মার্চ ০৫, ২০২৪ ১৭:০০ Asia/Dhaka

শৈশবই ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি। এই ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে ভবিষ্যতের আদর্শ সন্তান গড়তে মায়ের ভূমিকাই প্রধান ও মুখ্য। একজন সচেতন ও বিজ্ঞ মা-ই পারেন তার সন্তানকে প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে। একজন শিশুর সবচেয়ে বড় সাথী তার মা, সুন্দর চরিত্রবান সন্তান গড়ার কারিগরও হলেন মা।

শিশু তার মাতৃসত্তাকে অনুধাবন ও অনুকরণ করে মায়ের গর্ভে থাকার সময় থেকেই। মায়ের সব কাজ-কর্ম, চিন্তা-চেতনা, আবেগ-অনুভূতি, আচরণ ও মূল্যবোধ প্রভাব ফেলে শিশুর ওপর। কারণ শিক্ষাকালীন নব্বই-ভাগ সময়ই শিশু মায়ের কাছেই থাকে। শিশুর প্রথম ও প্রকৃত শিক্ষকও মা। মাই প্রথম শিশুকে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। কথা বলা শেখার সময় মা সারাক্ষণ তার সন্তানের সঙ্গে কথা বলেন। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসহ বিভিন্ন জিনিসের নামও শেখান মা নামক এই শিক্ষক। যৌথ পরিবারে এ কাজ অনেকটা সহজ হলেও একক পরিবারে মাকেই পালন করতে হয় এ দায়িত্ব।

সন্তান প্রতিপালনে মায়ের বহুমুখী গুরু-দায়িত্ব ও মমতাময়ী ভূমিকার কারণেই ইসলাম মাকে দিয়েছে বাবার চেয়েও বহু গুণ বেশি সম্মান। মহানবীর ভাষায় মায়ের পায়ের নিচে রয়েছে সন্তানের বেহেশত। বাবা ও মা বৃদ্ধ হলে তাদের প্রতি কখনও বিরক্ত হয়ে উহ্ শব্দটিও করতে নিষেধ করেছে পবিত্র কুরআন। মায়ের মুখের ভাষাই শিশু প্রথম রপ্ত করতে থাকে। এমনকি শৈশব থেকেই শিশু মায়ের সব আচরণ ও কথাবার্তা নকল করতে শেখে। কারণ শিশুরা সবকিছুকে অনুকরণ করতে ভালোবাসে। তাই মাকে খুব সতর্কতার সঙ্গে এ সময়ে শিশুর লালনপালন করতে হবে। মায়ের মাধ্যমেই শিশু তার পরিবার ও পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে পরিচিত হয়। সুতরাং শিশুর মানসিক গঠনে ও চারিত্রিক বিকাশে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম।

মা যত নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দরদ দিয়ে তার শিশুর পরিচর্যা ও লেখাপড়া করিয়ে থাকেন তা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আসলে মায়ের বিকল্প হয় না। বই-খাতা-কলমসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু দিয়ে ব্যাগ সাজিয়ে দিয়ে সময় মতো মাথায় সিঁথি কেটে ও পরিপাটি করে স্কুলে পৌঁছানো কেবল মায়ের পক্ষেই সম্ভব। মাত্রাতিরিক্ত স্নেহ আবার কোমলমতি শিশুকে স্বেচ্ছাচারী করে তোলে। সেদিকেও মাকে সচেতন থাকতে হবে। শিশুকে কখনো বেশী শাসন করা উচিত নয়। লঘু পাপে গুরুদণ্ড অনেক সময় শিশুকে আরও জেদি করে তোলে। মা যদি সহানুভূতি দিয়ে শিশুকে সংশোধনের চেষ্টা করেন তবে সে চেষ্টা শারীরিক শাস্তির চেয়ে অনেক বেশী সুফল দেয়।

শিশুর চরিত্র গঠনের দায়িত্বটাও মূলত মাকেই পালন করতে হয়। পরিবারে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা ও ছোটদের প্রতি আদর-স্নেহ দেখিয়ে সন্তানের সামনে মাকেই হতে হয় দৃষ্টান্ত। অতিরিক্ত স্নেহের বশে তাদের অন্যায় আবদার মেনে নেয়া উচিত নয়। চাওয়া মাত্র চাহিদা পূরণের অভ্যাস শিশুকে অলস ও জেদি করে তোলে। তাই নিজ নিজ সামর্থ্যের অনুকূলে শিশুর আবদার পূরণ করতে হবে। শত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও শিশুর চরিত্র গঠনের স্বার্থে প্রত্যেক মাকে দিতে হবে কিছু সময়। মায়ের আন্তরিক সোহাগ আর চোখের শাসন –এ দুই-ই সন্তানকে সঠিক পথে রাখে। একটি শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র হচ্ছে তার পরিবার। বড় হয়ে সে যে পরিবেশেই শিক্ষা নিক না কেন পারিবারিক শিক্ষার একটা প্রভাব তার মধ্যে সবসময়ই দেখা যায়। তাই প্রত্যেক মা বাবারই সন্তান প্রতিপালনে কিছু নীতি মেনে চলা উচিত। যেমন-সন্তানকে নিয়ন্ত্রিত আবেগের সঙ্গে লালনপালন করা, মাত্রাতিরিক্ত শাসন থেকে বিরত থাকা, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা, শৃঙ্খলা মেনে চলতে শেখানো, নৈতিকতা শেখানো এবং  বড়দের শ্রদ্ধা আর ছোটদের স্নেহ করতে শেখানো ইত্যাদি।

মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত: হাদিস

সন্তানকে যথাযথ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাও মা-বাবার দায়িত্ব। অনেক বাবা-মা আছেন যারা অতিরিক্ত আবেগে ভুলে যান যে, তার সন্তান শুধু পারিবারিক গণ্ডিতেই জীবন পার করবে না। তাকে বড় হয়ে অনেক কিছু সামাল দিতে হবে। তাই আপনার সন্তানকে স্বাবলম্বী ও যথাযথ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। বর্তমান সময়ে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাও খুব জরুরি। কিন্তু আমাদের তরুণ সমাজ বেশির ভাগ সময়েই তার অপব্যবহার করে থাকে। তাই টেকনোলজির ব্যবহার সম্পর্কে আপনার সন্তানকে সচেতন করে তুলুন। অনেক মা-বাবাই ভাবেন আমার সন্তান কেন পরিশ্রম করবে। একটু ভেবে দেখুন, সে যে পরিশ্রম করবে বা করছে তার সুফল সে নিজেই উপভোগ করবে। যার ফলে সে-ই শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে আর সে-ই পাবে মানসিক প্রশান্তি। তাই সন্তানকে পরিশ্রম করতে উৎসাহ দিন। স্বনির্ভরতা বা স্বাধীনতা, দায়িত্বশীলতা ও শ্রমের মর্যাদার মাধুর্য বা আনন্দও তাকে উপভোগ করতে দিন। সব ক্ষেত্রেই আপনার ইচ্ছে আর স্বপ্ন সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেবেন না।

স্নেহ-মমতার দিক থেকে মায়ের চেয়ে সন্তানের আপন যেমন কেউ নেই তেমনি সুশিক্ষিত ও চরিত্রবান জাতি তখনই গড়ে উঠবে যখন মায়েরাও হবেন সুশিক্ষিত ও চরিত্রবান। ধার্মিক মায়ের সন্তানরা হবেন ইমাম হুসাইনের অনুসারী। অন্যদিকে লোভী, সংকীর্ণমনা, স্বার্থপর ও চারিত্রিক পবিত্রতাকে পদদলনকারী রমণীর সন্তানরা হবে ইয়াজিদেরই অনুসারী বা ইয়াজিদি-স্বভাবসম্পন্ন। সত্যিকারের ধার্মিক বা খোদাভীরু মা-বাবা সন্তানকে গড্ডালিকা-প্রবাহে কিংবা ইসলাম-বিদ্বেষী পরিবেশের ওপর ছেড়ে দিতে পারেন না। তারা তাকে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পাঠাতে পারেন না যেখানে সে বড় হয়ে উঠবে একজন নাস্তিক্যবাদী বা বিভ্রান্ত পশ্চিমা মতাদর্শের অনুসারী হিসেবে। তাই এ বিষয়ে মা-বাবার অনেক দায়িত্ব রয়েছে।

সন্তানকে কেবল বড় ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানানোর চিন্তায় মশগুল থাকলেই হবে না, সন্তান খোদাভীরু বা খোদা-সচেতন হচ্ছে কিনা সেটাও দেখতে হবে এবং তার শৈশব ও কৈশোর থেকেই তাকে প্রকৃত মানুষ হওয়ার দিকে আকৃষ্ট করতে হবে। আপনি যদি টক তেঁতুল গাছের চারা লাগিয়ে তা থেকে সুমিষ্ট আম আশা করেন তাহলে আপনি আসলেই বোকার রাজত্বেই বসবাস করছেন।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ