ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯ ১৯:১৮ Asia/Dhaka

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন: মহান আল্লাহ ইমাম মাহদি (আ.)’র আবির্ভাব ও বিপ্লবকে অবধারিত করে রেখেছেন।

কাজেই তাঁর সম্পর্কে কারো মনে যেন কোনো সন্দেহের অবকাশ না থাকে। ভূপৃষ্ঠ জুলুম-অত্যাচারে ছেয়ে যাওয়ার পর তিনি এই পৃথিবীতে আবার শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। তাঁর আবির্ভাবকে বিশ্বাস করা ঈমানের অংশ।

শিয়া মাজহাবে ১২ ইমামে বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের অঙ্গ। এ কারণে ইমাম বাকের (আ.) বলেন: হযরত আলী (আ.) থেকে ইমামতের যে ধারা শুরু হয়েছে তা ইমাম মাহদি (আ.) পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে এবং এ বিষয়টির প্রতি গভীর বিশ্বাস রাখতে হবে। ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এ সম্পর্কে বলেন: যে ব্যক্তি বাকি ১১ ইমামে বিশ্বাস রাখবে কিন্তু ইমাম মাহদি সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করবে তার ঈমান পূর্ণাঙ্গ হবে না।

ইমাম মাহদি (আ.)’র আবির্ভাব সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীর পর এবার আমাদের এই মহান ইমামের আবির্ভাবের আগের সময়গুলোতে মুসলিম উম্মাহর কি দায়িত্ব রয়েছে তা জেনে নেয়া প্রয়োজন।

ইমাম মুসা কাজেম (আ.) এ সম্পর্কে বলেন: যারা ইমাম মাহদির আবির্ভাবের আগের সময়টাতে ধৈর্যধারণ করে ইমামদের অনুসৃত পথ আকড়ে থাকবে তারাই সফলকাম। তারা দ্বীনের পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। আমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট। এই শ্রেণির মানুষ বড় সৌভাগ্যবান এবং কিয়ামতের দিন তারা আমাদের সঙ্গে থাকবে এবং আমাদের সবার গন্তব্য হবে অভিন্ন।

তবে এই মহান ইমামের আবির্ভাবের আগের সময়টাতে মুসলিম উম্মাহর কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে যখন মুসলমানদের মধ্যে অসংখ্য মত ও পথ সৃষ্টি হয়েছে এবং সবগুলো মত ও পথের অনুসারীরা লোকজনকে তাদের দলে ভেড়ানোর জন্য নানারকম কৌশল অবলম্বন করছে। এ অবস্থায় ইমাম মুসা কাজেম (আ.) খাঁটি ঈমানদারদের দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে গেছেন। তিনি বলেছেন, অন্য কোনো ভ্রান্ত মতবাদ অনুসরণ না করে ইমামতের রজ্জু শক্ত করে আকড়ে ধরতে হবে। ইমামতকে আকড়ে থাকলে একজন মুসলমানের লক্ষ্যচ্যুত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।

অন্যান্য ইমামের মতো ইমাম আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.)ও যুগের ইমাম মাহদি (আ.) সম্পর্কে কিছু মূল্যবান উপদেশ দিয়ে গেছেন।  তাঁর সময়কার অন্যতম প্রখ্যাত ফকিহ ও মুহাদ্দিস আবু আলী রিয়ান বিন সোলাত ইমামকে জিজ্ঞাসা করেন: আপনি কি শেষ জামানার ইমাম? এ প্রশ্নের উত্তরে ইমাম রেজা (আ.) বলেন: না, আমি শেষ জামানার ইমাম নই। কারণ, রাজনৈতিক ও শারিরীক দিক দিয়ে প্রয়োজনীয় শক্তি আমার নেই। শেষ জামানার ইমাম অর্থাৎ ইমাম মাহদি (আ.) সুঠামদেহী যুবক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন এবং রাজনৈতিক দিক দিয়ে তিনি মস্তবড় প্রভাবশালী ব্যক্তি হবেন।

ইমাম রেজা (আ.) আরো বলেন, ইমাম মাহদি এতটা শক্তির অধিকারী হবেন যে, সবচেয়ে উঁচু গাছের দিকে তিনি হাত বাড়ালে সে গাছ মাটি থেকে উপড়ে চলে আসবে এবং দুই পাহাড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তিনি হুঙ্কার ছাড়লে পাহাড়ের পাথরগুলো ঝরঝর করে ঝরে পড়তে থাকবে। তাঁর হাতে থাকবে হযরত মুসার লাঠি এবং আঙুলে থাকবে হযরত সুলায়মানের আংটি। তিনি হবেন আমার চতুর্থ বংশধর। তার আগমনের উপযুক্ত প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত মহান আল্লাহ তাকে গোপন করে রাখবেন। পৃথিবী জুলুম-অত্যাচারে ভরে গেলে তিনি এই ধরাপৃষ্ঠে আগমন করবেন এবং গোটা বিশ্বে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন।

ইমাম রেজা (আ.)’র এই হাদিসে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।  ইমাম মাহদি এমন সময় আবির্ভূত হবেন যখন তাঁর আগমনের প্রেক্ষাপট তৈরি হবে এবং তিনি যথেষ্ট শক্তির অধিকারী থাকবেন। তাঁর বিপ্লব হবে বিশ্বজয়ী বিপ্লব। অর্থাৎ বিশ্বের সব জাতি এই মহান ইমামকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকবে; পাশাপাশি জালিম শাসকদের পরাভূত করার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় শক্তিমত্তারও অধিকারী হবেন। এ কারণেই ইমাম রেজা (আ.) বলেন: “ইমাম মাহদি এতটা শক্তির অধিকারী হবেন যে, সবচেয়ে উঁচু গাছের দিকে তিনি হাত বাড়ালে সে গাছ মাটি থেকে উপড়ে চলে আসবে এবং দুই পাহাড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তিনি হুঙ্কার ছাড়লে পাহাড়ের পাথরগুলো ঝরঝর করে ঝরে পড়তে থাকবে।”

এখান থেকে সহজেই অনুমিত হয় আল্লাহ তায়ালা ইমাম মাহদি (আ.)কে এতটা শক্তি দান করবেন যাতে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা বাস্তবায়নের পথে কোনো শক্তি বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে। বাহ্যিক এই শক্তির পাশাপাশি তিনি নবী-রাসূলদের মতো ঐশী মদদেরও অধিকারী হবেন। ইমাম রেজা (আ.) হয়তো এ কারণেই বলেছেন, তাঁর হাতে থাকবে হযরত মুসার লাঠি ও হযরত সুলমানের আংটি। হযরত মুসা (আ.) আল্লাহর ইচ্ছায় ফেরাউনের মতো মস্তবড় প্রতাপশালী শাসককে তার লাঠির সাহায্যে পরাভূত করেছিলেন। অন্যদিকে হযরত সুলায়মানের আংটি আমাদেরকে একথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর এই নবী বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী ছিলেন এবং জিন ও পশুপাখী পর্যন্ত তাঁর আদেশ মেনে চলত। হযরত সুলায়মানের সামনে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো কোনো অপশক্তির অস্তিত্ব ছিল না।

ইমাম মাহদি (আ.)’র শক্তিমত্তা ও সামরিক বাহিনী গঠনের ক্ষেত্রে তাঁর সক্ষমতা সম্পর্কে ইমাম জাওয়াদ (আ.) বলেছেন: “…তাঁর প্রতিটি কাজের জন্য পৃথিবী প্রস্তুত থাকবে এবং সব কঠিন বিষয় তাঁর জন্য সহজ হয়ে যাবে। সারা পৃথিবী থেকে আসা ৩১৩ জনের একটি বাহিনী নিয়ে তিনি জালিম শাসকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবেন। তিনি অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে এতটা বীরবিক্রমে লড়াই করবেন যে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন।#

পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ / ২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ