জুন ০৮, ২০১৭ ২১:১৮ Asia/Dhaka

পুনরুত্থান বা পারলৌকিক জীবনের প্রমাণস্বরূপ কয়েকটি আয়াতের ব্যাখ্যা আমরা শুনেছি গত অনুষ্ঠানে। এ প্রসঙ্গে মাতৃগর্ভের শিশুর বিকাশ থেকে শুরু করে জন্মলাভ ও মানুষের জীবন-চক্র এবং বৃষ্টিপাতের পর মৃত জমিনে সবুজ গাছপালার উন্মেশ সম্পর্কে বক্তব্য শুনেছি।

সুরা হজের ২৫ থেকে ৩৭ নম্বর আয়াতে হযরত ইব্রাহিম (আ)’র হাতে পবিত্র কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সুরা হজের এই বাক্যগুলোতে রয়েছে হজব্রত পালন করতে সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান এবং এই সামাজিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক ধর্মীয় কর্তব্য পালনের গুরুত্ব সম্পর্কিত বক্তব্য। হজ পালনের নানা বিধানও তুলে ধরা হয়েছে এইসব বাক্যে। এই সুরার উল্লেখযোগ্য অংশ হজ সম্পর্কিত হওয়াতেই সুরাটির নামকরণ করা হয়েছে হজ।

এই সুরার ২৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: ‘স্মরণ কর যখন আমি ইব্রাহিমকে কাবাঘর বা বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম এবং তাঁকে বলেছিলাম যে,আমার সাথে কাউকে শরিক করো না এবং আমার ঘরকে পবিত্র রাখ তাওয়াফকারী,নামাজি এবং রকু-সিজদাকারীদের জন্যে।’

ইসলামী বর্ণনা থেকে জানা যায়, কাবা-ঘর সর্বপ্রথম নির্মাণ করা হয়েছিল হযরত আদম (আ)’র যুগে। এরপর নুহ (আ)’র যুগে সংঘটিত বন্যা ও তুফানে ধ্বংস হয়ে যায় মানবজাতির সেই প্রথম ইবাদত-ঘর। এমনকি সেই ঘরের কোনো চিহ্নও আর ছিল না। এ অবস্থায় মহান আল্লাহ কাবাঘরের স্থানটি হযরত ইব্রাহিম (আ)-কে দেখিয়ে দেন। তিনি আল্লাহর নির্দেশে পুত্র ইসমাইল (আ)-কে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণ করেন। ইব্রাহিম (আ) মূর্তি-পূজা ও শির্কের সব ধরনের বাহ্যিক, আত্মিক এবং এমনকি প্রতীকি প্রকাশ থেকেও  কাবা ঘর ও তার আশপাশকে মুক্ত করার দায়িত্ব পান। কারণ, এ এমন এক স্থান যেখানে মানুষ কেবলই আল্লাহকে নিয়ে ভাববে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল কাবার চারদিকে ঘোরা বা প্রদক্ষিণ করা এবং নামাজ পড়া। তাই এ স্থানকে হতে হবে পরিপাটি এবং সব ধরণের অপবিত্রতা হতে মুক্ত। এরই আলোকে হযরত ইব্রাহিম (আ) কাবাঘর ও তার আশপাশকে ইবাদতের জন্য প্রস্তুত করেন।  এ অবস্থায় মহান আল্লাহ তাঁকে নির্দেশ দিলেন:  ‘এবং মানুষের মধ্যে হজ্বের জন্যে ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে।’

ইসলামী বর্ণনায় এসেছে হযরত ইব্রাহিম (আ) যখন এই বিশেষ নির্দেশটি পান মহান আল্লাহর কাছ থেকে তখন তিনি বলেন:  হে আমার প্রতিপালক! আমার ডাক কারো কানে পৌঁছুবে না। আল্লাহ বললেন, তুমি ঘোষণা করে দাও; আমিই তাদের কানে তা পৌঁছে দেব।  এ মহান নবী এরপর কাবাঘরের কাছে একটি বিশেষ স্থানে আসেন যাকে বলা হয় মাকামে ইব্রাহিম। তিনি পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন: হে মানুষ! তোমাদের জন্য হজের বিধান দেয়া হল; তোমাদের প্রতিপালকের ডাকে সাড়া দাও। মহান আল্লাহ সবার কানে এই আহ্বান পৌঁছে দেন। এমনকি যারা পিতার ঔরশে ও মায়ের গর্ভে ছিল তাদের কানেও এই আহ্বান পৌঁছে দেন মহান আল্লাহ। ফলে তারা জবাব দেয়: লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার আহ্বানে সাড়া দিচ্ছি।

ইসলামের অন্য সব ইবাদতের মতই হজেরও রয়েছে নানা সুফল ও বরকত। হজ যদি যথাযথভাবে পালন করা যায় তাহলে মুসলিম সমাজে নানা ধরনের উন্নয়ন ঘটবে।  হজের রয়েছে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিকসহ নানা দিক।

মক্কার মুশরিকরা প্রায়ই মুসলমানদেরকে কষ্ট দিত। তারা মারধোরসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হতেন। এ অবস্থায় মুসলমানরা বিশ্বনবী (সা)’র কাছে এ বিষয়ে তাদের ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেন।  তিনি তাদেরকে ধৈর্য ধরতে বলেন এবং জানান যে, ‘আমি এখনও যুদ্ধের নির্দেশ পাইনি’। এরপর মদিনায় হিজরতের নির্দেশ পান বিশ্বনবী (সা)। এ সময় নাজিল হয় সুরা হজের ৩৯ নম্বর আয়াত। এই আয়াতে মুসলমানদেরকে মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হয়।  ফলে অনেক নির্যাতন ও কষ্ট ভোগের পর মুসলমানরা সংঘবদ্ধভাবে আত্মরক্ষার এবং প্রতিরক্ষার সুযোগ পান। ওই আয়াতে বলা হয়েছে: ‘যুদ্ধে অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে যাদের সঙ্গে কাফেররা যুদ্ধ করে;কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম।’

এ আয়াত থেকে বোঝা যায় জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই হল ন্যায্য ও স্বাভাবিক অধিকার। আর প্রত্যেক নির্যাতিত মানুষই জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার অধিকার রাখে।  তাই জুলুম বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত জালিমের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া বৈধ। তাগুতিদের বিরুদ্ধেও লড়াই করা বৈধ। কারণ, তারা মানুষের অন্তর থেকে আল্লাহর নাম ও আল্লাহর ধর্মের নাম-নিশানা মুছে ফেলতে চায় এবং যেসব ইবাদত-কেন্দ্র মানুষের চিন্তাধারাকে জাগিয়ে তোলে সেসবকে ধ্বংস করে মানুষকে নিজেদের দাস করতে চায়। মজলুমরা যদি জেগে ওঠে তাহলে আল্লাহর ব্যাপক-বিস্তৃত সাহায্য তারা পাবেই।

এরপর সুরা হজে অতীতের জাতিগুলোর খোদাদ্রোহিতা ও পাপাচারের পরিণাম সম্পর্কিত কোনো কোনো শিক্ষণীয় ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

সুরা হজের ৭৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষের হাতে বানানো কাঠ ও পাথরের খোদাসহ কল্পিত নানা খোদার অক্ষমতার কথা তুলে ধরেছেন খুব সুন্দর উপমা দিয়ে। একমাত্র আল্লাহই হচ্ছেন সব ক্ষমতার অধিকারী। মহান আল্লাহ বলছেন: ‘হে লোকেরা! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো,তাই তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর বদলে যাদের পূজা কর,তারা কখনও একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না,যদিও তারা সবাই একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়,তবে তারা ওই মাছির কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না, প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়,উভয়েই শক্তিহীন।’#

পার্সটুডে/মো: আবু সাঈদ/৮