মে ১১, ২০২০ ১৪:৩০ Asia/Dhaka

পবিত্র রমজানে আত্মশুদ্ধি প্রসঙ্গে অহংকার দমনের গুরুত্বের বিষয়ে কথা বলছিলাম আমরা। পবিত্র কুরআনে নমরুদ ও ফেরাউনের মত মহাঅহংকারীদের পরিণতি তুলে ধরা হয়েছে।

তারা শক্তি ও প্রাচুর্যের কারণে অহংকারী হয়ে মানুষের প্রভু হওয়ার দাবি করেছিল! অন্যদিকে কুরআনে দাউদ ও সুলায়মান নবীর প্রসঙ্গ এসেছে। তাঁদেরকে মহান আল্লাহ দিয়েছিলেন অলৌকিক জ্ঞান। হযরত সুলায়মানকে মহান আল্লাহ দিয়েছিলেন পাখিসহ অনেক প্রাণীর ভাষা বোঝার ক্ষমতা। জিন জাতিও ছিল তাঁর বশীভূত। জিনদেরকে দিয়ে অনেক অসাধারণ কাজ করিয়ে নিতেন তিনি। বাতাসও ছিল  সুলায়মান (আ)'র অনুগত। ফলে তিনি আকাশ পথে ভ্রমণ করতে পারতেন এবং যখনই যেখানে দ্রুত যাওয়ার দরকার হত উড়োজাহাজের চেয়েও দ্রুত গতিতে সেখানে পৌঁছে যেতেন!

নবুওত ও বাদশাহির অধিকারী সুলায়মান (আ)'র এত বিপুল সম্পদ ও শক্তি ছিল যে তা তাঁর আগের ও পরের কোনো বাদশাহর মধ্যে দেখা যায়নি।  অথচ এত কিছুর পরও তিনি ছিলেন মহান আল্লাহ'র প্রতি সব ক্ষেত্রেই অত্যন্ত বিনম্রচিত্ত ও নিবেদিত প্রাণ দাস হিসেবে পুরোপুরি আত্মসমর্পিত! দুনিয়ার  সম্পদ ও বিত্ত-বিভবের প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্রও আগ্রহ ছিল না। কারণ তিনি তাঁর অলৌকিক জ্ঞান ও সম্পদ আর বিশাল রাজ্যকে মহান আল্লাহর অশেষ করুণার দান বলে মনে করতেন।  অন্যদিকে কারুন বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়ে বলেছিল: এইসব সম্পদ ছিল তাঁর নিজের জ্ঞান ও সাধনারই ফসল। ফলে সে জাকাত দিতে অস্বীকার করে এবং পরিণতিতে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁর সব সম্পদ ও অহংকার!

হযরত সুলায়মান নবী রানী বিলকিসকে অহংকার মুক্ত করার জন্য ও তাঁকে এক আল্লাহর অনুগত করার জন্য প্রয়োগ করেছিলেন বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতা। ফলে বিলকিস দেখতে পায় যে তার সিংহাসন উঠিয়ে আনা হয়েছে সুলায়মানের প্রাসাদে। চোখের পলকে তা আনা হয় সুলায়মানের দরবারের এক সহযোগীর মাধ্যমে।

বিলকিস সুলায়মান নবীর সঙ্গে দেখা করতে আসবেন বলে কাঁচের এক প্রাসাদ এবং কাঁচের বারান্দা ও করিডোরও বানানো হয় খুবই স্বল্প সময়ে।রানী বিলকিস কাঁচের করিডোর দেখে ভেবেছিলেন তা পানির হৌজ। ফলে তা পেরোতে গিয়ে পায়ের কাপড় তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নবী সুলায়মান বলে দিলেন: ওটা পানি নয় কাঁচ! অর্থাৎ বুঝিয়ে দিলেন যে কাপড় তোলার দরকার নেই!  এভাবে বিলকিসের রাজত্ব ও সম্পদের অহংকার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় এবং সূর্য-পূজা ছেড়ে দিয়ে তওবা করে এক মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আনতে বাধ্য হন শক্তিশালী সাম্রাজ্যের অধিকারী রানী বিলকিস। এর আগে বিলকিস সুলায়মানের মন জয় করতে কিছু দামী উপহার পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু নবী ও সম্রাট সুলায়মান তা নিতে অস্বীকার করে বুঝিয়ে দিলেন যে তার সঙ্গে দ্বন্দ্বটা অর্থ-সম্পদের নয়, বরং দ্বন্দ্বটা ঈমান বনাম ঈমানহীনতার এবং একত্ববাদ বনাম শির্ক বা বহুত্ববাদের দ্বন্দ্ব!

 

পবিত্র কুরআনের সুরা নামল্‌-এ বলা হয়েছে: আমি অবশ্যই দাউদ ও সুলায়মানকে জ্ঞান দান করেছিলাম। তাঁরা বলেছিলেন, আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাদেরকে তাঁর অনেক মুমিন বান্দার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। সুলায়মান বলেছিলেন, ‘হে লোকেরা, আমাকে উড়ন্ত পাখিদের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সব কিছু দেয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব।

সুলায়মানের সশস্ত্র বাহিনীও ছিল অলৌকিক। এ প্রসঙ্গে সুরা নামল্‌-এ বলা হয়েছে:

সুলায়মানের সামনে তাঁর সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হল। জিন-মানুষ ও পক্ষীকুলকে, অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন সারিতে বিভক্ত করা হল। যখন তারা পিপড়া অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছল, তখন এক পিপড়া বলল, হে পিপড়ার দল, তোমরা তোমাদের ঘরে ঢোকো। তা না হলে সুলায়মান ও তাঁর বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষে ফেলবে। তার কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমাকে সামর্থ্য  দাও যাতে আমি তোমার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর।

এখানে এটা স্পষ্ট যে একটা তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র প্রাণী পিপড়ার নিন্দাসুচক কথায় রাগ করেননি মহাশক্তিধর হযরত সুলায়মান। বরং তিনি মুচকি হাসেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে বিনম্র চিত্তে কৃতজ্ঞ হওয়ার শক্তি চাইলেন খোদায়ি নেয়ামতের জন্য।  এতসব শক্তির অধিকারী হয়েও তিনি ছিলেন নিরহংকার এবং তাঁর সব শক্তির মূল উৎসের প্রতি কৃতজ্ঞ! সব নবী-রাসুলই ছিলেন এমনই কৃতজ্ঞ, সহিষ্ণু, নিরহংকার ও উদারতার অধিকারী!

মানুষের একগুঁয়েমি ও অহংকারের পেছনে সব সময় সক্রিয় থাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা। সে বলতে থাকে: তোমার তো আছে এতসব যোগ্যতা, এই এই শক্তি আর এত এত সম্পদ! তাই অন্যের কথা শুনে তুমি নিজেকে ছোট করতে যাবে কেন- তা তার কথা যতই ন্যায়নিষ্ঠ ও সত্য হোক না কেন!- মহান আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের এসব কুমন্ত্রণার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার শক্তি দিন।

পবিত্র রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব মুহাম্মাদ মুনির হুসাইন খান বলেছেন: 

ইমাম সাদিক ( আঃ ) বলেছেন: যে ব্যক্তির পাপ  রমযান মাসে ক্ষমা করা হয় নি আগামী রমযানের  আগমন পর্যন্ত তার গুনাহ মাফ করা হবে না । তবে যে ব্যক্তি আরাফাহর দিবস ( ৯ জিল হজ্জ ) পাবে কেবল সে ব্যতীত ( অর্থাৎ রমযান মাসে গুনাহ মাফের তৌফিক যে পায় নি সে যদি আরাফাহর দিবসে মহান আল্লাহ পাকের কাছে স্বীয় গুনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা  এবং ইবাদত- বন্দেগী করে কেবল তার গুনাহ মাফ করা হবে।)

এবারে আত্মশুদ্ধির সহায়ক দু'টি হাদিস শোনাব। বিশ্বনবী (সা) বলেছেন:

দুর্ভাগ্যের চি‎হ্ন চারটি : শুষ্ক চোখ তথা যে চোখ আল্লাহর ভয়ে ও মুমিনদের কষ্ট দেখে কাঁদে না, কঠিন অন্তর, উচ্চাভিলাষ, আর দুর্দশাগ্রস্ত হয়েও দুনিয়াকে ভালোবাসা।

যখন তোমার সামনেই তোমার প্রশংসা করা হয়, তখন বলবে: হে আল্লাহ্! তারা আমার সম্পর্কে যেমনটা ধারণা করে, আমাকে তার চেয়ে উত্তম করে দাও আর আমার সম্পর্কে যেগুলো জানে না সেগুলোকে ক্ষমা করে দাও, আর আমার সম্পর্কে যা বলে সে ব্যাপারে আমাকে পাকড়াও করো না।

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/ ১৭