সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০ ২০:০০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা বলেছি, নতুন নতুন প্রযুক্তি মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রমকে সহজতর করতের ভূমিকা রাখে। প্রযুক্তির সহযোগিতায় জীবনে আরও সুশৃঙ্খল করা সম্ভব। কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রযুক্তিরই ভালো-মন্দ দু'টি দিকই রয়েছে। ভার্চুয়াল জগত বা ইন্টারনেটও তেমনি একটি প্রযুক্তি যা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে জীবন আরও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। আবার উল্টো ঘটনাও ঘটতে পারে যদি আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন না হই।

আজকের আসরে আমরা পরিবারের সুখ-শান্তিতে ইন্টারনেটের নেতিবাচক কিছু প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব। আশাকরি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই আছেন।
ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই নিজের সঠিক পরিচয় গোপন করেন এবং নিজেকে বড় কোনো ব্যক্তি হিসেবে প্রকাশ করেন। গবেষকরা বলছেন, এ ধরনের কাজের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছেন। এটা ঠিক যে, অনলাইনে নিজের নানা তথ্য গোপন করে সহজেই নিজেকে বড় হিসেবে প্রকাশ করা যায় এবং এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগতের অনেকের কাছে সম্মানও পাওয়া যায়। কিন্তু এ ধরনের কাজ মানসিক চাপ ও বাড়তি উদ্বেগ তৈরি করে।  আর এই বাড়তি মানসিক চাপ ও উদ্বেগ, নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে। সামাজিকভাবেও সমস্যা তৈরি হতে পারে।  কিন্তু আমরা সাধারণত এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারি না। 

অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব তাসমানিয়ার গবেষক র‌্যাচেল গ্রিভ ও জারাহ ওয়াটকিনসন তাদের গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, ফেসবুকে নিজের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করা উচিত। এর ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং মানসিক চাপ কম থাকে। নিজের সঠিক পরিচয় প্রকাশ করা হলে আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়ে তেমন ইতিবাচক মানসিকতাও গড়ে ওঠে। এর মধ্যদিয়ে মানসিক শান্তিলাভ করা যায়। ওই দুই গবেষকের মতে, নিজের প্রকৃত অবস্থা পাল্টে ফেললে তা উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রশান্তি কমে যায়। এতে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিও তৈরি হয়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা নিজের পরিচয় গোপন রাখতে পারে বলে সহজেই যে কাউকে হুমকি দিতে পারে। ভুয়া সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য ধারণ করে বিভিন্ন অনলাইন সাইটে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো অপরাধ অনায়াসেই করতে পারে পরিচয় গোপনকারী অপরাধীরা। পরিচয় গোপন করার ফলে অপরাধপ্রবণতাও বাড়ে অনেকের মধ্যে। 
ইন্টারনেটের ভালো ও মন্দ দু'টি দিকই রয়েছে। তবে ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু-কিশোররা। আর এর প্রভাব পড়ছে গোটা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে। ইন্টারনেটের কিছু ধ্বংসাত্মক প্রভাব মানুষের জীবনশৈলীতে পরিবর্তন আনছে।  অনেক অভিভাবকই ইন্টারনেট সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ায় তারা বুঝতেও পারেন না পরিবারের সদস্যদের আচার-আচরণ, কথাবার্তায় আকস্মিক পরিবর্তনের উৎস কোথায়। ফলে এক ধরণের নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এ ধরণের নিয়ন্ত্রণহীনতা এখন দিনে দিনে বাড়ছে। শিক্ষার পরিবর্তে কখনো কখনো কুশিক্ষা গ্রহণ করছে। 

 

শিশু-কিশোরদের একটি প্রবণতা হলো নিজেকে প্রকাশ করা এবং অন্যকে অনুসরণ করা। আত্মপ্রকাশ ও অনুসরণের প্রবণতা তাদেরকে কৌতূহলপ্রিয় করে তুলে। কৌতূহলের বশে তারা নতুন কিছু জানতে চায়, শিখতে চায়। এ স্বতঃস্ফূর্ত আকাঙ্খাকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে হবে। আর তাহলেই ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যৎ জীবনে, কর্মক্ষেত্রে এবং সমাজে সফল মানুষ হতে পারবে। এর বিপরীতে শিশু-কিশোর বয়সে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ না করলে এবং পুরোপুরি তার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিলে  তারা নানাবিধ অন্যায়-অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ কারণে অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি। শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেটে কী করছে, কার সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলছে এ বিষয়ে মাতা-পিতা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে খোঁজ-খবর রাখতে হবে। 
বর্তমানে আমরা এমন অনেক পরিবারকে দেখছি যেসব পরিবারের সদস্যরা একে অপরের পাশে বসে থাকলেও তাদের মধ্যে কথাবার্তা ও মতবিনিময় খুব একট হয় না। এর ফলে পরিবারের ভিত্তি আরও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ইরানের মনোবিজ্ঞানী ডা. মেহদি দাবায়ি বলেছেন, ভার্চুয়াল জগতকে কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপরই নির্ভর করে এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি। এ কারণে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। পরিবারের অল্প বয়সী সদস্যদেরকে সঠিক পথ দেখাতে হবে, ভালো পরামর্শ দিতে হবে।  শিশুরাই হচ্ছে গোটা বিশ্বের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। আর তারাই যদি ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে বিপথে পরিচালিত হয়, তবে তা গোটা বিশ্বকেই গভীর অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবে। আসলে কোনো মানুষই অপরাধী হয়ে জন্মায় না। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে মানুষের আবেগও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ অবস্থায় ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না করলে মাতা-পিতা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের অজান্তেই তারা ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হতে পারে।

প্রতিটি ধর্মের মানুষই একটি নিজস্ব প্রথা ও সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত। কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগত এসব প্রথা বা সংস্কৃতিকে উলটেপালটে দিচ্ছে। ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা ইহকালের পাশাপাশি পরকালীন জীবনে বিশ্বাস করেন। আধ্যাত্মিকতা তাদের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে। মুসলমানেরা বিশ্বাস করেন, প্রতিটি কাজের জন্য পরকালে জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশ্চাত্যের ধর্মহীন সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার ছাপ সুস্পষ্ট। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর প্রভাবে এখন অনেক অপসংস্কৃতি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। যেমন বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের মতো নানা পশ্চিমা আচার-আচরণ 
অনেক পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে চরম অস্থিরতার জন্ম দিচ্ছে। অনেকে সুখের সংসার চিরদিনের জন্য অশান্তির আধারে পরিণত হচ্ছে। জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে ইন্টারনেট বা ভাচুর্য়াল জগতে বিচরণের ক্ষেত্রে সবাইকে আরও সতর্ক হতে হবে। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ