মার্চ ১৬, ২০২০ ২৩:২০ Asia/Dhaka

মুজিববর্ষে মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দের আবেদনের বিষয় নিয়ে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

তিনি বলেন,খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়াগুলোর যৌক্তিক ও সাংবিধানিক ভিত্তি থাকলেও বর্তমান ব্যক্তি সর্বস্ব পরিস্থিতিতে কিছু হবে বলে তিনি আশা করেন না।

সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। এটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ। 

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া

তিনি বলেন,খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়াগুলোর যৌক্তিক ও সাংবিধানিক ভিত্তি থাকলেও বর্তমান ব্যক্তি সর্বস্ব পরিস্থিতিতে কিছু হবে বলে তিনি আশা করেন না।

সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। এটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা কেরেছেন গাজী আবদুর রশীদ। 

রেডিও তেহরান: দণ্ড মওকুফ করে মুজিববর্ষে মানবিক কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন? 

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল: দেখুন, আমি একজন আইনজীবী হিসেবে বলব বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে আদালতে যেসব বিষয়গুলো তোলা হয়েছে তার আইনগত এবং ধারার প্রশ্নে সাংবিধানিক ভিত্তিগত যথেস্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু বিএনপির পরিচয়ে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার যে জায়গা ব্যক্তি স্বাধীনতা ছিল এখন সেটি ব্যক্তি সর্বস্বতায় পরিণত হয়েছে। ব্যক্তি ছাড়া কিছুই নেই, আমি ছাড়া এখানে অন্য কেউ কোনো বিষয় না! গত ১০/১১ বছর ধরে ব্যাপারটি এমন দাঁড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার মতো একজন মানুষ যিনি গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেন, যিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী; যিনি তার দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে স্বাধীনতার মূল চেতনার উপর বিশ্বাস রেখে রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতির সরকার থেকে গণতন্ত্র পদ্ধতির সরকারে উত্তরণ ঘটিয়েছেন আজকের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে। কিন্তু আজ ব্যক্তি সর্বস্বতার কাছে ব্যক্তি স্বাধীনতা ম্লান হয়ে গেছে। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

আইনের যে কথা আপনি বললেন বা আমরা যে প্রেয়ারগুলো সাবমিট করেছি অথবা কোনো সুবুদ্ধিসম্পন্ন আইনজীবী করেছেন তার প্রত্যেকটি সংবিধান স্বীকৃত এবং যেকোনো আইনের দ্বারা সমর্থিত। কিন্তু আমরা জানি এতে কিছু হবে না। কারণ ঐ যে বল্লাম এদেশে এখন ব্যক্তি সর্বস্বতা চলছে। আমিই সব; অন্য কারো ব্যাপারে কিছু বুঝতে চাই না বা বুঝবোও না।বর্তমান অবস্থাটা এরকম দাঁড়িয়েছে।

রেডিও তেহরান: মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বেগম জিয়ার মুক্তি চাওয়া কী বিএনপির নীতি-আদর্শের সঙ্গে মানানসই বলে মনে করেন আপনি?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল: দেখুন, ড. ইউনুছ আলী আখন্দ সাহেব কিন্তু বিএনপি করেন না। এই প্রেয়ারটা তিনি করেছেন। আমি নিজেও সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। আমি নিজেও ইউনুছ আলী আখন্দ সাহেবের সাথে এ প্রসঙ্গে কথা বলেছি। উনি বলেছেন, আমি তো বিএনপিও করি না অন্য কোনো রাজনৈতিক দলও করি না। তবে আমার মনে হয়েছে জাতীয় পর্যায়ে যার যার সম্মান বজায় রেখে একটা ভদ্র অনুকম্পা পাওয়ার চেষ্টা করতে পারি কি না! ওনার ভাষায় সেই ভদ্র অনুকম্পা পাওয়ার কথা ভেবেই আবেদনটি করেছেন। আর এটি কিন্তু আমাদের দলও বলে নি বা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকেও বলা হয় নি। সেক্ষেত্রে এটি হতেও পারে। শেখ মুজিব একজন বড়মাপের রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তিনি জীবিত থাকলে হয়তো এই রেফারেন্স টানাই লাগতো না। তিনি হয়তো মুক্ত করতেন। তিনি তো অনেককে সাধারণ ক্ষমা করেছেন। যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল না এমন অনেককে জেল থেকে বের করে এনেছেন। আর সেইসব কথা স্মরণ করেই হয়তো ড. ইউনুছ আলী আখন্দ সাহেব মুজিব বর্ষের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যে শেখ মুজিবের মতো মহানুভবতা হয়তো দেখাতে পারে বর্তমান নেতৃত্ব। বিজ্ঞ আইনজীবীর চিন্তাটা এমনই বলে মনে হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক  ওবায়দুল কাদের

রেডিও তেহরান: আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, দল বা পরিবারের আবেদনে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হবে না। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল: দেখুন, এসব কথার কারণেই তাদের মানসিকতার প্রশ্নটি আসে। আমি আগেও বলেছি এখানে শুধু আছে ‘ব্যক্তি’। আর সেইসব ব্যক্তিদের শাসনক্ষমতার দাপটে যদি চিন্তাভাবনা এরকম হয় যে, আমি ছাড়া আর কাউকে বুঝতে চাই না বুঝবোও না। সেক্ষেত্রে তো এরকমই উত্তর আসবে। 

কারণ দেখবেন কোথাও যদি কোনো ভালো উদাহরণ আইনের ক্ষেত্রে বা বিচারের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় তখন সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে বলা হয় শেখ হাসিনার সরকার দ্রুত বিচার করে দেখিয়ে দিয়েছেন দেশে আইনের শাসন আছে। আবার যখনই আইনের ক্ষেত্রে এরকম ব্যত্যয় দেখা যায় তখন এই ওবায়দুল কাদের সাহেবরা কিংবা আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা বলেন, এটা আদালতের ওপর নির্ভরশীল। তখন বিষয়টি হয়ে যায় আদালতের। আর একটু ভালো নমুনা থাকলে সে টি করেন ওনাদের নেত্রী; তার নাম ধরে বলে তাঁর সরকার। তো এইযে সুবিধামতো কথা বলা আর অসুবিধা দেখলে সেখান থেকে সরে আসা এটা আওয়ামী লীগের একটা বৈশিষ্ট্য। ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথায় সেটারই প্রতিধ্বনি হয়েছে।

রেডিও তেহরান:  খালেদা জিয়ার মুক্তির ক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষ থেকে যে আন্দোলন করা হয়েছে বা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা কী যথেষ্ঠ বলে মনে করেন? (উত্তরদাতা হ্যা/না যাই বলুন না কেন সম্পূরক প্রশ্ন থাকবে- ‘কেন’ মনে করেন?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল: না, আমি যথেস্ট বলে মনে করি না। এটা আমার ব্যক্তিগত মত। এই কারণে যথেস্ট বলে মনে করি না, যেখানে গণতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থানকারী কোনো শক্তি দীর্ঘদিন সাংবিধানিক অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানকে বোগোল ডাবা করে, কৌশল করে, মেশিনের সাহায্যে নির্ধরিত দিনের আগে একেক সময় এক এক করে ক্ষমতা দখল করে-তাদের কাছে ক্ষমতাটাই মূল। তাদের অবৈধ ক্ষমতার কাছে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উজ্জ্বলতা, তার পলিটিক্যাল গ্লামার।সুতরাং তার পলিটিক্যাল গ্লামার এই সরকার ফেরত দিতে বা সাধারণের কাছে বিলিয়ে দিতে কোনোরকম সহযোগিতা করবে এমনটি আমি মোটেও বিশ্বাস করি না। এর একমাত্র বিকল্প হচ্ছে আন্দোলন।#

পার্সটুডে/গাজী আবুদর রশীদ/১৬