সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০ ১৯:৩০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা কৃষি খাতে ইরানের বৈপ্লবিক উন্নয়ন ও বিকাশ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলাম। সারাবিশ্বে মাত্র চৌষট্টিটি দেশ কৃষিপণ্য রপ্তানি করে আর পঞ্চান্নটি দেশ বাগানে উৎপন্ন পণ্য রপ্তানি করে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ কৃষিপণ্য উৎপাদনে সক্রিয় রয়েছে।

ইরানও এই কৃষিপণ্য উৎপাদনে সক্রিয় দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত। ইরানে কৃষি খাতকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। সমগ্র ইরানের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ভূমি কৃষিকাজের উপযোগী। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফাও-য়ের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটা প্রমাণিত যে ইরান বিশ্বে কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে ইরান পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। প্রকৃতপক্ষে ইরান মৌলিক কৃষিপণ্যের চাহিদার এক তৃতীয়াংশ উৎপাদন করে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইরান কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অন্তত বিশটি পণ্য উৎপাদন করে বিশ্বের শীর্ষ সাতটি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।

বাগ-বাগিচাতেও যেসব কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয় ইরানে সেখানেও রয়েছে ব্যাপক বৈচিত্র্য। বাগিচার অন্তত পণরটি মৌলিক পণ্য উৎপাদন করে ইরান বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। একইভাবে অন্তত দশটি কৃষিপণ্য রপ্তানি করার মধ্য দিয়ে ইরান বিশ্বের প্রথম দশটি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। ইরানের রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে পশুপাখি, বাগিচার পণ্য এবং ক্ষেত-খামারে উৎপন্ন পণ্য। এসব পণ্য ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আফগানিস্তান, রাশিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান, স্পেন, চীন, হংকং, ভারত এবং কাজাখিস্তানসহ আরও বহু দেশের বাজারে রপ্তানি হয়। ইরানের কৃষিপণ্যের দিকে একটু নজর দিলে দেখবো জাফরান এবং পেস্তার মতো ব্র্যান্ড স্থানীয় পণ্যের পর দ্বিতীয় প্রধান কৃষিপণ্যের মধ্যে পড়ে খোরমা এবং জার্দালু। তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে বাদাম, চেরি, শসা এবং তরমুজ। বিশ্বব্যাপী ইরানের এই পণ্যগুলো প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

উনত্রিশটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য উৎপাদন করার মধ্য দিয়ে ইরান বিশ্বের প্রথম বিশটি দেশের মধ্যে অবস্থান করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আপেল, বেহ বা কুইন্স ফল, আখরোট ফল, ডুমুর, পিস ফল, লেবু, পেঁয়াজ, টমেটো, হ্যাজেলনাট, মালটা,  অ্যাপ্রিকট বা খুবানি ফল, কিভি, মধু, চা, বেগুণ, আলু, যব এবং বিভিন্ন রকমের সয়া। ইরানের খোরমাও ভারতের মতো দেশগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয়। এসব দেশে প্রচুর পরিমাণ খোরমা রপ্তানি করা হয় ইরান থেকে। খরবুজাও ইরানের একটি বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম পণ্য। বিশেষ করে পাশ্ববর্তী দেশ ইরাকে প্রচুর পরিমাণ খরবুজা রপ্তানি হয় ইরান থেকে। এরকম বিদেশি মুদ্রা আয় করার মতো আরেকটি কৃষিপণ্য হলো কফি। সাদা কফি এবং লাল কফি দুটোই ব্যাপক হারে রপ্তানি হয় ইরান থেকে। ইরানের আনারও বিশ্বের কতিপয় দেশে রপ্তানি হয়। এসব দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। তারা ইরান থেকে আনার কিনে নিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কনসেন্ট্রেইট করে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে।

বলছিলাম বিচিত্র কৃষিপণ্য উৎপাদনের দিক থেকে ইরানের অবস্থানের কথা। বিশেষ করে বেশ কিছু কৃষিপণ্য ইরান থেকে রপ্তানি হয় দেশের বাইরে। সেগুলোর মধ্য থেকে কিছু কিছু পণ্যের কথা বলেছি। কৃষিপণ্য ধান বা চাল, সূর্যমুখি ফুলের বিচি, গোশত এবং দুধের মতো পণ্যসামগ্রীও ব্যাপক উৎপাদিত হয় ইরানে। ইরান এইসব পণ্য উৎপাদনের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে এই পণ্যগুলো উৎপাদন করে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপ্রধান দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ইরান। বিশ্ববাজারে আজকাল কোনো একটি দেশের কৃষিপণ্য বাজারজাত করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার প্রয়োজন পড়ে। এই মান বজায় রাখার বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং বিচিত্র। বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক ঝুঁকির পাশাপাশি আঞ্চলিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা থেকে শুরু করে মাথাপিছু আয়, জনসংখ্যা এবং বাজারের উন্নয়ন সবকিছুই যাচাই করে দেখা হয়।

বর্তমানে বাণিজ্য বিশ্বে সেই দেশই রপ্তানি ক্ষেত্রে সফল যে দেশ আমদানিকারক দেশের বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়মনীতি সম্পর্কে সচেতন, আরও যারা সে দেশে পণ্য রপ্তানি করে সেই প্রতিযোগীদের ব্যাপারে খোজ খবর রাখে, মূল্য সম্পর্কেও জানে এবং সেইসঙ্গে পণ্যের প্রচার, প্রসারের ক্ষেত্রেও যারা অগ্রগামী। আমদানিকারক দেশের বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, ভৌগোলিক দূরত্ব এবং ট্রান্সপোর্ট ব্যয়ের পাশাপাশি সেদেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অভিন্নতার বিষয়টি রপ্তানিকারক দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা এসব বিষয়ে সচেতনতা থাকলে কৃষিপণ্যসহ আরও বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশে সহজেই প্রভাব বিস্তার করতে পারা যায়। পণ্যের বাজার আকৃষ্ট করা এবং বাজারে পণ্যের প্রবেশ করানোর সরাসরি একটি পথ হলো বিশেষ বিশেষ বাণিজ্য মেলার আয়োজন ও অংশগ্রহণ করা। বিশ্বে এই মেলার আয়োজনের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে থেকে এরকম মেলার আয়োজন হয়ে আসছে।

তবে তখনকার দিনের মেলার ধরন বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আয়োজিত বাণিজ্য মেলার মতো ছিল না। এখন যেরকম মেলার আয়োজন হয় তার ইতিহাস খ্রিষ্টিয় উনবিংশ শতকের মাঝামাঝিতে শিল্পোন্নত দেশগুলোতে শুরু হয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে বিশ্বের দেশে দেশে চালু হয়েছে। ইরান এখন মেলা আয়োজনের দিক থেকে ব্যাপক সুশৃঙ্খল এবং অগ্রগামী। ইরানে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হয় বছরজুড়ে। মেলার স্থায়ী স্থল ও স্থাপনাও রয়েছে অনেকগুলো। বিশেষ করে বাগ-বাগিচা ও কৃষিপণ্য এবং অর্গানিক পণ্যের ক্ষেত্রে রয়েছে ইরান গ্রিন ট্রেড ফেয়ার নামে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্থায়ী মেলা। রয়েছে আই ফার্ম নামেও আরেকটি কৃষি ও গবাদি পশু খামার বিষয়ক মেলা। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ