ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯ ১৫:৫৩ Asia/Dhaka

মুসলিম উম্মাহ যাতে মিথ্যা ইমাম মাহদিদের ধোঁকায় না পড়ে সেজন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) এই মহান ইমামের পরিচয় স্পষ্ট করে দিয়ে গেছেন।

তিনি একদিন হযরত আলী (আ.)’র উপস্থিতিতে সবাইকে উদ্দেশ করে বলেন, মাহদি হবে আলী’র বংশধর। আল্লাহ তায়ালা তাঁর মাধ্যমে সকল মিথ্যা ও অপশক্তিকে বিশ্বের বুক থেকে মুছে ফেলবেন। কাজেই দেখা যাচ্ছে, ইমাম মাহদি (আ.)’র বংশধারা শুরু হয়েছে হযরত আলী (আ.) থেকে এবং অবশিষ্ট ইমামদের মাধ্যমে তা এসে হযরত মাহদি পর্যন্ত শেষ হয়েছে। আর এটি হচ্ছে ইমাম মাহদির মিথ্যা দাবিদারদের থেকে আসল ইমামকে চেনার সবচেয়ে সহজ উপায়।

রাসূলে খোদা এ সম্পর্কে আরেক গুরুত্বপূর্ণ হাদিসে বলেছেন: মহান আল্লাহ হযরত মাহদির মাধ্যমে মুশরিকদের শাসনব্যবস্থা থেকে বিশ্ববাসীকে মুক্তি দেবেন। আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরের ৫৫ নম্বর আয়াতে এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন যেখানে বলা হয়েছে: তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকতৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের (অর্থাৎ মুশরিক শাসকদের) ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। (তখন) তারা একমাত্র আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা কুফরি করবে, তারা (দ্বীন থেকে) বহিস্কৃত হবে।

 

প্রকৃতপক্ষে ইমাম মাহদি (আ.)’র বিপ্লবের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব থেকে সব ধরনের শিরকি ও কুফরি আদর্শ মুছে যাবে। সকল অত্যাচারী শাসকের ক্ষমতার মসনদ তছনছ হয়ে যাবে এবং মানবতা সব ধরনের বন্দিত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাবে। সেদিন মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করবে। এরকম একটি শুভক্ষণের অপেক্ষা শুধু মুসলমানরা করছেন না বরং অন্যান্য ঐশী ধর্মের অনুসারীরাও সেদিনের অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। খ্রিস্টানরা তাদের নবীর প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে। মহানবী (সা.) যেমনটি বলেছেন, মাহদি আমার বংশে আসবে এবং যখন তার আবির্ভাব হবে তখন তাকে সাহায্য করার জন্য (আল্লাহর ইচ্ছায়) মরিয়ম-পুত্র ঈসা আসমান থেকে অবতরণ করবেন। ঈসা মাহদিকে নিজের ওপর প্রাধান্য দেবেন এবং তার ইমামতিতে নামাজ আদায় করবেন।

বিশ্বনবীর পাশাপাশি মহান ইমামগণও হযরত মাহদি (আ.) সম্পর্কে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। আমিরুর মু’মেনিন আলী (আ.) বলেন: যদি কিয়ামত দিবসের আর মাত্র একদিনও বাকি থাকে মহান আল্লাহ সে দিনকে এতটা লম্বা করে দেবেন যে, আমার বংশের এক পুরুষ মহা বিপ্লবের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। হযরত আলী (আ.) এই বক্তব্যের মাধ্যমে একথা বোঝাতে চেয়েছেন ইমাম মাহদির আবির্ভাবে দেরি হলে কেউ যেন হতাশ হয়ে না যায় বরং আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি শেষ জামানায় অবশ্যই বিপ্লব করবেন। নবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহা নিজ সন্তান হোসেইন (আ.)কে বলেছেন: যেদিন তোমার জন্ম হয়েছে সেদিন রাসূলে খোদা তোমাকে কোলে নিয়ে বলে গেছেন, হে ফাতিমা জেনে রাখো, তোমার এই সন্তান হবে নয়জন ইমামের পিতা এবং এসব ইমামের সর্বশেষ জন হবে মাহদি।

ইমাম হোসেন (আ.) এ সম্পর্কে বলেন, আমার সন্তান মাহদি মৃত জমিনকে জীবিত ও সুজলা-সুফলা করবে এবং সত্য ধর্মকে অন্য সব ধর্মের ওপর বিজয়ী করবে; যদিও তা মুশরিকদের মনোপুত হবে না। তিনি আরো বলেন, যারা ইমাম মাহদির প্রতীক্ষায় থাকবে তারা ইসলামের শত্রুদের হাতে নির্যাতিত হবে এবং নির্যাতনকারীরা বলবে তোমাদের ইমাম কেন আবির্ভূত হচ্ছে না? যারা এ ধরনের নির্যাতন ও ভর্ৎসনা সহ্য করেও নিজেদের ঈমানে অটল থাকবে তারা রাসূলে খোদার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জিহাদ করার সমান মর্যাদা লাভ করবে।

পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদা’র ৫৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি হবে কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।” কোনো কোনো মুফাসসিরে কুরআন এই আয়াতে বর্ণিত সম্প্রদায়কে ইমাম মাহদি (আ.)’র অনুসারী বলে মনে করেন যারা সেই ইমামের অনুপস্থিতিতে সব ধরনের তিরস্কার উপেক্ষা করে নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসে অটল থাকবেন।

ইসলামের ইতিহাসে যত নবী-রাসূল ও আউলিয়া এসেছেন তাদের সবাই নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে তাদের দাওয়াতি কাজ করেছেন। কিন্তু ইমাম মাহদি (আ.)’র বিপ্লব কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং তাঁর তৎপরতা বিস্তৃত হবে বিশ্বব্যাপী। তিনি আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর বিপ্লবের সামনে যত রকমের প্রতিবন্ধকতাই আসুক না কেন তা উপড়ে ফেলবেন এবং বিশ্বের কোনো শক্তি বা আধিপত্যকামী শাসক তাঁর বিপ্লব ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। সূরা বনি ইসরাইলের ৮১ নম্বর আয়াতে যেমনটি বলা হয়েছে: “বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।” আমরা মহান আল্লাহর দরবারে ইমাম মাহদি (আ.)’র আবির্ভাবের ক্ষণ ত্বরান্বিত করার আবেদন জানাচ্ছি। #

পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ / ২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ