ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২০ ১৬:৩৪ Asia/Dhaka

সূরা কুরাইশ পবিত্র কুরআনের ১০৬তম সুরা। মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় রয়েছে ৪টি বাক্য বা আয়াত।

অবশ্য অনেকেই এই সুরাকে সুরা ফিলের অংশ বা পরিপূরক বলে মনে করেন। কারণ এ দুই সুরার বক্তব্য পরস্পরের সম্পর্কিত। কুরাইশদের প্রতি মহান আল্লাহর নানা অনুগ্রহ ও দয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে এ সুরায় যাতে তারা মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয় এবং কেবল তাঁরই ইবাদত করে যিনি কাবা ঘরের মালিক। কুরাইশদের মান-মর্যাদা কাঘা ঘরের ওসিলায় অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।  এবারে এ সুরার অনুবাদ শোনা যাক্। অসীম দয়াময় ও অনন্ত করুণাময় আল্লাহর নামে: ১.কুরাইশদের আসক্তির কারণে, (২) যা তাদের শীত ও গ্রীষ্মের সফরের প্রতি আছে, (৩) সুতরাং তাদের উচিত এ গৃহের প্রভুর ইবাদত করা। (৪) যিনি তাদের ক্ষুধায় আহার্য দান করেছেন এবং ভীতি হতে তাদের নিরাপত্তা দান করেছেন।

- ইয়েমেনের শাসক আবরাহার হস্তি-বাহিনীকে খোদায়ি আজাব বা শাস্তি দেয়া হয়েছিল এ কারণে যাতে কুরাইশরা পবিত্র মক্কার অনুরাগী হয় এবং মহানবী (সা)’র আবির্ভাবের প্রাথমিক অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে। আবরাহা চেয়েছিল তার নির্মিত গির্জায় সবাই জিয়ারত করতে আসুক। আর তাই সে হস্তি-বাহিনী নিয়ে মক্কার কাবা ঘর ধ্বংস করতে সেই দিকে অগ্রসর হয়েছিল। কিন্তু মহান আল্লাহর পাঠানো আবাবিল পাখির নিক্ষিপ্ত কঙ্করের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায় আবরাহার বাহিনী।

মক্কার কুরাইশ গোত্রসহ সবাই এ শহরে জীবন যাপন করতো মূলত নিরাপত্তার কারণে ও এ অঞ্চলের জন্য বরাদ্দকৃত মহান আল্লাহর দেয়া নানা বরকতের কারণে। এই মক্কা ছিল আশপাশের এবং এমনকি আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীদের মতে ভৌগলিক দিক থেকে গোটা পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল। মক্কায় জনবসতি গড়ে ওঠার রহস্য লুকিয়ে আছে এখানেই। আসলে এটা মহান আল্লাহর অপার মহিমা ও করুণা যে, মক্কা সম্পূর্ণ পাথুরে ও মরুভূমি অঞ্চল অর্থাৎ একদম অনুর্বর হওয়া সত্ত্বেও পার্থিব প্রয়োজনীয় এমন কোন বস্তু নেই যা সেখানে নেই।

হেজাজের বেশিরভাগ মানুষই প্রতি বছর মক্কায় আসত ও এখানে হজব্রত পালন করত। আর এ উপলক্ষে অর্থনৈতিক লেনদেনও চলত এবং এ অঞ্চলের নানা বরকত থেকে লাভবান হত জনগণ। মক্কায় নিরাপত্তা থাকার কারণে এসবই সম্ভব হত। আবরাহার হামলা অথবা এ জাতীয় হামলার কারণে যদি কাবা ঘর ধ্বংস হয়ে যেত তাহলে কেউই মক্কায় আর আসা-যাওয়া করত না।

মক্কা অঞ্চলটি সবুজ-শ্যামল ছিল না কখনও। এখানে কৃষি-ক্ষেত্র গড়ে ওঠার পরিবেশও ছিল না। পশু-পালনও ছিল সীমিত পর্যায়ের। মক্কাবাসীদের জীবিকার বড় অংশই আসত বাণিজ্য কাফেলা থেকে। শীতকালে মক্কাবাসী ব্যবসায়ী কাফেলা নিয়ে যেত দক্ষিণাঞ্চলে তথা ইয়েমেনে। কারণ সে সময় দক্ষিণাঞ্চলে আবহাওয়া গরম থাকে। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে মক্কাবাসী উত্তরাঞ্চলে ও সিরিয়ায় যেত। কারণ সে সময় এ অঞ্চলের আবহাওয়া সহনীয় ও আরামদায়ক থাকে। সে যুগে সিরিয়া ও ইয়েমেন ছিল ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। আর এই দুয়ের সংযোগ-কেন্দ্র ছিল মক্কা ও মদিনা।

অবশ্য কুরাইশরা নানা পাপাচারে জড়িত থাকায় এতসব খোদায়ী অনুগ্রহ পাওয়ার অধিকার তাদের ছিল না। কিন্তু কুরাইশদের মধ্য থেকেই শেষ নবীর (সা) আবির্ভাব ও ইসলামের পতাকা তুলে ধরার পথ সুগমের জন্য মহান আল্লাহ মক্কাবাসীদের এইসব অনুগ্রহ দান করেছিলেন। খোদায়ি অনুগ্রহে বাণিজ্যিক সুবিধার কারণে কুরাইশরা ছিল ক্ষুধা ও অভাবমুক্ত আর নিরাপত্তার কারণে তারা ক্ষতিরও শিকার হত না। আবরাহার পরাজয়ের কারণে তাদের এ অবস্থা সুদৃঢ় ও স্থায়ী হয়েছিল।

কিন্তু এতসব খোদয়ি নেয়ামত পেয়েও কুরাইশরা আল্লা'র ঘরকে মূর্তির ঘর বানিয়েছিল এবং তারা আল্লাহর ইবাদতের চেয়ে মূর্তি পূজাকেই প্রাধান্য দিত। আর এইসব অকৃতজ্ঞতার  মন্দ পরিণতিও তাদের ভোগ করতে হয়েছিল।

মহানবী (সা.) যে বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন সে গোত্রের নাম কুরাইশ। কুরাইশ নামটি নাযর বিন কিনানাহ্‌'র উপাধি ছিল। আর সেটাই তাঁর বংশধরদের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়। আর এরা যেহেতু মক্কাতেই বসবাস করত সেহেতু আশেপাশের জনগণ তাদের খুব সম্মান করত, আর তারা আল্লাহর ঘরের পরিসেবক হিসেবে পরিচিত ছিল। তৎকালীন আরবে অরাজক অবস্থা থাকা সত্ত্বেও কা’বা গৃহের কারণে মক্কা সুরক্ষিত থাকত; আর কুরাইশরা যেখানেই যেত তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করা হত। এ কারণে তারা কখনও প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়নি, বরং ব্যবসার কাজে শীতকালে ইয়েমেনে ও গ্রীষ্মকালে সিরিয়ায়  নিশ্চিন্তে যেতে পারত। তাই এইসব মহাঅনুগ্রহ ও বড় ধরনের নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মহান আল্লাহ বলছেন, যে ঘরের সুবাদে তোমাদের এই শান্তি, সেই গৃহের অধিপতি তো তোমাদের পক্ষ থেকে মূর্তির চেয়ে ইবাদতের বেশি অধিকার রাখেন। লক্ষ্য করলে দেখা যায় মহান আল্লাহ সব যুগেই প্রত্যেক অঞ্চলের বা জনপদের অধিবাসীকেই বিশেষ কিছু সুবিধা বা অনুগ্রহ দান করেছেন। তাই প্রত্যেক জাতিরই উচিত মহান আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া ও কেবল আল্লাহরই ইবাদত বা দাসত্ব করা।  #

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ