এপ্রিল ২৮, ২০১৯ ১৭:৫৭ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা শরীরচর্চার ইতিবাচকতা নিয়ে কথা বলেছিলাম। ব্যায়াম বা শারীরিক অনুশীলন যে কেবল মানুষের মনোদৈহিক সুস্থতার ক্ষত্রেই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে তা নয় বরং রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে এমনকি বহু রকমের রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

হালকা ব্যায়ামের সুফল নিয়ে বিশ্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে ব্যায়াম কেবলমাত্র সব ধরনের স্থায়ী এবং অস্থায়ী কার্ডিয়াক আর্থ্রাইটিসকেই হ্রাস করে না এবং এটি হৃৎপিণ্ডের ধমনীর জমাট রক্তকে দ্রবীভূত করার মাধ্যমে স্ট্রোক প্রতিরোধ করতেও সহায়তা করে। ব্যায়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পরিবারের জন্য সর্বোত্তম ব্যায়াম হাঁটার বিষয়ে কথা বলেছি আমরা। আজকের আসরে একটি পরিবারে পিতার স্থান নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো।

একটি পরিবারে বাবা-মায়ের সবারই বিশেষ স্থান রয়েছে। একটি পরিবারের স্নেহ, মায়া-মমতা, আবেগ-অনুভূতি তথা মানসিক বিষয়গুলো সাধারণত মায়ের ওপরই বর্তায়। আর বাবার ওপর বর্তায় পরিবারের নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব। পরিবারের সন্তান সন্ততিরা সবসময় বাবাকে মর্যাদার প্রতীক হিসেবে ভাবে এবং যে-কোনো ব্যাপারে বাবার ওপরই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা  নির্ভর করে। সমাজে বাবার সক্রিয় ভূমিকা থাকার কারণে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান রাখেন এবং সচেতন। তাঁর ওই সচেতনতার ফলে পরিবারে তিনি সঠিকভাবেই যে-কোনো পদক্ষেপ রাখতে পারেন। বিশেষ করে সন্তানেরা কী করে নিজেদের জ্ঞান ও তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধতরো করতে পারে, কী করে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের স্কিল ডেভেলপ করতে পারে ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাবাই সহযোগিতা করতে পারেন বেশি।

বাবাদের দায়িত্ব সচেতনতার ব্যাপারে রাসূলে খোদা (সা) বলেছেন:  "একটি পরিবারের অভ্যন্তরে বিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টি করার দায়িত্ব বাবার। সন্তানদের ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন থাকা এবং স্বাধীনতা ও মুক্তির ক্ষেত্র তৈরি করার দায়িত্বও বাবার। সেইসঙ্গে সন্তানদেরকে সকল প্রকার ঝুঁকিমুক্ত রাখার দায়িত্বও বাবার"। সাধারণত প্রায় সকল সমাজে বাবাই পরিবারের আর্থিক চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সুতরাং আয়-রোজগারের দায়িত্ব তথা শ্রম-পরিশ্রমের গুরুভার বাবার ওপরই বর্তায়। ইসলামের দৃষ্টিতেও যখন একটি পরিবারে কাজ ভাগ হয় তখন আর্থিক জোগানের বিষয়টি বর্তায় বাবাদের ওপর। আরও একটি দায়িত্ব বর্তায় আর্থিক চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে। সেটা হলো পরিবারের ভরণ-পোষণের জোগান নিশ্চিত করতে হবে হালাল মানে বৈধ উপায়ে উপার্জিত আয় দিয়ে। এর কোনো বিকল্প নেই ইসলামে। আয় উপার্জনের বৈধতার ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম।                

রাসূলে আকরাম (সা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন: "হালাল ও পবিত্র আয় ছাড়া অন্য কোনোভাবে যেন সন্তানদের জন্য কিছুই ঘরে নেয়া না হয়"। এ অর্থে বাবাদের নৈতিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি মনোযোগী হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো কোনো বাবা পরিবারের নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এবং তাঁদের সম্মান, মর্যাদা ও কর্তত্ব রক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রাগ বা কড়া মেজাজ দেখিয়ে থাকেন। অথচ পরিবারের কর্তা পুরুষের সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টি নির্ভর করে সংসারে সুখ-শান্তি নিশ্চিত করা এবং পরিবারের সদস্যদের সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার মধ্যে। যেসব বাবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করে তারা তাদের সন্তানদের কাছে আশাই করতে পারেন না যে সন্তানেরা প্রশিক্ষিত হবে এমনকি তাদের বাবা-মা'র সঙ্গেও শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ করবে।

পক্ষান্তরে যেসব সন্তান তাদের বাবার সঙ্গে সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বেড়ে ওঠে, তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে অন্যদের তুলনায় সাফল্যের মাত্রা বেশি পরিলক্ষিত হয়। বাবারা অনেক সময় তাদের সামাজিক দায়িত্ব পালনের জন্য পরিবারের বাইরে প্রচুর সময় দেন। এমনও হতে পারে যে স্ত্রী, সন্তান-সন্ততির খোজ-খবরও সবসময় নেয়া হয়ে ওঠে না। তবে সামাজিক রীতি-নীতি প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আদর, স্নেহ, ভালোবাসাপূর্ণ ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখা খুবই জরুরি।

গবেষণায় দেখা গেছে, ছেলে সন্তানের বয়স তিন বছর হলে তারা বাবার আচার আচরণ হুবহু অনুসরণ করতে চেষ্টা করে থাকে। সুতরাং এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারেন বাবারা।

বলছিলাম পুত্র সন্তানের বয়স তিন বছর হলেই তারা তাদের বাবাকে অনুসরণ করতে শুরু করে। এটা সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার এক মোক্ষম সুযোগ।কীভাবে কথা বলতে হয়, হাঁটাচলা করতে হয়, জামা-কাপড় পরতে হয় ইত্যাদি সঠিক পন্থায় সন্তানকে শেখাতে পারেন সকল বাবা। এমনকি বাবার কথায় বার্তায় সামাজিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধগুলোও শিখে নিতে পারে সন্তানেরা। বাবার সাথে ছেলের ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকলে এবং বাবা সন্তানের চিন্তার সহযোগী হয়ে উঠতে পারলে ছেলে সন্তান ভাবতে শেখে যে তার একজন গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠপোষক রয়েছে। এতোক্ষণ তো আমরা ছেলে সন্তানের সম্পর্ক নিয়ে বললাম। এবার কন্যা সন্তানের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক নিয়ে বলা যাক। এই সম্পর্কটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাবার উচিত মেয়েদের আদর, স্নেহ করা, তাদেরকে ভালোবাসা। এই ভালোবাসার বিষয়টি বুঝতে দিতে হবে মেয়েকে। তারা যাতে স্পষ্ট বুঝতে পারে যে তাদের বাবা কতোটা ভালোবাসে।

বাবার এই ভালোবাসার স্পষ্ট প্রকাশের ফলে কন্যা সন্তান বেড়ে ওঠে স্নেহ মমতার মধ্য দিয়ে। বাবার এই ভালোবাসা এমনকি কন্যার বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। নবীয়ে আকরাম (সা) কন্যা সন্তানদের প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং তাদেরকে স্নেহ-ভালোবাসা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বলেছেন: "সন্তানদের উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে কন্যাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত"। সর্বোপরি মনে রাখতে হবে সন্তানদের সঙ্গে আন্তরিক, দয়ার্দ্র, স্নেহ-ভালোবাসা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে বাবার প্রভাবটা অনেক বেশি পড়বে সন্তানের ওপর। ইসলাম বাবাদের ওপর দায়িত্বভার যেমন বেশি চাপিয়েছে তেমনি পরিবারে তাদের অবস্থানকেও সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। হাদিসে এসেছে: "বাবার আনুগত্য করা আল্লাহর আনুগত্য আর বাবার অবাধ্য হওয়া আল্লাহর অবাধ্য হবার শামিল"।

নবী কারিম (সা) অন্যত্র বলেছেন: "বাবা তার সন্তানের জন্য যে দোয়া করেন সেই দোয়া একজন পয়গাম্বর তার উম্মতের জন্য দোয়া করার মতো"।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/  ২৮

ট্যাগ