মার্চ ০৯, ২০২৪ ১৭:১৫ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: রেডিও তেহরানের প্রাত্যহিক আয়োজন কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আজ ৯ মার্চ শনিবারের কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। পরে বিস্তারিত খবরে যাব।

বাংলাদেশের শিরোনাম: 

  • সরকারি হাসপাতালে ৭ হাজার ৪৫৯ জন চিকিৎসককে ওএসডি-প্রথম আলো
  • আঙুলের ছাপ জটিলতা-সাবান-লেবু দিয়ে হাত ধুতে বললেন নির্বাচন কর্মকর্তা-ইত্তেফাক
  • আদালতে সহিংসতার সব আসামি গ্রেপ্তার হবে: ডিবি প্রধান-যুগান্তর
  • পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে-মানবজমিন

কোলকাতার শিরোনাম:

  • দিল্লিতে মুসল্লিদের প্রহার, নিন্দা, পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত-ইন্ডিয়া টুডে
  • শিলিগুড়ি পৌঁছলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, মঞ্চে অভিজিৎ বললেন, ‘তৃণমূল দুর্বৃত্তদের দল’ -আনন্দবাজার পত্রিকা
  • নো ভোট টু তৃণমূল’, -অভিজৎ-সংবাদ প্রতিদিন
  • জুমা নামাজ পড়ার সময় ধেয়ে এল দিল্লি পুলিশের লাথি, নিন্দার ঝড় দেশজুড়ে - গণশক্তি
  • দূষণের জেরে অসুস্থ হতে পারেন প্রায় দেড় কোটি মানুষ! -আজকাল
  • চিনা ফৌজকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কৌশলগত অবস্থান ভারতের, অরুণাচলে সেলা টানেল উদ্বোধন মোদির-পুবের কলম

শিরোনামের পর এবার বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত তুলে ধরছি।

কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচনে সংঘর্ষের খবরটি প্রায় সব দৈনিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশিত হয়েছে।

প্রথম আলো লিখেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালে নগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁরা ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ নিজামউদ্দিনের সমর্থক। অভিযোগ উঠেছে ‘বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসীন বাহারের কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসীন বাহার বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। আমার নেতা-কর্মীরা কারও ওপর হামলা চালাননি। উল্টো আমার এক কর্মী হাসপাতালে। তিনি আরও বলেন, আমার দিকে কেন অভিযোগ জানি না! 

প্রথম আলোর অপর এক খবরে লেখা হয়েছে, ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচন‘উল্টাপাল্টা টিপে মেশিনই নষ্ট করে ফেলেছেন’। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। প্রতিটি ভোটকক্ষে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সামনে ভ্যাসলিনের ছোট কৌটা ও টিস্যুর বাক্স রাখা আছে। আঙুলের ছাপ মেলাতে ভোটারের আঙুলে ভ্যাসলিন ঘষেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অনেকটা সময় ঘষাঘষির পরও অনেক ভোটার, বিশেষত প্রবীণ ও নারীদের আঙুলের ছাপ মিলেনি। ভুক্তভোগীদের হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে, লেবু দিয়ে কচলে দুপুরের পর আবার কেন্দ্রে আসার অনুরোধ করেছিলেন কর্মকর্তারা।

আদালতে সহিংসতার সব আসামি গ্রেপ্তার হবে: ডিবি প্রধান-ইত্তেফাক/যুগান্তর

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা মামলার আসামিরা যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।হারুন অর রশীদ বলেন, মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে। কে কোন দল করে তা বিবেচ্য নয়।

তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ডিবি পুলিশ কাজ করছে। ইতোমধ্যেই ৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা সবাই আইনজীবী। বনানীসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়ে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মাদ হারুন।

উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট বারে ভোট গণনায় সহিংসতার ঘটনায় শুক্রবার (৮ মার্চ) রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুর রহমান সিদ্দিকী (সাইফ)।

সরকারি হাসপাতালে ৭ হাজার ৪৫৯ জন চিকিৎসককে ওএসডি-প্রথম আলোর এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, ‘যেখানেই যাই, সেখানেই হাসপাতালে ডাক্তার থাকে না শুনতে পাই’—এ আক্ষেপ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরই ৭ হাজার ৪৫৯ জন চিকিৎসককে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে রেখেছে, যা সরকারি চিকিৎসক সংখ্যার ২১ শতাংশ।বিশেষ ভারপ্রাপ্ত মানে হলো, এই চিকিৎসকেরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া থেকে দূরে রয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসক–স্বল্পতার এটি অন্যতম কারণ। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক–স্বল্পতার কারণে রোগীরা অনেক ক্ষেত্রে সেবা পান না। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ভালো চিকিৎসা না পেয়ে রোগীদের নিয়ে ঢাকায় আসার প্রবণতা রয়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, স্নাতকোত্তর চিকিৎসাশিক্ষার জন্য চিকিৎসকদের ওএসডির দরকার আছে। তবে সেই উচ্চতর শিক্ষা হাসপাতালের সেবায় ছাড় দেওয়ার বিনিময়ে যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে-মানবজমিন

স্থপতি ইকবাল হাবিব। রাজধানীর হাতিরঝিল, ধানমণ্ডি লেক, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটসহ অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যের ডিজাইনার। সক্রিয়ভাবে যুক্ত পরিবেশ ও সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে। বর্তমানে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি। ঢাকায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন মানবজমিন’র সঙ্গে। জানিয়েছেন নগর ব্যবস্থাপনায় আমাদের ত্রুটি ও সম্ভাবনার কথা। বলেন, অর্থলিপ্সু মালিক আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নেক্সাস তৈরি করে ফেলায় ঢাকা মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতির এ দুষ্টচক্র রাষ্ট্রের সক্ষমতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। সরকার তলায় তলায় কম্প্রোমাইজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারী তৈরি করায় পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, যেভাবে রানা প্লাজার পর বস্ত্রশিল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পেরেছি, প্রতিমাসে অজস্র মৃত্যুর বান আমরা রোধ করতে পেরেছি ঠিক সেইভাবে সরকার সংবিধিবদ্ধ নিয়মকানুন যা রয়েছে সেটাকে সমন্বিত করে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন বা মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করলে এ ভবনগুলোকে পরিশীলিত, পরিমার্জিত এবং কনপ্লাইন্ড করার মধ্যদিয়ে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ করা সম্ভব।

তিনি বলেন, গৃহয়াণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ রাজউকের মাধ্যমে প্রায় ৮৮ শতাংশ অবৈধ ও বিপজ্জজনক ভবনকে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে এনে পরিমার্জিত পরিশিলিত এবং রেক্টফিকেশন করে যথাযথ করণের একটি নীতিমালা ড্যাপের অধীনে তৈরি করা হয়েছে। সেটি দ্রুত কার্যকরের মধ্যদিয়ে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে একটি নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক ও অনুমোদিত কার্যক্রমভিত্তিক ভবনের শহর তৈরি করতে পারবো। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের অধীন বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি (বিআরএ) দ্রুত তৈরি করে সারা বাংলাদেশে একই ধরনের নিরাপত্তা বলয় আমরা গড়ে তুলতে পারবো। মনে রাখা দরকার নগর নিরাপদ হলেই কেবল একটি দেশ তার উন্নতর জায়গায় যেতে পারে, অন্যথায় নয়। 

এ নগরপরিকল্পনাবিদ বলেন, আমরা নগরীকে কেন্দ্রীভূত করেছি। নগরীকে একটি পুঞ্জিভূত কার্যক্রমের মধ্যে নিয়ে এসেছি। কিন্তু আইনগুলোকে করে রেখেছি বিচ্ছুরিত। হওয়ার কথা ছিল নগরী হবে বিচ্ছুরিত আর আইনগুলো হবে কেন্দ্রীভূত-পুঞ্জিভূত। এর ফলে বিচ্ছুরিত আইনের কোনোটাই এককভাবে কার্যকর করা যাচ্ছে না, শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। এ বিশৃঙ্খল অবস্থাকে একটা ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পুঞ্জিভূত বা সমন্বিত জায়গায় আনতে হবে। সেই জায়গাটির কারণে আমরা বাস্তব রচিত উত্তরণ দেখছি না। অর্থাৎ ফায়ার ব্রিগেড সিভিল ডিফেন্সকে কিছু আইন দিয়েছে কিন্তু তার নীতিমালা-২০১৬ সাল থেকে স্থগিত করে বসে আছে।

আজকের ঘটনায় তাদের বিচারের আওতায় আনতে পারবো না। তাহলে এ ক্ষতি যারা করেছেন তাদের দ্বার তারা কীভাবে উন্মোচন করতে পারেন। একই সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় তারা শুধু নোটিশ দিতে পারে, সিলগালা করার ক্ষমতা নেই। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেন, কিন্তু অনুমোদনের পর ব্যবহার পরিবর্তন করায় যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেটা তারা তোয়াক্কা করার ক্ষমতা রাখেন না। ক্ষমতা রাখলেও সেটিতে তাদের যে তথ্য রয়েছে সে তথ্য শেয়ার না করায় অন্যান্য যারা সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স দিচ্ছেন তারা এটার ব্যবহার কী ছিল সেটা জানেন না। না জেনে তারা আবাসিক ভবনে কমার্শিয়াল দিচ্ছেন, কমার্শিয়াল ভবনে রেস্টুরেন্ট দিচ্ছেন এবং এ লাইসেন্স দিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পারস্পরিক তথ্যের আদান-প্রদান সেটা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না। সবকিছু মিলে একটি অশুভ চক্র জন্মদানের সব কর্মকাণ্ড আমরা করেছি। এ ফাঁক-ফোকরের কারণে অর্থলিপ্সু মালিক এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটা নেক্সাস তৈরি করে ফেলেছে। সেই নেক্সাসের কারণে তৈরি হচ্ছে মৃত্যুকূপ। আর আমাদের অসচেতনতা এ মৃত্যুকূপে প্রবেশের সমস্ত পথ সুগম করেছে। আমিতো দেখি না আগুন লাগলে আমার বাচ্চা নিয়ে বের হতে পারবো কিনা। আমিতো দেখি না রেস্টুরেন্টে স্প্রিঙ্কলার সিস্টেম। আবদ্ধ দোকনে আগুন ধরলে যাবো কোথায়? পালানোর কোনো পথ নেই। তাই ব্যক্তি সচেতনতাও এর জন্য দায়ী। সব মিলিয়ে দেখলে ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র, প্রশাসন সবার একটা অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের শিকার ছিল সেদিনের ৪৬ জন। 

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সরকারি সংস্থার সক্ষমতার অভাবের সঙ্গে দুর্নীতিও শতভাগ জড়িত। দুর্নীতির নেক্সাস সক্ষমতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। শুধু ফায়ার ফাইটিংয়ের সক্ষমতা দেখলে হবে না। সিভিল ডিফেন্সটা কোথায়? ফায়ার ফাইটিং আর সিভিল ডিফেন্স এক না। কেন আমরা প্রত্যেক বিপনীবিতান, রেস্টুরেন্ট, কারখানা, জনসমাগমের জায়গায় ফায়ার ফাইটিং এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সিভিল ডিফেন্স অন্তর্ভুক্ত অবস্থায় রাখতে পারবো না। আমাদের শিল্প মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নির্দেশনা রয়েছে যে ১৮ শতাংশ মানুষ এ বিষয়ে প্রস্তুত বা প্রশিক্ষিত থাকবে। সেটার বাধ্যবাধকতা করছে না কেন। সেই বাধ্যবাধকতা থাকলেতো আজকে এ রেস্টুরেন্টে ৩-৪ জন লোক পাইতেন। সেদিন আমার বন্ধু ১৫ মিনিট পর টের পেলেন যে আগুন লেগেছে। কেন ভবনটিকে এলার্ম সিস্টেম করতে পারলাম না। 

বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারি সংস্থাগুলোর চলমান অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চলমান অভিযানগুলো মানুষের সঙ্গে হটকারিতা এবং প্রবঞ্চনা। আমরা নগর উন্নয়ন কমিটির মিটিং-এ পরিষ্কারভাবে বলেছি যে প্রটোকল ছাড়া অর্থাৎ যারা আইনি সিদ্ধতায় লাইসেন্সগুলোর অনুমোদন ও দেখভাল করে তারা যৌথভাবে প্রটোকল তৈরি করে চেকলিস্টের মাধ্যমে সঠিক ও সুনির্ধারিতভাবে অভিযান পরিচালনা করবে। সেই সঙ্গে বিপজ্জনকতার মাত্রা অনুযায়ী প্রতিবিধান দিয়ে সময় নির্ভর উত্তরণের পথ দেখাবেন। এ অভিযান ছাড়া অন্য যেকোনো অভিযান মানুষের সঙ্গে হটকারিতা এবং প্রবঞ্চনা। কারণ এ শহরে মানুষের জন্য উন্মুক্ত জায়গা, খেলার মাঠ এবং বিনোদনের স্থান নেই। রেস্টুরেন্টগুলোই বিনোদনের একমাত্র জায়গা। তা কেড়ে নেয়ার অধিকার কারও নেই। কারণ বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করার মধ্যদিয়ে যে প্রহসন এবং অত্যাচার হবে সেটি ঘুষ বাণিজ্যের চক্রকে বৃদ্ধি করার সুযোগ তৈরি করবে। 

এ নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ঢাকা শহরের নগর পরিকল্পনার বর্তমান যে অবস্থা তাতে রাতারাতি বসবাসযোগ্যতায় নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। সম্ভব হচ্ছে- ব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে ক্রমাগত উত্তরণের পথ তৈরি করা, সচেতন মানুষ তৈরি করা। নগর পরিকল্পনায় ক্ষমতার দাপট প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকার ও জনগণের আইনের বিপরীতে ক্ষমতার দাপট যে দেখাচ্ছে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি ভাঙতেই হবে। এতে কোনো সংশয় রাখার দরকার নেই। তলায় তলায় কম্প্রোমাইজ করার কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকার তৈরি করায় পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কার্পেটের তলায় আর এ ময়লা ঢেকে রাখা উচিত না। স্পষ্ট করা উচিত কেন সরকারের আইন-নীতিমালা রাজনৈতিক ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও আমরা পারছি না। বিচার বিভাগীয় অথবা প্রশাসনিক ব্যবস্থায় তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। এ অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মামলা অথবা উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক। তিনি আরও বলেন, সকলের অংশগ্রহণে ঘুরে দাঁড়াতে অসংখ্য কাল সাপের মাথা কেটে কার্পেটের তলা উল্টিয়ে সমস্ত জঞ্জাল পরিষ্কার করার উদ্যোগ গ্রহণের মধ্যদিয়ে বদলে যাওয়া ঢাকা দেখি। যে বদলে যাওয়ার অসংখ্য উদাহরণ আমাদের রয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর ভীত তৈরি হোক। তবেই আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও সাচ্ছন্দ্যের একটি বাসযোগ্য নগরায়ণ করতে পারবো।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত

আনন্দবাজারের প্রতিবেদন-মালদ্বীপের মতো ভারত-বিরোধী প্রচার বাংলাদেশেও, নেপথ্যে কি অন্য রাষ্ট্রের ইন্ধন, কী ভাবছে নয়াদিল্লি?

মালদ্বীপে যখন ‘ভারতকে তাড়াও’ প্রচার তুঙ্গে, একই সময় বাংলাদেশের একটি অংশও ভারত বিরোধিতায় গলা চড়তে শুরু করেছে। প্রতিবেশী বলয়ে এই ঘটনার অভিঘাতকে কিছুটা আশঙ্কার চোখেই দেখছে বিদেশ মন্ত্রক। আর তাই ঢাকায় ভারত-বিরোধী সুর প্রকট হওয়ার পিছনে যে সব কারণকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে, তাকে প্রশমিত করতে কোমর বেঁধেছে ভোটের মুখে দাঁড়ানো মোদী সরকার। কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, জানুয়ারির নির্বাচনে যারা শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লিগের বিরোধিতা করেছিল, তাদের একটি বড় অংশ ‘ভারত বয়কট’ প্রচারে গলা মিলিয়েছে। নয়াদিল্লি মনে করে এর পিছনে কোনও সংগঠিত শক্তি বা রাষ্ট্রের ইন্ধন রয়েছে।

ভারতের বাজারে পেঁয়াজের জোগানে সঙ্কট এবং তার জেরে দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মোদী সরকার রফতানিতে রাশ টেনেছিল। গত বছর থেকেই দুই বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে পেঁয়াজ পাঠানো বন্ধ করে দেয় ভারত। বিষয়টি নিয়ে বার বার আবেদন জানান হাসিনার মন্ত্রী এবং সরকারি কর্তারা। সম্প্রতি সে দেশে ভারত বিদ্বেষের যে ঢেউ তৈরি হয়েছে, সে কথাও বিদেশ মন্ত্রকের অজানা নয়। তাই রমজান এবং ইদের আগেই ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ ঢাকাকে পাঠিয়েছে দিল্লি।

গত মাসেই ঢাকার পান্থপথ অঞ্চলের কিছু দোকান ভারতীয় পণ্য তুলতে অস্বীকার করে। অথচ সেখানে ভারতীয় পণ্যই বেশি রাখা হয়।

ঢাকা-চট্টগ্রামের অনেক দোকানদার এবং কর্মী বলেছেন, ভারতের তৈরি রান্নার তেল, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্রসাধনের সরঞ্জাম ও জামাকাপড়ের বিক্রি কিছুটা কমেছে। দেশের বাইরে আত্মগোপন করে থাকা জামাতে ইসলামি ও বিএনপি-র কট্টর সমর্থক অনেক বাংলাদেশি ভ্লগার অনলাইনে ভারত-বিরোধী প্রচার তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার এক সপ্তাহ পরেই এই পোস্টগুলি বাড়তে থাকে। সূত্রের খবর, ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাককে সমর্থন করেছিল বিএনপি ও তাদের ১২টি সমমনা দল।

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এর ফলে ভারত থেকে বাংলাদেশের রফতানিতে যে বড় ধাক্কা লেগেছে তা নয়। কিন্তু প্রতিবেশী বাংলাদেশে এমন ভারত-বিরোধী উত্তাপ, নয়াদিল্লির চিন্তা বাড়িয়েছে। এর পিছনে একটি নির্দিষ্ট নকশাও দেখছে নয়াদিল্লি। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থী শক্তি এই প্রচারের পিছনে রয়েছে মনে করছে দিল্লি। বাংলাদেশের মাটিকে কাজে লাগিয়ে অতীতে বিএনপি জমানায় ইসলামাবাদ লাগাতার সন্ত্রাস পাচার করেছে ভারতে। বাংলাদেশের ভূকৌশলগত অবস্থানকে নাশকতার কাজে লাগিয়েছে আইএসআই। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে প্রতিশ্রুতি দেন, বাংলাদেশের মাটিকে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার হতে দেওয়া হবে না। দিল্লি বার বার স্বীকার করেছে, প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন হাসিনা। বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী আবহাওয়া তৈরি করার সুযোগ পেলে আইএসআই ছেড়ে দেবে না বলে মনে করে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে টানা ৪ বার হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে বিএনপির বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়নের মুখ্য শরিক ভারতকে নিশানা করছে বলে ব্যাখ্যা দিচ্ছে বিদেশ মন্ত্রকের সূত্র। বাংলাদেশের সমাজের ঐতিহ্যগত ভাবেই মৌলবাদী অংশ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ়্জ়ুর ‘ভারত তাড়াও’ প্রচার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।

নয়াদিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে বলা হয়েছে, ভারত আচমকা পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় অসুবিধা হয়েছে বটে, তবে কূটনৈতিক স্তরে এমন মেকানিজম তৈরির জন্য সাউথ ব্লকের সঙ্গে আলোচনা এগোচ্ছে, যাতে এই পরিস্থিতি তৈরিই না হয়। এক কর্তার কথায়, “ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ভারতের কাছে অনুরোধ, পেঁয়াজ, চিনি, গমের মতো কিছু পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ যাতে প্রতি মরসুমেই বাংলাদেশে যায় সেই মেকানিজম চূড়ান্ত করা। তা হলে কেউ এ নিয়ে রাজনীতি করতে পারবে না।”

চীন সীমান্তের কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেলা টানেলের উদ্বোধন করলেন মোদি

৯ মার্চ ভারতের অরুণাচল প্রদেশে চীন সীমান্তের কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেলা টানেল প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, সেলা টানেলে যান চলাচল শুরু হলে তা ভারতীয় ফৌজকে কৌশলগত দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে দেবে।  বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (BRO) দ্বারা মোট ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই টানেলটি  অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং থেকে তেজপুরকে সংযোগকারী রাস্তার পশ্চিম কামেং জেলায় ১৩,৭০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত । সেলা হলো দেশের সর্বোচ্চ টানেল যা কৌশলগত তাওয়াং অঞ্চল এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) এর কাছে চীনের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে  সংযোগ প্রদান করে। প্রায় ১২ কিলোমিটার লম্বা সুড়ঙ্গটি মারফত দ্রুত পৌঁছে যাওয়া যাবে চীন  সীমান্ত সংলগ্ন তাওয়াং ও কামেং সেক্টরে। উল্লেখ্য,  বরাবরই অরুণাচলকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে বেইজিং। লাদাখ থেকে শুরু করে অরুণাচল পর্যন্ত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চোখ রাঙাচ্ছে লালফৌজ।  আবারও গালওয়ানের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে দ্রুত এই টানেল দিয়ে পৌঁছে যেতে পারবে জওয়ানরা।  সেলা পাসের কাছে অবস্থিত টানেলটির প্রয়োজন ছিল কারণ বালিপাড়া-চরিদ্বার-তাওয়াং রোডটি তুষারপাত এবং ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিধসের কারণে বছরের দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ থাকে। সুড়ঙ্গটি চীন-ভারত সীমান্ত বরাবর অগ্রসর অঞ্চলে দ্রুত সৈন্য, অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি মোতায়েনের মাধ্যমে এলএসিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াবে।

টানেলটি  নতুন অস্ট্রিয়ান প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এবং এতে  সর্বোচ্চ মানের সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "প্রকল্পটি শুধুমাত্র এই অঞ্চলে একটি দ্রুততর এবং আরও দক্ষ পরিবহন রুট প্রদান করবে না বরং এটি দেশের জন্য কৌশলগত গুরুত্ব বহন করবে।  টানেলটি একটি লাইফলাইন হবে কারণ এটি তাওয়াংকে সর্ব-আবহাওয়ায়  সংযোগ প্রদান করবে।''প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ১৫জানুয়ারী ২০২১ -এ, প্রথম বিস্ফোরণ চালানোর পর, টানেল ওয়ানের খনন কাজ শুরু হয়। অরুণাচল প্রদেশে  যথাযথ  রাস্তা এবং রেল সংযোগের অভাবকে উত্তর-পূর্বে সীমান্ত বরাবর চীনের তুলনায় ভারতের জন্য স্বতন্ত্র অসুবিধা হিসাবে দেখা হয়েছিল। আর তাই সেলা টানেল চীন ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত প্রবেশ পথ সহ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ভারতকে কৌশলগত সুবিধা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ১৯৬২ সালে, চীনা সৈন্যরা এই অঞ্চলে ভারতীয় বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল এবং উল্লেখযোগ্যভাবে, সেই বছরের ২৪ অক্টোবর তাওয়াং শহরটি দখল করা হয়েছিল

দিল্লিতে মুসল্লিদের প্রহার, নিন্দা, পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত-ইন্ডিয়া টুডে/গণশক্তি এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে রাস্তার পাশে জুমার নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ দৃশ্যের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, নামাজরত মুসল্লিদেরকে পুলিশ কর্মকর্তা প্রহার করছেন। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইন্ডিয়া টুডে। তারা বলছে, ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর ইন্দারলোক এলাকায়। রিপোর্টে আরও বলা হয়, শুক্রবার ইন্দারলোক এলাকায় একটি মসজিদে নামাজ আদায় করতে জড়ো হন বিপুল সংখ্যক মুসল্লি। কিন্তু তাদের সংখ্যা এত বেশি হয়ে যায় যে, মসজিদের ভিতরে ও বাইরে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। এতে কিছু মুসল্লি রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে যান নামাজ আদায়ে। অল্প সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা।

তখনও নামাজ শেষ হয়নি। এ অবস্থায় মুসল্লিদের প্রহার করতে থাকেন তারা। এ সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের ঘেরাও করে ফেলে জনতা। তাদের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করতে থাকেন।

ইন্ডিয়া টুডের মতে, তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে। ঘটনাটির ভিডিও শেয়ার করে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের এমপি ইমরান প্রতাপগারহি বলেন, নামাজ আদায়রত মুসলিমকে প্রহার করা দিল্লি পুলিশের এই সদস্য সম্ভবত মানবতার মৌলিক নীতি জানেন না। এই পুলিশ সদস্যের মনে এই ঘৃণা কোথা থেকে এলো? যথাযথ ধারার অধীনে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য দিল্লি পুলিশকে অনুরোধ করি। একই সঙ্গে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানাই। পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) এম.কে মীনা বলেন, এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেয়া হবে।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ