাড়িতে। এই শোক আর ব্যক্তিগত নেই। সবার হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই শোক। এরপরও আবার হয়তো সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। কিন্তু সব হারানো বাবা আশিকের কাছে কি সত্যিই সব স্বাভাবিক হবে? স্ত্রী-দুই ছেলের প্রতিটা শব্দ-স্পর্শ তো তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো। আগুন তাঁর সবকিছু এলোমেলো করে দিল। এখন একগলা বিষাদ আগলে কাটাতে হবে তাঁকে। হাসি-খুশির এই দেশে এভাবে থাকাই কি নিয়তি? আমরা জানি না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে আমরা জেনেছি, বেইলি রোডের ভবনটিতে যে আগুনের ঝুঁকি ছিল, তা জানত সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা। তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ভবন কর্তৃপক্ষও গায়ে মাখেনি। এত মানুষের মৃত্যুর পর বেরিয়ে এসেছে গাফিলতির চিত্র। আগুনের ভয়াবহতা ও মৃত্যুর পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন গত শুক্রবার বেইলি রোডে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটিতে কোনো অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় শিশুসহ এত এত মানুষের প্রাণ দিতে হলো। যাঁরা গেছেন, তাঁদের তো আর ফেরত আনা যাবে না। কিন্তু যাঁরা এখনো স্বপ্ন চোখে নিয়ে বেঁচে আছি এই শহরে—এই দেশে তাঁদের দিকে দয়া করুন। তাঁদের নিরাপদে বাঁচতে দিন। শুধু নিজেদের কথা না ভেবে দিলদরিয়া হোন।

গত কয়েক বছরে রাজধানীতে ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আর না। কতটা কান পাতলে আমাদের কান্না শুনতে পারবেন; কত হাজার মানুষ মরলে মেনে নেবেন আমাদের দাবি—জানা নেই। এখনো সময় আছে, ব্যবস্থা নিন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কথা শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জেনে কী হবে, জনগণকে জানারও ব্যবস্থা করুন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বড় করে নোটিশ টাঙিয়ে দিন। সম্ভব হলে ওই সব ভবন বন্ধ করে দিন। নইলে, আরহান-আবিয়াতসহ যাদের প্রাণহানি হয়েছে, তারা নিশ্চয়ই অভিশাপ দেবে। আর আমরা যারা বেঁচে আছি, তারা আপনাদের সন্দেহ করতে করতে হয়তো একইভাবে চলে যাব। তখন আমরাও ছোট্ট আরহান-আবিয়াতদের সঙ্গে অভিশাপ দেব। এত এত অভিশাপ নিয়ে বেঁচে থাকতে আপনাদের কি একটুও কষ্ট হবে না?

সারা দুনিয়ার মানুষ এ বিচার দেখছে: ড. ইউনূস-মানবজমিন

তার এবং সহকর্মীদের বিচারের ঘটনা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় উল্লেখ করে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এটা এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, দেশের মধ্যেও সীমাবদ্ধ নয়, সারা দুনিয়ার মানুষ লক্ষ্য করছে এই বিচারে কি হলো। আমরা যা যা করছি তা সবই তারা দেখছে। তিনি বলেন, এই যে ঘটনাগুলো ঘটছে তার পক্ষে লিখুন, বিপক্ষে লিখুন কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু এটা রেকর্ডেড। জাতির ইতিহাসের একটা অংশ হয়ে যাবে। এটার জন্য কি আমরা গর্ববোধ করবো, নাকি অপরাধবোধ করবো? এরকম একটা সন্তানকে এমন অপরাধে অপরাধী কেনো করলাম? এগুলোর জবাব থেকে মুক্তি নাই। রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জামিন পাওয়ার পর এসব মন্তব্য করেন ড. ইউনূস। 

তিনি বলেন, আপনারা আজকের এই ছবিটা তুলে রাখুন। দুর্নীতি দমন কমিশনের বটতলা আমরা সবাই। এটা ঐতিহাসিক একটা ছবি। এটা আজকে-কালকে পত্রপত্রিকায় বের হবে। কিন্তু এটা যুগ যুগ ধরে নানা বইতে প্রকাশিত হবে।

আপনারা সেই ইতিহাসের সাক্ষী। এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, একজন নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছে, জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে, মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ এনেছে। আমি একা নই। আমরা আরও ৭ জন, যারা সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম করেছে গরীব মানুষের জন্য। এরা কোন চাকরি করতে এখানে আসে নাই। তারাও অর্থ আত্মসাত, জালিয়াতির এবং মানি লন্ডারিংয়ের জন্য অভিযুক্ত।

সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, আপনারা আজকে এখানে উপস্থিত আছেন। আপনারা জন্ম-জন্মান্তর ধরে বলতে পারবেন যে, আমরা উপস্থিত ছিলাম সেখানে। এবং কেনো ছিলেন, কি হয়েছে সেগুলো আপনারা বর্ণনা করবেন। এটা আমার মুখ থেকে শোনার দরকার নেই।  আপনারা যা নিজে মনে করবেন তা আপনার পরের প্রজন্মকে জানাবেন। আগের প্রজন্মকে জানাবেন। যারা এখানে উপস্থিত হয়নি তাদের জানাবেন। আইন মানুষের শুভ কামনা করে রচনা করা হয়। আইন মানুষের মনে স্বস্তি আনে, শান্তি আনে। আইন মানুষের মনে আশঙ্কাও জাগায়। ভয়ংকর শঙ্কা জাগায়। আইনকে আমরা কোনদিকে নিয়ে যাব সেটা সমাজের ইচ্ছা। সমাজ কিভাবে করতে চায়। আপনারাও ঠিক করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আজ যে বিচারে বসলো সেটা সঠিক কারণে হয়েছে কিনা, সঠিক ভাবে হয়েছে কিনা। এটা আমার মুখের দিকে তাকানোর কোন দরকার নাই। এটা আপনার মনে যা জাগে তাই করবেন। 

নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েরা এগুলো স্কুলে পড়বে। তারা তো নোবেল পুরষ্কারের কথা ভুলতে পারবে না। তখন তারা পড়বে তার নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দেয়, মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ দেয়, জালিয়াতিতে দেয়; তখন তারা কনফিউশনে পড়ে যাবে। আসলটা কি! এটা কি মুখোশ নাকি আসল মানুষ। তারা একাই নাকি তাদের সাঙ্গপাঙ্গ আছে।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

‘মঙ্গলবার ইস্তফা দেব’, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘোষণা-আনন্দবাজার

আগামী মঙ্গলবার ইস্তফা দিচ্ছেন, জানিয়ে দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। জানালেন, তিনি এর পর ‘বৃহত্তর ক্ষেত্রে’ যেতে চলেছেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই তিনি যেতে চলেছেন বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।রবিবার এবিপি আনন্দকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বিচারপতি জানান, কলকাতা হাই কোর্টে তাঁর শেষ দিন সোমবার। তাঁর হাতে যে ক’টি মামলা রয়েছে, সোমবার সেগুলি ছেড়ে দেবেন। তার পর মঙ্গলবার তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠাবেন।রাজ্যের শাসকদলের সমালোচনা করে বিচারপতি জানান, পশ্চিমবঙ্গ দুর্নীতিতে ছেয়ে গিয়েছে।কোন ‘বৃহত্তর ক্ষেত্রে’ যেতে চলেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘যদি আমি কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দিই, তারা যদি আমাকে টিকিট দেয়, আমি বিবেচনা করে দেখব।’’ আর সংবাদ প্রতিদিনে এ সম্পর্কে শিরোনাম করা হয়েছে এভাবে,

মোদির সভায় বিজেপিতে যোগ, ভোটে তমলুকের প্রার্থী হচ্ছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়! 

তৃণমূলের জন্য ‘দরজা খোলা’ রাখছে কংগ্রেস শিবির-আজকালের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ৪২ টি আসনেই লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এখনই হাল ছাড়তে নারাজ কংগ্রেস শিবির। পাটনাতে বিরোধীদের মিছিলের আগে এই সুর শোনা গেল কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের গলায়। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নিজের কথা বলেছেন। তবে তিনি এখনও ইন্ডিয়া জোটে রয়েছেন। তাঁরও প্রধান টার্গেট বিজেপিকে পরাস্ত করা। আমরা আলোচনার দরজা এখনও খোলা রাখছি। শেষকথা এখনও বলা বাকি আছে।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ৩

ট্যাগ