নভেম্বর ০৯, ২০১৯ ১৮:২৭ Asia/Dhaka

সুরা বালাদ পবিত্র কুরআনের ৯০ নম্বর সুরা। মক্কায় নাজিল-হওয়া ছোট্ট এ সুরায় রয়েছে ২০ আয়াত।

মক্কা শহরের নামে শপথ নেয়া, কষ্ট ও পরিশ্রমকে মানুষের জীবনের অংশ বলে উল্লেখ করা, মহান আল্লাহর অমূল্য নেয়ামত হিসেবে চোখ, ঠোট ও জিভের মত মানুষের কিছু অঙ্গ ও মানুষের অকৃতজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ করা, আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা হিসেবে বঞ্চিত, দরিদ্র ও ইয়াতিমদের সাহায্য করার পরামর্শ এবং মানুষের দুটি শ্রেণী ও তাদের পরিণতির কথা রয়েছে সুরা বালাদে।

এই সুরার প্রথমেই স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে মানব জীবনের পুরো অংশ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরপুর হয় না। গোটা জীবনটাইকে বিশ্রাম ও আরাম-আয়েশের ফুল-শয্যা ভাবা তাই ঠিক নয়। মহান আল্লাহ সুরা বালাদের চতুর্থ আয়াতে বলছেন,

নিঃসন্দেহে আমরা মানুষকে শ্রমনির্ভর করেই সৃষ্টি করেছি। -

মানুষ মাতৃগর্ভে যখন ক্ষুদ্র ভ্রুণ হিসেবে জীবন-যাত্রা শুরু করে তখন থেকেই তাকে অনেক কষ্ট ও সমস্যার মধ্য দিয়ে বড় হতে হয়। এরপর দুনিয়ায় শৈশব ও যৌবনও বাধা-বিঘ্নহীন নয়। বার্ধক্যে মানুষের সমস্যা ও যাতনাগুলো সর্বোচ্চ মাত্রায় রূপ নেয়। মানুষের পার্থিব জীবনের এটাই স্বাভাবিক রীতি। মানুষের কোনো সুখ বা নেয়ামতই ঝামেলামুক্ত, দীর্ঘমেয়াদী, পরিপূর্ণ ও সহজলভ্য নয়। অনেক সময় দুনিয়ার জীবনের নানা ভয়ানক বিপদ আর দূর্যোগ মানুষের মনকে করে দেয় তিক্ত-বিরক্ত। তবে সুখের বিষয় দুনিয়ার দূর্যোগ আর বিপদগুলোও দীর্ঘস্থায়ী ও পরিপূর্ণ নয়। এখানে সুখের সঙ্গে মিশে থাকে দুঃখ আবার দুঃখের মাঝেও থাকে সুখের আলোড়ন। দুঃখ-বিপদ ও সমস্যা মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধি ও মানুষের নানা শক্তি এবং যোগ্যতা, প্রতিভা ও সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ঘটায়। মুমিন ও খোদাপ্রেমিকরা দুঃখ-বেদনাকে করেন উপভোগ।

সুরা বালাদের ৫ নম্বর আয়াত বলছে যে মানুষের জীবন দুঃখ ও সমস্যামুক্ত নয়। কারণ সব দুঃখ ও সমস্যা উৎরে যাওয়ার মত যোগ্যতা এবং শক্তি মানুষের নেই। কিন্তু যখন সে শক্তি ও ক্ষমতা অর্জন করে তখন সে অনাচার ও পাপে জড়িয়ে যায়। এ সময় মানুষ মনে করে যে তাকে কখনও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না এবং তাকে অন্যায় ও অনাচার থেকে রোখার কেউ নেই!

অদূরদর্শী ও খোদাবিমুখ মানুষ বহু কষ্ট করে অর্থ সঞ্চয় করে। এমন মানুষকে যখন বলা হয় দান-খয়রাত কর তখন সে অহংকার করে বলে,  আমি এই পথে অনেক খরচ করেছি! অথচ সে আল্লাহর জন্য কিছুই খরচ করেনি, আর কিছু দান-খয়রাত করলেও তা করেছে লোক-দেখানোর উদ্দেশ্যে ও ব্যক্তি-স্বার্থের গরজে।  সুরা বালাদের পরবর্তী অংশে মানুষের কাছে দেয়া মহান আল্লাহর নানা ধরনের বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে সে অহংকার ও অচেতনতার পর্দা ছিন্ন করতে পারে এবং এসব নেয়ামতের স্রস্টা আল্লাহকে নিয়ে ভাবে ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়।  সুরা বালাদের ৮ থেকে দশ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

আমি কি তাকে দেইনি দুটি চোখ, জিহ্বা ও দুটি ঠোট এবং আমি তাকে সুপথ ও কুপথ দু'টিই দেখিয়েছি। -

পূর্ণতা অর্জনের পথে মানুষের জন্য এসবই জরুরি মাধ্যম। চোখ হচ্ছে দৃশ্য-কেন্দ্রীক যোগাযোগের এক অনিবার্য ও প্রধান মাধ্যম। চোখের মধ্যে রয়েছে লেন্সসহ এমনসব মহাবিস্ময়কর ব্যবস্থাপনা যা মানুষকে আল্লাহর সামনে বিনম্র হতে বাধ্য করে। আলো ও আয়নার অনন্য সূত্রসহ নানা সূত্র ও প্রকৌশল নিখুঁতভাবে কাজ করে মানুষের চোখে।   

জিহ্বা আর ভাষাও তথ্য-বিনিময় ও যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে মানুষ এই জিহ্বা আর ভাষার মাধ্যমে। বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক বিষয়ে মানুষের অগ্রগতি ভাষার কাছে ঋণী। ঠোটেরও রয়েছে কত উপকার। কথা বলতে, খেতে ও পান করতে, মুখের পানি ফেলতে এবং মুখের আদ্রতা রক্ষায় ও চেহারা রক্ষায় দুটি ঠোটের রয়েছে অনন্য অবদান। হযরত আলী (আ) বলেছেন, মানুষ কত বিস্ময়কর যে সে চর্বিযুক্ত একটি অঙ্গ তথা চোখ দিয়ে দেখে, একটি গোশতের টুকরো বা জিহ্বা দিয়ে কথা বলে এবং একটি নরম হাড় তথা কান দিয়ে শোনে ও দুইভাগে ভাগ হওয়া নল বা পাইপের মত একটি অঙ্গ দিয়ে শ্বাঁস-প্রশ্বাসের কাজ করে!  

এ ছাড়াও মানুষকে দেয়া হয়েছে ভালো ও মন্দ পথ বেছে নেয়ার স্বাধীনতা।

সুরা বালাদে এমন ক'টি কাজের পরামর্শ দেয়া হয়েছে যেগুলো মানুষের মুক্তি ও সৌভাগ্য বয়ে আনে। যেমন,  দাসদের মুক্তি দেয়া, ক্ষুধার্তদেরকে ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্য দেয়া এবং আত্মীয়-স্বজনের মধ্য থেকে ইয়াতিমদের যত্ন নেয়া ও দরিদ্র আর অক্ষমদের সাহায্য করা। এ ছাড়াও সেসব মানুষ মুক্তি পাবে সংকট থেকে যাদের রয়েছে ঈমানের পাশাপাশি ধৈর্য ও মানবীয় দয়ার মত উচ্চতর নৈতিক নানা গুণ। পবিত্র কুরআনে এ ধরনের মানুষকে ডানদিকের অধিবাসী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ বিচার-দিবসে তাদের কর্মকাণ্ডের রিপোর্ট বা আমলনামা দেয়া হবে তাদের ডান হাতে। ফলে তারা হবে মুক্তিপ্রাপ্ত ও সফল। আর যারা আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে অগ্রাহ্য ও অস্বীকার করেছে তাদেরকে কুরআনে অশুভ লোকজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের আমলনামা দেয়া হবে তাদের বাম হাতে। এভাবে তারা অনাচার ও অবিশ্বাসের শাস্তি পাবে। #

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।