সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৮ ২০:২৮ Asia/Dhaka
  • দেখব ঘুরে ইরান এবার: ‘গেনো’ ইকোলজিক্যাল অঞ্চল

বন্দর আব্বাস শহরের উত্তর পশ্চিম দিকে পড়েছে এ এলাকাটি। ‘গেনু’ সংরক্ষিত এলাকাটি গেনু নামের একটি পর্বতমালার সমন্বয়েই গঠিত। গেনু পর্বতমালার আশপাশে বিশেষ করে দক্ষিণ এবং পূর্বদিকের ভূমি তুলনামূলকভাবে কম ঢালু এবং মরুময় অনেকটা। আবার উত্তর এবং পশ্চিম অংশে রয়েছে প্রচুর টিলা।

টিলাগুলোর উচ্চতা অবশ্য খুব বেশি নয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গেনু পর্বতের উচ্চতা ২ হাজার ৩ শ ৪৭ মিটার। গেনু পার্বত্য অঞ্চলের আয়তন ৩ শ ৫০ বর্গকিলোমিটারের মতো। এই পর্বতের বেশিরভাগ অংশকেই সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই পর্বতগুলোর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০শ মিটার উপর থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। পার্বত্য এলাকা যেমন হয়, উঁচু নিচু এবং ঢালুময় গভীর উপত্যকা বিশিষ্ট তবে বেশ সবুজ শ্যামল। প্রচুর গাছ গাছালি আর বিচিত্র উদ্ভিদের সমাহার লক্ষ করা যাবে এখানে।

ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় যাগরোস পর্বতমালার একটি সুন্দর অংশ হলো এই গেনু পার্বত্য অঞ্চল। এই পার্বত্য এলাকাটি যাগরোস পর্বতমালার দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত। এ এলাকার আবহাওয়াগত ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলে যাগরোস পর্বতমালা। ইকোলজিক্যাল দিক থেকেও এই পর্বতমালার মূল্য অপরিসীম। কেশমের পার্বত্য অঞ্চল এবং মরু অঞ্চলের ইকো মিস্টেমের ক্ষেত্রেও যাগরোস পর্বতমালার গুরুত্ব নজিরবিহীন। মরু এলাকায় যখন ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা বিরাজ করে সে সময় গেনুর ২ হাজার ৩০০ মিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা থাকে ২৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। আবহাওয়াগত এই যে তারতম্য সেটা কেবল ইকোসিস্টেমের বৈচিত্র্যের দিক থেকেই নয় বরং চিত্তবিনোদনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এ কারণে যাগরোস পর্বতমালার ফলে কেশম অঞ্চলে একটা ব্যতিক্রমধর্মী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

গেনু সংরক্ষিত এলাকায় পানির কোনোরকম স্বল্পতা নেই। কেননা এখানে রয়েছে অন্তত ৪০ টি ঝরনা। এগুলো থেকে উৎসারিত পানি সারা বছর ধরেই এলাকা এবং এলাকার প্রাণীকুলের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।কোনো কোনো ঝরনা অবশ্য পানির পরিমাণের দিক থেকে এতোই সমৃদ্ধ যে এলাকার সকল গ্রামের পানির চাহিদা নিশ্চিত করতে সমস্যা হয় না। এ কারণেই এখানকার কৃষিজীবিরা তাদের বাগ বাগিচা আর কৃষিক্ষেত্রের জন্যে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকে। কখনোই তাদেরকে পানির সমস্যায় পড়তে হয় না।

তবে গেনু’র গরম পানির ফোয়ারা বা ঝর্নাগুলো এ অঞ্চলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পানির উৎস। এই ঝর্নার পানির আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য আছে। বৈশিষ্ট্যটা হলো গরম পানির ওষুধি গুণ। বিশেষজ্ঞরা গবেষণা চালিয়ে দেখতে পেয়েছেন এই ঝর্নার পানি চর্মরোগসহ আরো বহু রোগের জন্যে উপকারী বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। কেশম দ্বীপের স্থানীয় অধিবাসী তো বটেই, এর বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সারা বছর জুড়েই বহু পর্যটক এই কেশম দ্বীপকে তাদের পদচারণায় মুখরিত করে রাখে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি গরম পানির ঝরনার ওষুধি গুণের বৈশিষ্ট্য থেকে উপকৃত হবার জন্যেও তারা আসেন। আপনারাও সময় সুযোগ পেলে বেড়াতে যেতে ভুলবেন না।

গেনুর গরম পানির ঝরনার কথা বলছিলাম আমরা। এই ঝর্নার পানিতে আছে প্রচুর ক্লোরিক অ্যাসিড এবং সোডিয়াম। এই রাসায়নিক উপাদান দুটো থাকার কারণে গরম পানি পেটে অ্যাসিড এবং লালা চুঁইয়ে পড়ার পরিমাণ বৃদ্ধিসহ পেটে স্পন্দন বেড়ে যায় যার ফলে নরম হয়ে যায় পেটের ভেতরকার খাদ্যবস্তুগুলো। এখানকার পুকুরে গোসল করার ফলে চর্মরোগের পাশাপাশি মানুষের শ্বাসকষ্টের সমস্যা কেটে যায়, ভালো হয়ে যায় রিওম্যাটিক ফিভার বা বাতজ্বরের মতো শারীরিক সমস্যাগুলোও। মূলত যেসব এলাকাজুড়ে গেনুর গরম পানির ফোয়ারা বিস্তৃত সেসব এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার মতো। একদিকে যেমন সবুজ পরিবেশ বিরাজ করে অপরদিকে খেজুর বৃক্ষের প্রাচুর্য আলাদা একটা প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্ম দিয়েছে। সেইসাথে রয়েছে টিলার পর টিলা। সব মিলিয়ে প্রকৃতিপ্রেমী বিশ্বভ্রমণকারীদের জন্যে সৃষ্টি করেছে চমৎকার একটি আকর্ষণ।

গেনু’র প্রকৃতিরাজ্যে উদ্ভিদের বৈচিত্র্যও আবহাওয়াগত তারতম্যের কারণে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এই বৈচিত্র্য গেনুকে এনে দিয়েছে সমগ্র ইরানের মধ্যে অনন্য সাধারণ গুরুত্ব ও স্বাতন্ত্র্য। গেনু পাহাড়ে উচ্চতার তারতম্যের কারণে অর্থাৎ অসমতল উচ্চতার জন্যে একেক উচ্চতায় একেক ধরনের বৃক্ষ আর উদ্ভিদ বিরাজ করে। এসবের মাঝে বহু ফল পাকড়ার গাছও রয়েছে। সবচেয়ে উঁচু এলাকায় রয়েছে বাদাম গাছসহ ছোটো বড়ো আরো অনেক ধরনের গাছ গাছালি। এমিগদালুস ওয়েদেলবই নামের একটা বিশেষ শ্রেণীর গাছ আছে এখানে। এটা একটা বাদাম গাছ। এই বাদাম খুবই সুস্বাদু।

ইরানের দক্ষিণ উপকণ্ঠ বিশেষ জাতের এই বাদামের জন্যে বিখ্যাত। এই বাদাম গাছগুলো ইরানের মধ্যে একেবারেই স্বতন্ত্র অর্থাৎ ইরানের আর কোনো এলাকায় এই বাদাম গাছের অস্তিত্ব মেলে না। তাও আবার সারা বছর ধরে পাওয়া যায় না এই বাদামগুলো। বসন্তের শুরুতে গোলাপি কিংবা লাল রঙের বাদামগুলোর রঙ গেনু পর্বতের সেই উচ্চতায় অবিশ্বাস্য সুন্দর এক প্রাকৃতিক শোভা তৈরি করে। এলাকার স্থানীয় লোকজন বা গ্রামবাসীরা গেনু পাহাড়ের কোনো কোনো উদ্ভিদ ওষুধ কিংবা সুগন্ধি হিসেবেও ব্যবহার করে। 

এই তো গেল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা। এখানকার স্থল এবং জলে বসবাসকারী বিচিত্র প্রাণীর কথা না বললেই নয়। স্থলে বাসকারী শেয়াল, নেকড়ে, মেষ এবং বুনো ছাগলসহ আরো বহু ধরনের জন্তু জানোয়ার গেনু পাহাড়ের নিয়মিত বাসিন্দা। অপরদিকে গাছের ডালে বাসা বেঁধে আকাশে উড়ে বেড়ায় যেসব পাখপাখালি, তাদের সংখ্যাও এখানে উল্লেখযোগ্য। এতো বিচিত্র পাখির বাস এখানে যে নাম বলতে গেলে বেশ সময়ের প্রয়োজন।  তারচেয়ে বরং স্বতন্ত্র এক জাতের মাছের কথা জানিয়ে বিদায় নেবো আজকের মতো। এই সামুদ্রিক মাছটির নাম হলো আফানিউস কুইনয়েস। গেনুর গরম পানিতেই এই অনন্য মাছটি পাওয়া যায়। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর আর কোথাও এই মাছটির অস্তিত্ব লক্ষ করা যায় নি। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/৫

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন

ট্যাগ