রমজান: খোদাপ্রেমের বসন্ত (পর্ব-৮)
পবিত্র রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস ও আত্মশুদ্ধির মাস। পাপ-পঙ্কিলতার যেসব আবর্জনা আমাদের হৃদয়ে বা আত্মার মধ্যে জন্মেছে সেসবের জন্য ক্ষমা চাওয়া জরুরি।
ক্ষমা কিভাবে চাওয়া উচিত? ধরুন আপনার একান্ত আপনজন কিংবা পরিবারের সদস্য বা সন্তান মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েছে অথবা কোনো মহাসংকটে পড়েছেন এবং স্বাভাবিক নানা পন্থায় রোগ সারছে না বা সংকটের সমাধান হচ্ছে না, এ অবস্থায় আপনি যদি কাবা শরিফে যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন তখন আপনি নিশ্চয়ই খুব আন্তরিক চিত্তে ও ব্যাপক আশাবাদ নিয়েই ওই সংকট সমাধানের জন্য দোয়া করবেন। গোনাহ মাফের জন্যও ঠিক এমনই গভীর আকুলতা, আন্তরিকতা ও আশাবাদ নিয়ে তওবা করতে হবে। যে গোনাহ করা হয়েছে তা আর কখনও না করার জন্য দৃঢ়-সংকল্প হতে হবে। কিন্তু দেখা গেল ভুল করে বা ধোঁকায় পড়ে আবারও সেই একই গোনাহ করা হল। এভাবে শতবার তওবা ভাঙ্গার পরও তওবার দরজা খোলা থাকে। কিন্তু তওবা করার সময়ই এমন মনোভাব থাকা উচিত নয় যে এখন তওবা করছি ঠিকই, কিন্তু সুযোগ পেলে আবারও সেই পাপ করব! যে এমন অনুতাপহীন মনোভাব নিয়ে তওবা করে সে আসলে নিজেকেই উপহাস করে বলে হাদিস রয়েছে! আল্লাহর দরবারে এমন কপট মনোভাব নিয়ে তওবা করার মত লজ্জাহীন হওয়া কিভাবে সম্ভব?
যে ব্যক্তি কোনো গোনাহ করে না তারও ইস্তিগফার বা তওবা করা উচিত। বিশ্বনবী (সা) প্রতিদিন দৈনিক কয়েক শত বার অথবা অন্তত প্রায় শতবার তওবা করতেন। গিবত করা, অন্যের ক্ষতি করা, মিথ্যা কথা বলা বা কু-দৃষ্টি দেয়া- এ জাতীয় কোনো গোনাহ করেন না- সমাজে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। যিনি এ ধরনের নৈতিক বা বস্তুগত কোনো গোনাহ করেন না, তারও উচিত ইস্তিগফার করা। কারণ এ ধরনের মানুষও যখন চলাফেরা করেন তখন আশপাশের সাধারণ মানুষদেরকে দেখে তার মনে এমন ভাব আসতে পারে যে, এই মানুষগুলো কতই না গোনাহ করছে, কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমার মত মানুষেরা এসব পাপে মশগুল নই!- এভাবে অন্যদের ছোট ভাবাও হিংসা, লোভ ও পরনিন্দার মতই বড় পাপ ও তা মানুষকে নিচে নামিয়ে দেয়। তাই সবারই ইস্তিগফার করা জরুরি। ধরুন আপনার মধ্যে অহংকারের পাপও নেই। তাহলেও মনে করুন একত্ববাদসহ ইসলামী নানা জ্ঞান অর্জনে বেশি অগ্রসর হননি বলে বা এ ধরনের দুর্বলতাসহ নানা ত্রুটির জন্য তওবা বা ইস্তিগফার করা উচিত।

মহান আল্লাহর গুণ সম্পর্কিত জ্ঞান হল অসীম জ্ঞান। নবী-রাসুল এবং আল্লাহর ওলিরা এ পথেই অগ্রসর হচ্ছেন, নফস-কে পূর্ণতর করে চলেছেন ও আল্লাহর মহান গুণগুলো সম্পর্কে বেশি বেশি জানার চেষ্টা করছেন। তাঁরা এ পথে যতটা কম এগিয়েছেন তাও ত্রুটি বা আধ্যাত্মিক দুর্বলতা বলে তাঁদেরও ইস্তিগফার করা জরুরি। মহান নবী-রাসুল ও ইমামরা এ বিষয়ে অপূর্ণতার যে বেদনা পোষণ করতেন তা তাঁদের প্রাণস্পর্শী দোয়াগুলোতে ফুটে উঠেছে। অন্যদের বা সাধারণ মানুষদের শিক্ষা দেয়া এসব দোয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। খোদা প্রেমের সেইসব আকুতি ও বিরহের আগুনে জ্বলে-পুড়ে-মরার অবস্থাগুলো একান্তই তাঁদের নিজস্ব যার আসল উদ্দেশ্য বিনয় প্রকাশ। সহিফায়ে সাজ্জাদিয়াসহ তাঁদের নানা দোয়ায় আল্লাহর শাস্তির প্রতি যে তীব্র ভয়, আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের যে প্রবল ইচ্ছা- এসবই তাঁদের একান্তই নিজস্ব। পার্থিব বৈধ বিষয়গুলো ভোগের যে মাত্রাটুকু জরুরি ছিল তাও নবী-রাসুল এবং ওলিদের দৃষ্টিতে এক ধরনের অধঃপতন। তারা এই অপরিহার্য বস্তুগত চাহিদার বন্ধন থেকেও মুক্ত হতে চাইতেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁকে জানার পথে আরও বেশি এগুতো চাইতেন। কিন্তু সেভাবে এগুতে পারেননি বলে তারাও তওবা করতেন।
মুসলিম জাতিগুলোর বস্তুগত ও আত্মিক অধঃপতনের জন্য তাদের একদল নেতৃবৃন্দ দায়ী তেমনি এই জাতিগুলোর প্রত্যেক সদস্যও এ বিষয়ে নানা অবহেলার কারণে দায়ী। তাই সবারই উচিত তওবা করা। যারা নানা ফরজ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন এবং যারা ইবাদতে অতি উচ্চ বা মধ্য পর্যায়ে আছেন তাদের সবারই উচিত রমজানে তওবা কবুলের বিশেষ সুযোগ তথা মহা-ছাড় বা সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করা। পাপ করতে থাকার কারণে যেসব পর্দা আল্লাহর অনুগ্রহ আসার পথে বাধা হয়ে গেছে সেগুলো দূর করার জন্য সবারই তওবা করা উচিত যাতে মহান আল্লাহর দয়া, অনুগ্রহ ও করুণার সূর্য থেকে আমাদের অন্তরে ও প্রাণে খোদায়ি নানা নেয়ামত আর করুণার আলো অকাতরে ঝরে পড়ে। আমাদের সার্বিক উন্নতির জন্যই এটা জরুরি।
পবিত্র রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব মুহাম্মাদ মুনির হুসাইন খান বলেছেন:
বছরের শুরু মাহে রমযান:
হযরত আলী (আ.) বলেছেন: রমযান মাসের প্রথম দিন ( ১লা রমযান ) হচ্ছে বছরের প্রথম দিন ( অর্থাৎ বছরের শুরু )। রমযান মাসেই লাইলাতুল ক্বদরঃ

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/ ৮