মার্চ ০৪, ২০১৮ ১৮:৪৬ Asia/Dhaka

বন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। ইরানের হাটবাজারে বিদ্যমান বিচিত্র পণ্য সামগ্রীর সঙ্গে পরিচিতিমূলক নতুন ধারাবাহিক "ইরানের পণ্য সামগ্রী" শীর্ষক আসরের আজকের পর্বে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি।

গত আসরে আমরা ইরানের বিখ্যাত পণ্য কালোমুক্তা মানে ক্যাভিয়ার নিয়ে কথা বলেছি। দেখতে লম্বা,প্রায় ১ থেকে ২ মিটারের মতো। মাথার দিক থেকে লেজের দিকে ক্রমশ চিকন। তুলনামূলকভাবে জলের বেশ গভীরে বাস করে এই মাছ। এক হাজার কেজি পর্যন্ত ওজন হয় কোনো কোনো ক্যাভিয়ারের। পৃথিবীর সমুদ্র তলদেশের বিস্ময় এই ক্যাভিয়ার মাছ বিশেষ করে যে পাঁচটি বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির কথা বললাম, বিভিন্ন রঙের হয়। সাদা, কালো, ধূসর এবং হলুদ ক্যাভিয়ারও রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান এই পণ্যটি নিয়ে আমরা আজকের আসরেও কথা বলার চেষ্টা করবো।

ইরানের ব্ল্যাক পার্ল বা কালোমুক্তা 

 

ক্যাভিয়ার মাছ এবং এই মাছের ডিম দুটোই সারাবিশ্বে বেশ দামি খাদ্যপণ্য। সুতরাং ক্যাভিয়ার চাষ ও রক্ষণাবেক্ষণের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক সাফল্য আসতে পারে। কাস্পিয়ান সাগরের সবচেয়ে বড় প্রজাতির ক্যাভিয়ার হলো গ্রেট হোয়াইল স্টার্জেন। ফার্সি ভাষায় বলা হয় ফিলে মহি। দু:খজনকভাবে এই গ্রেট হোয়াইল স্টার্জেন প্রজাতির ক্যাভিয়ারের সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে। এই প্রজাতির মাছটি বুলুগা নামেও পরিচিত এবং মিষ্টি পানির সবচেয়ে বড় মাছ হিসেবেও বিশ্বব্যাপী খ্যাতি রয়েছে এর। ক্যাভিয়ারের গুণগত মানের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো এবং প্রথম শ্রেণীর বলে ধরা হয় গ্রেট হোয়াইল স্টার্জেনকে।

ইরানের ব্ল্যাক পার্ল বা কালোমুক্তা 

ইরানের কাস্পিয়ান থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় এবং ওজন সম্পন্ন বুলুগা শ্রেণীর ক্যাভিয়ার মাছের যে ডিম পাওয়া গেছে তার ওজন ছিল এক শ কেজির বেশি। আর মাছটির ওজন ছিল এক হাজার চার শ কিলোগ্রামের মতো। মাছ শিকারীরা বলেছেন ওই ক্যাভিয়ারটির বয়স ছিল এক শ বছরের বেশি। ইরানি মাছ বা পার্সিয়ান স্টার্জেন আরেক প্রকারের ক্যাভিয়ার। কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণ অংশে অর্থাৎ ইরানি উপকূলের দিকে এই মাছটি পাওয়া যায়। অনেকে এই ক্যাভিয়ারকে রাশিয়ান প্রজাতির বলে মনে করতো। কিন্তু দেখা গেছে ইরানে যে ক্যাভিয়ার পাওয়া যায় সেগুলো গুণগত মান এবং আকারের দিক থেকে রুশ প্রজাতির সঙ্গে পার্থক্য রয়েছে। ইরানি ক্যাভিয়ার স্বাদে উন্নততর এবং সাইজেও বড়।

ইরানের ব্ল্যাক পার্ল বা কালোমুক্তা 

 

পার্সিয়ান স্টার্জেনের কথা বলছিলাম। খাদ্যমূল্যের দিক থেকে এই ক্যাভিয়ারের অবস্থান দ্বিতীয় পর্যায়ে। ইরানি মাছের মধ্যে এই ক্যাভিয়ারের রঙ-বৈচিত্র্য রয়েছে। গাঢ় ধূসর রঙ, ফর্সা এবং কখনো কখনো সোনালি রঙের পার্সিয়ান স্টার্জেনের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। পার্সিয়ান স্টার্জেনের বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। কাস্পিয়ান হ্রদে আরও যেসব প্রজাতির ক্যাভিয়ার পাওয়া যায় তাদের মধ্যে পরবর্তী পর্যায়ে রয়েছে রাশিয়ান স্টার্জেন। এই শ্রেণীর ক্যাভিয়ার কাস্পিয়ান সাগরের উত্তর অংশে বেশি পাওয়া যায়। তবে দক্ষিণ অংশ মানে ইরানি উপকূলীয় অংশেও এদের আনাগোণা এবং বসবাস রয়েছে। ডিম পাড়ার সময় হলে এরা পার্সিয়ান স্টার্জনের সঙ্গে ইরানের উত্তর-পূর্ব ও উত্তরে অবস্থিত গোরগান এবং সেফিদরুদ নদীর দিকে চলে যায়।

 

শিপ স্টার্জন কাস্পিয়ান সাগরের সবচেয়ে বিরল এবং দুর্লভ ক্যাভিয়ার মাছ। কাস্পিয়ানের দক্ষিণ অংশে খুবই স্বল্প পরিমাণে লক্ষ্য করা যায় এই প্রজাতির ক্যাভিয়ার। বিগত ক'বছর আগেও কৃষ্ণ সাগর এবং উরাল হ্রদেও এই শ্রেণীর শিপ স্টার্জন পাওয়া যেত। কিন্তু নির্বিচার শিকারের ফলে এবং আরও বেশ কিছু কারণে এই প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। কেবল কাস্পিয়ানেই নয় রাশিয়া, আজারবাইজান এবং তুর্কমেনিস্তানেও এই শ্রেণীর ক্যাভিয়ার এখন দুর্লভ হয়ে গেছে। এসব কারণে শিপ স্টার্জন শিকার করার ওপর এবং বাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

শিপ স্টার্জন প্রজাতির ক্যাভিয়ার নিয়ে কথা হচ্ছিল। এই প্রজাতির মাছ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থার পক্ষ থেকেও এই মাছ শিকারকে রেড-লিস্টের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কাস্পিয়ানেও এই প্রজাতির ক্যাভিয়ার সংরক্ষণে ব্যাপক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেমন কৃত্রিম উপায়ে এই মাছের কোটি কোটি পোনা সাগরে ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যাতে তাদের বংশ হারিয়ে না যায়।

 

সবশেষে আমরা ক্যাভিয়ার প্রজাতির মাছের মধ্যে সবচেয়ে ছোট যে মাছটি কাস্পিয়ানে পাওয়া যায় তার দিকে নজর দেই। এই ক্যাভিয়ারের ফার্সি নাম ওজোন বরুন। ইংরেজিতে বলে সাউথ কাস্পিয়ান স্টেলিউট স্টার্জেন। ছোট্ট এবং স্বাদের বিবেচনায় এই শ্রেণীর ক্যাভিয়ার সবচেয়ে কমদামী। তবে পুষ্টিমানের দিক থেকে এই অন্যান্য ক্যাভিয়ারের সাথে কোনো পার্থক্য নেই।

যাই হোক বন্ধুরা!হাতে আজ আর সেময় নেই। তাই আজকের আসর এখানেই গুটিয়ে নিতে হচ্ছে। পরবর্তী আসরে আমরা এই ক্যাভিয়ারের উন্নত পুষ্টিগুণ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো। তখনও আপনাদের সঙ্গ পাবো-এই প্রত্যাশা রইলো।

  • যারা সঙ্গ দিলেন সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।# 

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/৪

ট্যাগ