সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০ ১৮:১০ Asia/Dhaka

জীবনযাপনের ইসলামি পদ্ধতি ও দিক নির্দেশনা বিষয়ক ধারাবাহিক অনুষ্ঠান “আদর্শ জীবনযাপনের" আজকের আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। বিষয়টি হলো আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব পরিহার করে অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ ভিত্তিক কাজ করা। জীবনযাপনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক এই আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে আসা।

সমস্যাহীন কোনো মানুষ আছে কিনা জানা নেই। জীবনে সমস্যা থাকবেই। তবে তার সমাধানও যে নেই তা নয়। আমরা সাধারণত সমাধানের দ্রুত ও সাময়িক উপায় নিয়ে বেশি ভাবি। সুদূরপ্রসারী এবং সঠিক সমাধানের উপায় নিয়ে ভাবি না। আবার অন্যদের সঙ্গেও পরামর্শ করার প্রয়োজন মনে করি না। অথচ যে-কোনো সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে বিভিন্ন রকমের মতামত, চিন্তা বা পরামর্শ পাওয়া গেলে সমাধানের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে ভালো সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। সুতরাং সমস্যা সমাধানে সাফল্যে পৌঁছার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। শুধু তাই নয় পরামর্শ করার ফলে অভিজ্ঞ ও চিন্তাশীলদের চিন্তাকেও কাজে লাগানোর একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর অভিজ্ঞদের চিন্তার প্রভাবে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাও গভীর হয়, সমৃদ্ধ হয়।

নবী করিম (সা) এমন মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন যে, তাঁর ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি অবতীর্ণ হতো। তিনি ছিলেন নিষ্পাপ চরিত্রের অধিকারী বুদ্ধিমত্তায় পরিপূর্ণ এক সত্ত্বা। তারপরও তিনি সবসময় শুধুমাত্র শরয়ি বিষয় ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন এবং সর্বোত্তম পথ বা উপায় খুঁজে বের করতেন। এসব করার কারণ হলো মানুষ যেন নিজ জীবনে সবচেয়ে ভালো ও উন্নত পন্থা অবলম্বন করে উপকৃত হতে পারে এবং আত্মকেন্দ্রিক স্বৈরাচারী মনোভাব থেকে বেরিয়ে এসে নৈতিক অধঃপতন থেকে বাঁচতে অহমিকার ভয়াবহ ফাঁদ পরিহার করতে পারে।

 

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে রাসুলে কারিম (সা) এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি যেন কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে মুমিনদের সঙ্গে পরামর্শ ও মত বিনিময় করেন। পবিত্র কুরআনের সূরা আল-ইমরানের ১৫৯ নম্বর আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে: 'দ্বীনের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শে মুমিনদেরকে অন্তর্ভুক্ত করো। তারপর যখন কোন মতের ভিত্তিতে তোমরা স্থির সংকল্প হবে তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো। আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন যারা তাঁর ওপর ভরসা করে কাজ করে'।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহর বিশিষ্ট বান্দাদের একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি কাজে লাগানোর কথা বলা হয়েছে। সূরা শুরার ৩৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: 'মুমিন তারাই যারা তাদের রবের নির্দেশ মেনে চলে,নামায কায়েম করে এবং নিজেদের সব কাজ পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে চালায়,আমি তাদের যা রিযিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করে'।

কুরআনের সংস্কৃতি অনুসারে মানুষ যতই জ্ঞানী বা অভিজ্ঞ হোক না কেন অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রয়োজন নেই-একথা বলা যাবে না। কারণ অন্যদের চিন্তা-চেতনার আলোও মানুষের পথকে আলোকিত করে। মনোবিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন অন্যদের সমর্থন ও অনুমোদন আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একইভাবে আত্মসম্মানের মাত্রা যেমন বেড়ে যায় তেমনি ব্যক্তির মাঝেও কার্যকর অনুভূতি বৃদ্ধি পায়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়ও দেখা যায় যখনই আমরা অন্যদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে কোনো কাজ করতে চাই তখন আমাদের মনে এই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় যে ওই কাজে সফল হবো।

এদিক থেকে বিচার করলে সেই ব্যক্তি শক্তিশালী নয় যে ব্যক্তিগতভাবে অনেক শক্তি ও সামর্থ্যের অধিকারী। বরং শক্তিমান সে-ই যে অন্যদের শক্তি সামর্থ্যকে কাজে লাগাতে পারে। সমস্যা সমাধান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ লোক তিনিই যিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি ধাপে যথাযথ পরামর্শের ভিত্তিতে অগ্রসর হন। তারাই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। সকল কাজই সঠিকভাবে আঞ্জাম দেয়ার ক্ষেত্রে সমচিন্তা গুরুত্বের কারণে পরিবারের মতো ছোট্ট পরিসরেও বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তার মানে হলো নিজের পরিবারেও পরামর্শের ভিত্তিতে সকল কাজ করার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। এ নিয়ে আমরা কুরআনের বক্তব্য শুনবো খানিক বিরতির পর।

পরিবারের মতো ছোট্ট পরিসরেও পরামর্শের ভিত্তিতে সকল কাজ করার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে-এ বিষয়ে আমরা কথা বলছিলাম। পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ২৩৩ নম্বর আয়াতে সন্তানের দুধ পানের সময়কাল নির্ধারণের ব্যাপারে বাবা-মায়ের মধ্যে পারস্পরিক পরামর্শের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ আয়াতের মাঝামাঝিতে বলা হয়েছে:  কোনো মা’কে এ জন্য কষ্ট দেয়া যাবে না যে সন্তানটি তার। আবার কোন বাপকেও এ জন্য কষ্ট দেয়া যাবে না যে,এটি তারই সন্তান। দুধ দানকারিণীর এ অধিকার যেমন সন্তানের পিতার ওপর আছে তেমনি আছে তার ওয়ারিশের ওপরও। কিন্তু যদি উভয় পক্ষ পারস্পারিক সম্মতি ও পরামর্শক্রমে দুধ ছাড়াতে চায়,তাহলে এমনটি করায় কোন ক্ষতি নেই'।

তবে পরামর্শ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কার সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত আর কার সঙ্গে উচিত নয় সে বিষয়ে জানাটাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো যাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা নেই কিংবা যাদের ওপর নির্ভর করা যায় না মানে ফাঁস করে দেওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়, তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা ঠিক নয়। আবার যাদের দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা বিপজ্জনক। কেননা এ ধরনের লোক পরামর্শের আদলে তার কুদৃষ্টি সম্পন্ন চিন্তা বা বুদ্ধিই আপনাকে দেবে। যারা নিজেদের জীবনে বড় বড় ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে সফল হয়েছে তারা দূরদৃষ্টিবান এবং বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। তারা আপনাকে সুন্দর পরামর্শ দিয়ে পথ দেখানোর যোগ্যতা রাখে। আল্লাহ আমাদেরকে এই আলোচনা থেকে শিক্ষা নেয়ার ইতিবাচক মানসিকতা দান করুন এ প্রত্যাশায় গুটিয়ে নিচ্ছি আজকের আসর।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো:আবুসাঈদ/ ২৭

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন

ট্যাগ