জানুয়ারি ২২, ২০১৯ ২০:১৪ Asia/Dhaka

আপনারা জানেন যে, ইরানের জলে-স্থলে, ক্ষেত-খামারে, বাগ-বাগিচায়, কল-কারখানায় উৎপাদিত হয় বিচিত্র সামগ্রী। এর পাশাপাশি খনি থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন সামগ্রী এবং ইরানি নরনারীদের মেধা ও মনন খাটিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন শিল্পপণ্য। গত আসরে আমরা জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতিতে ইরানের তৎপরতা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি।

বিশ্বব্যাপী 'জ্ঞান ভিত্তিক কোম্পানি' এখন অগণিত। ইরানেও গড়ে তোলা হয়েছে 'সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি টাউন' বা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপশহর। ইস্ফাহান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির তত্ত্বাবধানে 'জুব অহান' কোম্পানির মাধ্যমে ১৯৯২ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়। ইরানের জ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন কেন্দ্র এখন প্রচুর। সেইসঙ্গে জ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন পার্কও গড়ে উঠেছে অনেক। শূন্য ও মহাকাশ, তথ্য ও যোগাযোগ, ইলেক্ট্রনিক, মেডিক্যাল ও মেডিসিন,তেল-গ্যাস ও জ্বালানি, মূলকোষ, প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এইসব কোম্পানি তৎপরতা চালাচ্ছে। নতুন নতুন অনেক আইডিয়া ও উদ্ভাবনির উন্নয়ন ঘটিয়েছে এবং বাণিজ্যিক পর্যায়ে উন্নয়ন ঘটিয়ে সেসব পণ্য নিজস্ব বাজারের পাশাপাশি বিশ্ববাজারেও পাঠিয়েছে।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কোঅপারেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট বা অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার ভাষ্য অনুযায়ী জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি এমন এক অর্থনীতি যা গড়ে উঠেছে তথ্য ও জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে। এই অর্থনীতির সবচেয়ে বড় পুঁজি হলো নতুন নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনী। সুতরাং জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিকে বলা যেতে পারে সৃজনশীলতা, নতুন উদ্ভাবনী, বিনিয়োগ, যোগাযোগের ভিত্তি রচনা করা, কারিগরি ও প্রযুক্তি পার্ক গড়ে তোলা, বাণিজ্যিকিকরণ এবং আইডিয়াকে পণ্যে রূপান্তর করার ভিত্তিমূলে সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য দক্ষ ও সুনিপুণ কর্মীবাহিনী যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন প্রণোদনা প্রক্রিয়া, গবেষণার জন্য বিশেষ বাজেট, যোগাযোগ ও প্রযুক্তির সুব্যবস্থা। এইসব উপায়-উপকরণ যদি যথাযথভাবে থাকে তাহলে আশা করা যায় জ্ঞানকে সম্পদে রূপান্তর করা যাবে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান বিগত বছরগুলোতে এ ধরনের অর্থনীতি অর্জনের সুমহান লক্ষ্যে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে।

ইরানের জ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক কোম্পানিগুলো সামুদ্রিক শিল্প এবং কারিগরি শিল্প উন্নয়নেও কাজ করে যাচ্ছে। যেমনটি আপনারা জানেন যে ভৌগোলিক দিক থেকে ইরান এমন এক কৌশলগত অবস্থানে আছে যার দক্ষিণ এবং উত্তরে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার ইরানের পানিসীমা রয়েছে। এ কারণেই সমুদ্র শিল্প ইরানের জন্য একটা কৌশলগত বা স্ট্র্যাটেজিক শিল্প। বিগত কয়েক বছরে ইরান নিজেদের প্রতিরক্ষা শিল্পে পানিসীমায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। মধ্যম পাল্লার ডুবোজাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে ইরান এখন হাতে গোণা কয়েকটি উন্নত দেশের অন্তর্ভুক্ত। রণতরী নির্মাণ এবং ক্ষেপণাস্ত্রবাহী দ্রুতগামী বোট  নির্মাণ, রকেটবাহী নৌযান নির্মাণসহ আরও নতুন নতুন যুদ্ধযান নির্মাণ শিল্পে ইরান ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।

ইরান যেহেতু একটি তেলসমৃদ্ধ দেশ এবং পানিসীমায় তেল ও তেল-সংশ্লিষ্ট আরও বিচিত্র সম্পদের অধিকারী সেহেতু তেলশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সব রকমের উপকূলীয় প্ল্যাটফর্ম নির্মাণে ইরান স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এমনকি সমুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে বলতে গেলে ইরান ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। ছোট বড় জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে ইরানের অভিজ্ঞতা এখন চোখে পড়ার মতো। ফুজি সামুদ্রিক পিস্টন উৎপাদন, নৌযান ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, হুভারক্র্যাফট নির্মাণ, থ্রি পার্সন্স জেট-স্কি মানে তিনজন যাত্রী বহনে সক্ষম জেট-স্কি নির্মাণসহ আরও বহু নতুন নতুন প্রযুক্তি ও শিল্প নির্মাণে ইরানের সামুদ্রিক জ্ঞান ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর পরিকল্পনা রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে চলমান গবেষণা ও তৎপরতা বেশ অগ্রসর ও আশাব্যঞ্জক।

কারিগরি ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এখন ন্যানো-টেকনোলজি একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রায় সকল বিভাগেই এই ন্যানো টেকনোলজি এখন গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে এবং এই ন্যানো প্রযুক্তি খুব দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে। মেডিসিন, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যালস, পশু চিকিৎসা, পরিবেশ বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, মলিকিউল এমনকি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও এই প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয়। ২০১৬ সালে ন্যানো টেকনোলজিক্যাল পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান বিশ্বে ষষ্ঠ স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এটাই প্রমাণ করে ইরানে ন্যানো টেকনোলজি নিয়ে কী পরিমাণ গবেষণা ও তৎপরতা চলছে।

ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইরানে এখন অন্তত ৩০০ টি পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। এসব পণ্য ইরানের বাইরে ১৭টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। গবেষণাগারের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, শিল্প সরঞ্জাম, টেক্সটাইল সরঞ্জাম, লন্ড্রি বা ডিজারজেন্ট পণ্য সামগ্রী, কৃষি ও ভবন নির্মাণ সরঞ্জাম ইত্যাদি ন্যানো প্রযুক্তি জাত পণ্যের অন্তর্ভুক্ত। টেক্সটাইল শিল্প পণ্যের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ব্যবহৃত বেডশিটের কথা বলা যেতে পারে। ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার করে নির্মিত এইসব বেডশিট অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল মানে কোনোরকম ব্যাকটেরিয়া এসব চাদরে আক্রমণ করতে পারবে না। শিশুদের জামা কাপড়ও এই ন্যানো প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়। স্যাটেলাইট-রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ রশ্মি প্রতিরোধক কাপড়ও ন্যানো প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়। বায়ুমণ্ডলীয় ঠাণ্ডা প্লাজমা শিল্প মেশিনের কথা না বললেই নয়। এই শিল্পে এখন তাঁত শিল্পসহ খাবার, চিকিৎসা, প্যাকেজিং এবং স্ট্রেরিলাইজেশনিং করা হয়। এমনকি পরিবেশ বিজ্ঞানেও এই প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে।

বন্ধুর! ন্যানো টেকনোলজিতে ইরানের অগ্রসরতার কথা আমরা যেটুকু বলেছি প্রকৃত অবস্থা তার চেয়েও অনেক বেশি। আমরা পরবর্তী আসরেও এ নিয়ে আরও কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো। আজ আর আমাদের হাতে একেবারেই সময় নেই। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/   ২২

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন

ট্যাগ