ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯ ১৭:১০ Asia/Dhaka

গত কয়েক আসরে আমরা বলেছি, যতদিন ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাব না হচ্ছে ততদিন মুসলমানদেরকে নানা ধরনের পরীক্ষা ও কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে।

সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অস্থিরতা ও সংঘাত, যুদ্ধ, রক্তপাত, বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান বিস্তার, অন্যায়-অবিচার-জুলুমে গোটা বিশ্ব ছেয়ে যাবে। অবশ্য এসবের মধ্যেও অল্প কিছু মানুষ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দূরদর্শিতার কারণে ধর্মের সঠিক পথে অটল থাকবেন। এ সম্পর্কে ইমাম হাসান আসকারি (আ.) বলেন: জেনে রেখো, ইমাম মাহদির আবির্ভাবের সময় এতটা দেরি হবে যে, মানুষ তার আবির্ভাব সম্পর্কে দ্বিধা-সন্দেহে ভোগা শুরু করবে। তবে যারা নিজেদের ঈমান মজবুত রাখতে পারবে তারা এই সন্দেহে ভুগবে না এবং সব ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।                                                                                      

আবির্ভাবের পর ইমাম মাহদি (আ.) নিজেই নিজের পরিচয় ঘোষণা করে সবাইকে জানিয়ে দেবেন, নবী-রাসূলদের পথ অনুসরণ করে পৃথিবীতে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আবির্ভূত হয়েছেন। এ সম্পর্কে ইমাম জাফর সাদেক (আ.) বলেন: ইমাম মাহদি কাবা শরীফের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেবেন: হে মানুষ! যাদের হযরত আদম ও হযরত শীষ (আ.)কে দেখার ইচ্ছা আছে তারা আমাকে দেখো। হযরত নূহ ও তাঁর সন্তান সামকে দেখার ইচ্ছা যাদের- তারা আমার দিকে তাকাও। যারা হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর সন্তান ইসমাইলের চেহারা মুবারক দেখার ইচ্ছা পোষণ করো তারা আমার চেহারার দিকে দৃষ্টিপাত করো। যারা হযরত মূসা ও তাঁর সহযোগী ইউশাকে দেখতে চাও তারা আমার দিকে তাকাও। শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও আলী (আ.)কে দেখার ইচ্ছা যাদের তারাও আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করো। আমার দাওয়াতের বাণী শোনো কারণ তোমরা যা কিছু জানো এবং যা কিছু জানো না তার সব খবর আমার কাছে আছে।  এরপর হযরত মাহদি (আ.) অতীতে নবী-রাসূলদের কাছে নাজিলকৃত কিতাব ও সহিফার কিছু অংশ পাঠ করে শোনাবেন। সবশেষে তিনি পবিত্র কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করবেন।  

ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’র এই ভবিষ্যদ্বাণী থেকে বোঝা যায়, ইমাম মাহদি নবী-রাসূলদের প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করতে এবং সবাইকে সে পথ অনুসরণ করে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্যই পৃথিবীতে আবির্ভূত হবেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, তিনি যতক্ষণ আবির্ভূত না হচ্ছেন ততক্ষণ সাধারণ মানুষের বিশেষ করে মুসলমানদের দায়িত্ব কি হবে? এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, এই মহান ইমামের আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত মুসলমানদেরকে যোগ্য ও পারদর্শী আলেম ও ফকিহদের দিকনির্দেশনা মনে চলতে হবে। তাদের ফতোয়া অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে। আমরা যেমন দুনিয়াবি বিভিন্ন বিষয়াদিতে আলোচ্য বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হই তেমনি ধর্মীয় বিষয়ে এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ অর্থাৎ আলেমদের কাছে যেতে হবে।

এখানেও প্রশ্ন রয়েছে। আমরা কি জীবনের চলার পথের সকল কাজের জন্য আলেম ও ফকিহদের শরণাপন্ন হবো নাকি শুধুমাত্র ধর্মীয় বিষয়ে তাদের মতামত নেবো? এ সম্পর্কে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (রহ.)’র মতামত হচ্ছে, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক’সহ সব বিষয়ে যোগ্য আলেমদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে।

 

অবশ্য কোনো কোনো ফকিহ আছেন যারা ধর্মীয় বিষয়ের বাইরে অর্থাৎ রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিসহ অন্যান্য বিষয়ে মতামত দিতে চান না। তারা ধর্মীয় বিষয় ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে নাক গলান না এবং তাদের আচরণে মনে হয় পৃথিবীর চলমান ঘটনাপ্রবাহের ব্যাপারে তাদের কোনো দায়িত্ব নেই। এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাখ্যান করে ইমাম খোমেনী (রহ.) বলেন: ইজতেহাদের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে স্থান ও কাল। অতীতের কোনো এক সময় তখনকার প্রেক্ষাপটে একটি বিষয়ে একজন ফকিহ যে নির্দেশ দিয়েছিলেন সময়ের পরিবর্তনে নতুন প্রেক্ষাপটে তার কার্যকারিতা নাও থাকতে পারে। কাজেই একজন ফকিহ বা একজন মুজতাহিদকে সমাজের চলমান ঘটনাপ্রবাহের ওপর পূর্ণ দখল রাখতে হবে। তিনি একদিকে যেমন ইবাদত-বন্দেগি ও পরহেজগারির দিক দিয়ে সবচেয়ে অগ্রগামী হবেন তেমনি সমাজকে নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলীও তার মধ্যে থাকতে হবে। অবশ্য পবিত্র কুরআনে যেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট আদেশ ও নিষেধ রয়েছে সেসব বিষয়ে নতুন করে কোনো গবেষণা করার সুযোগ নেই।

ইমাম খোমেনী এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের আগে ‘বেলায়েতে ফকিহ’র শাসনব্যবস্থা নামক ধর্মীয়-রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ইসলামি বিপ্লবের পর এই কর্মসূচি অনুযায়ী তিনি ইরানে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই শাসনব্যবস্থায় বেলায়েতে ফকিহ শুধু ধর্মীয় জ্ঞানে পারদর্শী নন একইসঙ্গে তিনি রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ সব অঙ্গনে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখেন।  ইমাম খোমেনী (রহ.) ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর ‘বেলায়েত ফকিহ’র দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৮৯ সাল থেকে বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ইরানের ইসলামি শাসনব্যবস্থায় ‘বেলায়েত ফকিহ’র গুরুদায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ সম্পর্কে ইমাম খোমেনী (রহ.) আরো বলেন: যতক্ষণ ফকিহ’র লেখা বইয়ের মধ্যে কিংবা তাঁর অন্তরে ফিকাহশাস্ত্র ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত এই ফিকাহ যেমন মুসলমানের কোনো কাজে লাগে না তেমনি খোদাদ্রোহী জালেম শাসকদেরও এতে কোনো ক্ষতি হয় না। #

 

পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ / ২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ