সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০ ২০:১০ Asia/Dhaka

গত আসর পর্যন্ত আমরা ইরানে মেডিক্যাল ট্যুরিজমের উন্নয়ন ও সুযোগ সুবিধাগুলো নিয়ে কথা বলেছিলাম। এই প্রসঙ্গে বলেছি যে শিরাজের বিভিন্ন হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল সেন্টারে উন্নতমানের চিকিৎসা নিয়ে থাকেন ইরানি এবং বিদেশি রোগীরা।

আরও বলেছি যেহেতু শিরাজকে সবসময়ই দক্ষিণ এবং মধ্য প্রাচ্যের চিকিত্সার প্রধান কেন্দ্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে,তাই বিশ্বের সর্বাধিক উন্নত সুযোগ সুবিধায় সুসজ্জিত একটি স্বাস্থ্য গ্রাম তৈরি করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এখানে। ৮০০ হেক্টর জায়গাজুড়ে নির্মিতব্য ওই স্বাস্থ্য গ্রামে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এই হেলথ ভিলেজ বা স্বাস্থ্য গ্রামে হাসপাতালসহ হোটেল,বিশ্রামাগার, ক্লিনিক,মেডিক্যাল সেন্টার,আবাসিক এলাকা যেমন থাকবে তেমনি থাকবে বৃদ্ধ পুনর্বাসন কেন্দ্র,পক্ষাঘাতগ্রস্ত,দুস্থদের জন্যও চিকিৎসার ব্যবস্থা। কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং এই রোগের কারণে সৃষ্ট অন্যান্য রোগ বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের কাছে একটি মারাত্মক সমস্যা।  এইসব রোগেরও উন্নতমানের চিকিৎসা দেওয়া হয় শিরাজে। যাই হোক আজ আমরা কথা বলার চেষ্টা করবো কৃষি খাতে ইরানের বৈপ্লবিক উন্নয়ন ও বিকাশ নিয়ে।

জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য বিষয়ক বিশ্ব সংস্থা ফাও-য়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইরান কৃষিপণ্য উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম দেশগুলোর একটি। ইরান নিজেদের খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর খাদ্যপণ্যের চাহিদাও মিটিয়ে থাকে। বিশ্বের যেসব দেশ নিজেদের মৌলিক কৃষিপণ্যের চাহিদার এক তৃতীয়াংশ উৎপাদন করে সেসব দেশের তালিকায় ইরানের অবস্থান শীর্ষস্থানীয়।খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কৃষিখাতের উন্নয়ন ঘটানো সবসময়ই যে-কোনো দেশের সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্বেগের একটি বিষয়।কৃষি খাত দেশগুলোর অর্থনীতির কৌশলগত একটি বিভাগ হিসেবে পরিগণিত হয়। যখন বিশ্বের বর্ধমান জনসংখ্যার বিষয়টিকে বিবেচনায় নেওয়া হয় তখন এই কৃষি বিভাগে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফাও-য়ের গবেষণামতে আগামি চার দশকে বিশ্বের জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে নয় শ' কোটি-তে। এদিকে বিশ্বব্যাপী কৃষিকাজের জন্য মৌলিক প্রয়োজনীয় দুটি জিনিস-ভূমি এবং পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ প্রতিবছরই হ্রাস পাচ্ছে। এই সমস্যার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ও গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের মতো বিষয়গুলোও কৃষিক্ষেত্রের উৎপাদনের পরিস্থিতিকে বছরের পর বছর কঠিন থেকে কঠিনতরো করে তুলছে। তদুপরি,বৈশ্বিক পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে যে গ্রামীণ জনসংখ্যার পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রামীণ জনসংখ্যা হ্রাসের হার বেশ উল্লেখযোগ্য।সারা বিশ্বেই গ্রামীণ জনসংখ্যা হ্রাসের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।গ্রামীণ জনসংখ্যা হ্রাসের নেতিবাচক প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনেক বেশি।

বলছিলাম গ্রামীণ জনসংখ্যা হ্রাসের নেতিবাচক প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনেক বেশি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেশিরভাগ মানুষই গ্রামে বসবাস করে। এসব দেশে সামাজিক দিক থেকে এবং জীবিকা নির্বাহের দিক থেকে  কৃষিকাজকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। অপরদিকে উন্নত দেশগুলোতে কৃষিকাজকে একটি অর্থিনৈতিক দক্ষতা ও উৎপাদনশীল খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানুষ তার সমগ্র জীবনেতিহাসে উত্পাদনশীল কাজে সবচেয়ে বেশি যে কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে তা হলো কৃষিকাজ। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান।  সুতরাং এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি খাদ্য সরবরাহ এবং খাদ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনীয় খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য আমদানির প্রয়োজণীয়তা রয়েছে। এই আমদানির জন্য প্রয়োজন বিচিত্র কৃষিপণ্য রফতানি করা।

সে কারণে কৃষিশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ এবং এ সম্পর্কিত উত্পাদন কার্যক্রমের বিকাশ ঘটানো কৃষি খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বলা বাহুল্য যে, কৃষি পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানির প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাবার পাশাপাশি দেশগুলির বাণিজ্যিক ভারসাম্যকেও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। অপরদিকে শিল্প খাতে তুলনামূলকভাবে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তাও হ্রাস পায়। কৃষি খাতের গুরুত্বের কারণে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই বিভাগ যে-কোনো দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও বিকাশের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই লক্ষ্য করা যায় যে কৃষিক্ষেত্র অনেক দেশেই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান করে নিয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফাও-য়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের কৃষি উৎপাদনের মৌলিক কাঠামোটি দাঁড়িয়ে আছে ছেষট্টিটি কৃষিপণ্যের ওপর। এগুলোর মধ্যে একচল্লিশটি পণ্য কৃষিজ আর পঁচিশটি হলো খামারি। এর মানে এই নয় যে সারা পৃথিবীতে শুধু ওই ছেষট্টি কৃষিপণ্যই উৎপাদিত হয়। বরং এর মানে এই পরিমাণ কৃষিপণ্যকে বিশ্ব কৃষি উৎপাদনের কাঠামোর মৌলিক পণ্য হিসেবে মনে করা হয়। বিশ্ব বাণিজ্যের ব্যাপারে বলা যায় আমদানি এবং রপ্তানি করা হয়-এমন পণ্যের পরিমাণ মাত্র পঁয়ত্রিশটি। সারাবিশ্বে মাত্র চৌষট্টিটি দেশ কৃষিপণ্য রপ্তানি করে আর পঞ্চান্নটি দেশ বাগানে উৎপন্ন পণ্য রপ্তানি করে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ কৃষিপণ্য উৎপাদনে সক্রিয় রয়েছে।

ইরানও এই কৃষিপণ্য উৎপাদনে সক্রিয় দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত। ইরানে কৃষি খাতকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।সমগ্র ইরানের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ভূমি কৃষিকাজের উপযোগী। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফাও-য়ের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটা প্রমাণিত যে ইরান বিশ্বে কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে ইরান পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। প্রকৃতপক্ষে ইরান মৌলিক কৃষিপণ্যের চাহিদার এক তৃতীয়াংশ উৎপাদন করে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ