সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৮ ১৭:৪৭ Asia/Dhaka
  • দেখব ঘুরে ইরান এবার: কেশম দ্বীপের প্রকৃতিরাজ্যে

নামাকদন পর্বত অথবা নামাকি গম্বুজ কেশম দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিম অংশে অবস্থিত চমৎকার দুটি দর্শনীয় স্থাপনা। এই দ্বীপের পর্যটক আকর্ষণীয় যে কয়টি দেখার মতো স্থান বা নিদর্শন আছে সেগুলোর মাঝে নামাকি গম্বুজ অন্যতম।

মজার ব্যাপার হলো, এই নিদর্শনটি কিন্তু মানুষের তৈরি নয় বরং প্রকৃতির একান্ত সৃষ্টি।  গম্বুজ সাধারণত মানুষই তৈরি করে। কিন্তু এই গম্বুজ ব্যতিক্রমধর্মী। বলাবাহুল্য এটি পর্বতেরই অংশবিশেষ। পর্বতটির গঠন অনেকটা কৌণিক আকৃতির। উচ্চতা হলো ৩৯৭ মিটার। নামাকদন পর্বতটি দেখতে ডিমের মতো। পর্বতের চূড়াটি টোপোগ্রাফির দৃষ্টিকোণ থেকে সুশৃঙ্খল নয় এবং এর দেয়াল সাংঘাতিক ঢালু।  

নামাক গম্বুজ স্থাপনাটি এখানকার লবণাক্ত পাণির ধারা এবং লবণ খনির পাশাপাশি প্রাকৃতিক এবং ঐতিহাসিক একটি নিদর্শন। দেখার মতো সুন্দর এই নিদর্শনটি কেশম দ্বীপে অবকাশ যাপন বা বিনোদনের উত্তম একটি স্থানে পরিণত হয়েছে। নামাকি গম্বুজ পাহাড়ের দক্ষিণ অংশে সল্ট কেইভ্‌স বা লবণ গুহার অস্তিত্ব এখানকার পরিবেশকে করে তুলেছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। বেশ কটি গুহা রয়েছে এখানে। তবে একটি গুহা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গুহাটির মুখ দক্ষিণমুখি ক্রমশ উপরের দিকে। এর উচ্চতা তিন থেকে দশ মিটারের মতো আর গভীরতা এক শ মিটারের কাছাকাছি। অদ্ভুত সুন্দর এই গুহাটি দেখার জন্যে বহু মানুষ এই দ্বীপে এসে ভিড় করে। এই গুহাটির আয়তন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের হয়। 

এর কারণটা হলো বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং পানিতে লবণের ডুবে যাওয়ার পরিমাণ। পানির উচ্চতা যত বাড়বে আয়তন তত সংকুচিত হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানীরা এখানে সর্বশেষ যে সমীক্ষা চালিয়েছে সেই সমীক্ষায় বলা হয়েছে কেশ্‌ম লবণ গুহার দৈর্ঘ্য হলো ৬ হাজার ৪০০ মিটারের মতো। তার মানে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা লবণ গুহা হলো কেশ্‌ম দ্বীপের লবণ গুহা। গুহার ভেতরের আকৃতিটা ধনুকের মতো বাঁকা। গুহায় ঢোকার পর আনুমানিক ৩০ মিটারের মতো ভেতরের দিকে গেলে একটা মোড়ের মুখোমুখি পড়তে হয়। গুহার প্রবেশদ্বারের দেয়ালে লবণ এবং লোহার বিচিত্র রঙের স্তর লক্ষ্য করা যাবে। আর গুহার ভেতরে দেখতে পাওয়া যাবে একটা পুকুর বা জলাধার। এর আয়তন বিশ মিটারের মতো। 

নামাকদন পাহাড়ের বুক চিরে যে গুহাটির অবস্থান তার ভেতর থেকে পানির একটি ফোয়ারা ঝর্নাপ্রবাহের সৃষ্টি করেছে। এই ঝর্নাটি বেরিয়ে গেছে গুহার বাইরে। তবে এই ঝর্ণাধারার পানি বেশ লবণাক্ত। সেই পানি তার বয়ে চলার পথে লবণ গলিয়ে গলিয়ে গেছে। লবণ গলা পানি থেকে যে ঝর্না তৈরি হয়েছে পার্বত্য উপকূলকে চমৎকার একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য উপহার দিয়ে নীচে গিয়ে তৈরি করেছে ছোটো একটি হাউজ বা জলাধার। দূর থেকে তা দেখা যায় ফর্সা এবং সাদা। এছাড়াও বরফে ঢাকা একটি অংশ এই পাহাড়কে দিয়েছে বাড়তি সৌন্দর্য, দূর থেকেও সেই সৌন্দর্য দর্শকদের আকৃষ্ট করে।

মজার ব্যাপার হলো বছরের সব ঋতুতেই এই ঝর্ণাধারাটি প্রবহমান থাকে। প্রকৃতপক্ষে এই ঝর্নাপ্রবাহটি লবণ গম্বুজের ভেতরে সঞ্চিত পানি থেকেই সৃষ্ট। আর এই পানি জমা গম্বুজের নালাগুলোতে জমা হয় বৃষ্টিপাত থেকে। বৃষ্টিপাত যত বেশি হবে পানিস্তর তত উপরে থাকবে এবং ঝর্নার প্রবাহ তত বেশি হবে। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করার মতো সেটা হলো নামাকদন পার্বত্য গুহায় যে লবণের মজুদ রয়েছে সেই লবণ ব্যবহার করার জন্যে সবচেয়ে ভালো বলে মনে করা হয়। এখানকার লবণে ম্যাগনেসিয়ামও রয়েছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

এ কারণে যারা শরীর চর্চা করে তাদের জন্যে ওষধি লবণ হিসেবে এই লবণের ক্যাপসুল বানিয়ে খাওয়ানো হয়। নামাকদন লবণ গুহার ভেতরে সর্বশেষ যে গবেষণাটি হয়েছে তাতে দেখা গেছে, এই গুহাটির আরোগ্য বা প্রতিকার গুণও রয়েছে। বিচিত্র দূষণের প্রতিকার রয়েছে এখানে বিশেষ করে যেসব রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্যে খুবই উপকারী এই গুহার ভেতরের পরিবেশ।

কেশম দ্বীপের আরেকটি প্রাকৃতিক আকর্ষণীয় এলাকা হলো ‘কসেয়ে সালাখ্’। দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলে পড়েছে এই প্রাকৃতিক নিদর্শনমূলক অঞ্চলটি। এলাকাটি মরু আঞ্চলিক, তাই শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে এখানে। লম্বায় এর আয়তন ৭ কিলোমিটার আর প্রস্থে পাঁচ কিলোমিটারের মতো। মজার ব্যাপার হলো এ এলাকায় কোনোরকম উদ্ভিদের অস্তিত্ব নেই। এখানে রয়েছে বহু টিলা। টিলাগুলোর আকার আকৃতি বহু রকমের। মরুভূমির গভীরে অনুসন্ধান চালিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন সেখানে রয়েছে একটি ফোয়ারা। ওই ফোয়ারা থেকে গন্ধকযুক্ত পানির উদগীরণ ঘটে। তপ্ত গরম পানি যেরকম ফুটন্তরূপ ধারণ করে এই ফোয়ারার পানি দেখতে সেরকম ফুটন্ত মনে হয়। 

যেসব বিশেষজ্ঞ এই এলাকা পরিদর্শন করেছেন তাঁদের বক্তব্য এবং অনুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সালাখ্‌ এলাকার মাটির নীচের বিভিন্ন স্তরে রয়েছে তেল এবং গ্যাসের বিশাল খনি। এই এলাকার আকর্ষণীয় সৌন্দর্য, সুনসান নিরবচ্ছিন্নতা, অন্যরকম এক প্রশান্তিময় অনুভূতি সবমিলিয়ে কেশম দ্বীপের মধ্যে সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্যময়। ভাবুক শ্রেণীর দর্শকদের জন্যে এ এলাকাটি খুবই উপযোগী। প্রকৃতি প্রেমিক যারা কিংবা যারা লেখালেখি করেন তাঁরা এই এলাকায় গেলে চিন্তার বহু খোরাক খুঁজে পাবেন। 

কেশম দ্বীপে আরো বেশকিছু নিদর্শন রয়েছে। এসব নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে ‘বেরকেয়ে খালাফ’ গ্রামে অবস্থিত একটি উপত্যকা। কেশম দ্বীপের দক্ষিণে আনুমানিক ৫ কিলোমিটার দূরে এই অপূর্ব নিদর্শনটি অবস্থিত। বিশেষজ্ঞরা ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানের এক বিরল নিদর্শন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এলাকার লোকজন অবশ্য ব্যতিক্রমধর্মী এই নিদর্শনটিকে ‘নক্ষত্রপুঞ্জ উপত্যকা’ বলে অভিহিত করে।‘নক্ষত্রপুঞ্জ উপত্যকা’ ছাড়াও এখানে রয়েছে কয়েকটি প্রণালী। এগুলোর নাম ‘তাঙ্গে চহকূহ এবং ‘তাঙ্গে আলি মুহাম্মদ’।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ৩

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন

ট্যাগ