অক্টোবর ০৫, ২০১৯ ১৮:১৭ Asia/Dhaka

সুরা আত্ ত্বারিক্ব একটি মক্কি সুরা। ১৭ আয়াতের এ সুরা পবিত্র কুরআনের ৮৬তম সুরা।

অবশ্য নাজিল হওয়ার আদি কালক্রম অনুযায়ী সুরা আত্ ত্বারিক্ব কুরআনের ৩৬ তম সুরা। মৃত্যুর পর আবারও জীবিত হয়ে প্রত্যেক মানুষের হুবহু আগের দেহাবয়ব ফিরে পাওয়া ও বিচারের সম্মুখীন হওয়া তথা পুনরুত্থান ও বিচার দিবস এবং এ দিবসের নানা দিক এ সুরার অন্যতম প্রধান বিষয়। সুরা আত্‌ ত্বারিক্বে এই দিবসের অনিবার্যতার প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। মানুষ সৃষ্টির উৎস ও প্রাথমিক উপাদান, সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী হিসেবে আসমানি গ্রন্থ আল-কুরআনের পরিচিতি, খোদাদ্রোহী বা কাফেরদের প্রতি খোদায়ী শাস্তির সতর্কবাণী-ইত্যাদি এ সুরার কয়েকটি আলোচ্য বিষয়।

সুরা আত ত্বারিক্বের শুরুতে মহান আল্লাহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা বস্তুর শপথ নিয়েছেন। মানুষের সুরক্ষার ক্ষেত্রে খোদায়ী বিশেষ ব্যবস্থাপনার অস্তিত্বের বার্তা দেয়া হয়েছে এসব শপথের মাধ্যমে।

কোনো এক রাতে মহানবী (সা)’র কাছে ছিলেন তাঁর প্রিয় চাচা হযরত আবু তালিব। হঠাৎ আকাশে এক ধুমকেতু দেখা গেল এবং তা খুব দ্রুত অদৃশ্য হল। বিস্মিত চাচা আবু তালিব এর কারণ জানতে চাইলেন ভাতিজার কাছে। তাঁর প্রশ্নের উত্তরে নাজিল হয় সুরা আত্‌ ত্বারিক্ব। ত্বারিক্ব শব্দের অর্থ রাতে দৃশ্যমান বা অস্তিত্বময় হওয়া বস্তু।

সুরা  আত্‌ ত্বারিক্বের শুরুতে দুই বার এই শব্দের উল্লেখ ও শপথ করে মহান আল্লাহ মহাকাশের ধুমকেতুর মত রহস্যময় ও বিস্ময়কর সৃষ্টির মত বিষয়গুলো সম্পর্কে চিন্তাশীল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এবং এসব বিষয়ে গভীর গভীর ও যথাযথ জ্ঞান অর্জনে উৎসাহ দিচ্ছেন।  মহান আল্লাহ বলছেন: শপথ আকাশের ও শপথ রাতের বেলায় আকাশে দৃশ্যমান বা রাতের আকাশে-আসা বস্তুর! আপনি কি জানেন যে রাতের আকাশে-আসা সেটা কি? সেটা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র যা আঁধারকে ভেদ করে। -

অতি উচ্চ আকাশে আঁধার-বিদারী উজ্জ্বল নক্ষত্রের আকস্মিক আলো-ঝমকানো উপস্থিতি ও যেন আকাশ ফেঁড়ে বেরিয়ে পড়ার অবস্থা মানুষের চোখকে করে বিস্ময়-বিহ্বল ও হতচকিত।

রাতের আকাশের দৃশ্যমান বস্তু ও উজ্জ্বল নক্ষত্রের শপথ নেয়ার পর সুরা  আত্‌ ত্বারিক্বের চতুর্থ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: প্রত্যেকের উপর একজন তত্ত্বাবধায়ক রয়েছে।

এর অর্থ মানুষ কখনও একা বা নিঃসঙ্গ নয়। আল্লাহ ফেরেশতা ও কর্মীদেরকে ব্যস্ত রেখেছেন মানুষের দেখা-শোনা ও যত্ন নেয়ার কাজে। তারা মানুষের প্রতিটি কাজ রেকর্ড করছেন। মানুষের তৎপরতাসহ সব কিছুই নথিবদ্ধ থাকার অর্থ তাদেরকে একদিন তাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরতে হবে এবং ভালো ও মন্দ কাজের প্রতিফল পেতে হবে। আর পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস সুদৃঢ় করতে হলে মানুষের উচিত তার সৃষ্টির প্রক্রিয়ার দিকে লক্ষ্য করা। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তুচ্ছ বীর্য থেকে। নানা জটিল ও বিস্ময়কর পর্যায় ও প্রক্রিয়া শেষে ওই বীর্যই পরিণত হয় পূর্ণাঙ্গ অবয়বের মানুষে! তাই মানুষকে আবারও জীবন্ত করা মহান আল্লাহর জন্য মোটেই কঠিন কোনো কাজ নয়।

সুরা  আত্‌ ত্বারিক্বে পুনরুত্থান বা বিচার-দিবসকে ‘গোপন বা রহস্যময় বিষয়গুলো স্পষ্ট হওয়ার দিন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষের গোপন নানা বিশ্বাস, খোদাদ্রোহিতা, কপটতা তথা ভালো ও মন্দ ইচ্ছার সবই সেদিন স্পষ্ট হবে। এই প্রকাশ মুমিনদের জন্য আল্লাহর বাড়তি নেয়ামত ও তাদের জন্য গৌরবের বিষয়। কিন্তু বিচার দিবসে স্বচ্ছতা ও স্পষ্টতা অপরাধী আর খোদাদ্রোহী পাপীদের জন্য হবে মহা-কলঙ্কজনক ও যন্ত্রণাদায়ক। সেদিন সবার সামনে তারা হবে লজ্জিত, অপদস্ত ও মাথা-নুইয়ে রাখা গাধার মত কলঙ্কিত। সেদিন এই অপরাধীদের কারো জন্যই কোনো সাহায্যকারী থাকবে না।

সুরা  আত্‌ ত্বারিক্বের ১৫ থেকে ১৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ মহানবী (সা)-কে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন, তারা ভীষণ প্রতারণা বা চক্রান্ত করে, আর আমিও যথাযথ কৌশল করি। তাই, কাফেরদেরকে অবকাশ দিন, তাদেরকে অবকাশ দিন কিছু দিনের জন্যে।

অর্থাৎ শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে নানা চক্রান্ত করলেও মহান আল্লাহ যথাযথ কৌশলের মাধ্যমে সেসব ব্যর্থ করে দেন।

অবিশ্বাসীরা বিশ্বাসীদের মোকাবেলায় কখনও উপহাস করে এবং কখনও অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে ও কখনও সন্ত্রাসী কায়দায় নানা ধরনের নির্যাতন করে। তারা কখনও বলে যে মহানবী পাগল, গণক বা জাদুকর এবং কখনও শর্ত দেয় যে গরীব ও নিঃস্বদেরকে তাঁর কাছ থেকে দূরে সরাতে হবে। অন্য কথায় মহান আল্লাহর কৌশল মহানবী (সা) ও মুমিনদের জন্য বিশেষ অনুগ্রহ। এসব কৌশল ইসলামের শত্রুদের হতভম্ব করে দেয়। তাই মুসলমানদের উচিত শক্তিশালী শত্রুদের মোকাবেলায় ধৈর্য ধারণ করা এবং কোনো ধরনের তাড়াহুড়া না করে ঠাণ্ডা-মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া।

যুগে যুগে ইসলামের শত্রুরা মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত পদক্ষেপের কাছে পরাজিত হয়েছে। তাই আধুনিক যুগেও মহানবীর (সা) প্রতি ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপাত্মক কার্টুন প্রকাশ এবং মুসলিম অভিবাসীদের ওপর নানা ধরনের হামলা ও ইসলাম-আতঙ্ক ছড়ানোর পশ্চিমা ষড়যন্ত্রগুলোর মোকাবেলায়ও মুসলমানদেরকে ঠাণ্ডা মাথায় যথাযথ ও যৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে। #

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/  ০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।