করোনাকালে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তকে অব্যবস্থাপনা বললেন আবুল মকসুদ
করোনাকালে শিক্ষাক্ষেত্রে যেসব সিদ্ধান্ত দেয়া হচ্ছে তা গবেষণার ফল বলে মনে হয় না। আমি বলব এসব নির্দেশনা শিক্ষা ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা। আর এসব সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জীবনে ভালো ফল বয়ে আনবে না। রেডিও তেহরানকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ।
তিনি আরও বলেন, করোনা নিয়ে সরকারের কর্মকাণ্ডে মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না।
পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। এটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।
রেডিও তেহরান: জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে না এবং এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির মেয়াদ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে বলা চলে গণপরিবহন পূর্ণমাত্রায় চালু করা হয়েছে। কীভাবে দেখছেন বিষয়টিকে?
সৈয়দ আবুল মকসুদ: দেখুন, বলা চলে প্রায় মাস তিনেক পর আজই রাস্তায় বেরিয়েছিলাম। দেখলাম যে গণপরিবহন একেবারেই স্বাভাবিক এবং শুধু ঢাকায় না ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা। শুধু তাই নয় জায়গায় জায়গায় যানজটও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সুতরাং বলতে গেলে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক।

শুধুমাত্র স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। এই যে দুই শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে তা যথেষ্ট গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত নয়। আমরা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বলেছি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের পরামর্শ নিয়ে এবং অতীতে যারা শিক্ষামন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের অনেকে শিক্ষাবিদ নন কিন্তু ধরুন-সচিব ছিলেন অথবা যুগ্ম সচিব ছিলেন অর্থাৎ যারা অভিজ্ঞ তাদের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে। তবে সেই কাজটি তারা না করে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অথবা তাদের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা নিজেরাই মাঝে মাঝে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন।
আমি বলব শিক্ষা-ক্ষেত্রে এই যে অবস্থাপনা হচ্ছে তার ফলে শিক্ষার্থীদের জীবনে এর পরিণতি কি হতে পারে সে বিষয়টি নিয়ে আমার শিক্ষামন্ত্রণালয় কোনো রকমের গবেষণা করেছে বলে মনে হয় না। যার ফলে একেক সময় একেক নির্দেশ জারি করছে। এই একটি বছর শিক্ষার্থীদের জীবনে যে অভিঘাত সৃষ্টি করল এবং ভবিষ্যতে কি বিরুপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে সে বিষয়ে যথেষ্ট গবেষণা না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিচ্ছে। এরফলে আমার মনে হয় না যে তা শিক্ষার্থীদের জীবনে কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে।
রেডিও তেহরান: দেশে করোনাভাইরাস মোকাবেলার ক্ষেত্রে সফলতা দাবি করা হচ্ছে। এই দাবিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
সৈয়দ আবুল মকসুদ: দেখুন, বিষয়টি তো সফলতা আর ব্যর্থতার নয়। যদি আরও বেশি মানুষ করোনায় মারা যেত কিংবা আরও বেশি মানুষ যদি সংক্রমিত হতো তাহলেও আমি বলতাম না যে সরকার ব্যর্থ। সরকার ব্যর্থ নয় সফল; একথাটি সরকার নিজে বলছে কিন্তু আমরা সাধারণ নাগরিকদের পক্ষ থেকে বলতে গেলে আমরা সরকারকে ব্যর্থও বলছি নে আবার সফলও বলছি নে। আমরা যেটা বলতে চাইছি সেটি হচ্ছে- করোনার সত্যিকারের চিত্রটা যেন মানুষ জানতে পারে।

এই সফলতা কিংবা ব্যর্থতা দাবি করাটা এখন অত্যন্ত অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে করি। বিষয়টি হচ্ছে মানুষ যথাযথভাবে চিকিৎসা পাচ্ছে কি না। হাসপাতালগুলোতে মানুষ যেতে চাইছে না কেন? করোনার মৃত্যু ও আক্রান্তের যে সংখ্যা সরকার বলছে সেটি হয়তো একেবারে সঠিক তারপরও কেন মানুষ সন্দেহ করছে যে সরকারের বলা সংখ্যাটি ঠিক নয়! স্বাস্থ্যের সঙ্গে যারা জড়িত বিশেষ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর –তারা করোনা মহামারিকালে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে কি না জনগণ সেটি দেখতে চায়।
রেডিও তেহরান: বাংলাদেশকে করোনার টিকা সরবরাহ নিয়ে ভারত ও চীন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। এটি কী বাংলাদেশের কূটনীতির সফলতা নাকি বাংলাদেশকে নিয়ে অহেতুক টানাটানি চলছে দু দেশের মধ্যে? অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, টিকা বের হলে যেখান থেকেই হোক বা যত টাকা লাগুক টিকা আনা হবে। তো আপনি এ বিষয়ে কি বলবেন?

সৈয়দ আবুল মকসুদ: সবশেষ যেকথাটি বললেন যে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যেখান থেকেই হোক যদি টিকা আবিষ্কার হয় তাহলে বাংলাদেশ নিয়ে আসবে। এটিই হলো মূল কথা। কিন্তু তার আগে যেসব কথাবার্তা হচ্ছে যে চীন থেকে আনা হবে, নাকি রাশিয়া থেকে নাকি ভারত থেকে আনা হবে এ বিষয়গুলো কোনো অর্থ বহন করে না। এসব কথার ফল কি তাও আমরা জানি না। কিন্তু আমাদের মিডিয়ায় লেখালেখি হচ্ছে, মন্ত্রীরা অনবরত কথা বলছেন এতে বরং মানুষের মধ্যে একটা আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ মনে করছে আসলে সরকার কি করে না করে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। অর্থাৎ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার যে বিষয়টি যাতে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি হয়ে সেই ধরণের কাজ মানুষ খুব একটা লক্ষ্য করছে না। আমার কথা হচ্ছে- যাতে করে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ে সেই কাজটাই করা উচিত। সরকারের মন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের কথাবার্তার ভেতরে মানুষ ঠিক ভরসা পাচ্ছে না।
রেডিও তেহরান: ভারতে রেকর্ড সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে এবং অব্যাহত রয়েছে। অনেকে বলছেন, বাংলাদেশকে এখন আরো বেশি সতর্ক হতে হব। আসলে বাংলাদেশ এখানে কী করতে পারে?
সৈয়দ আবুল মকসুদ: দেখুন, এটা সরকার বাড়াবে না বা কিংবা কমাবেও না। হয়ে যাবে অথবা ঘটবে। যাতে সংক্রমণ কম ঘটে এবং মৃত্যুর হার যাতে শূন্যের কোটায় থাকে সেটাই মানুষের প্রত্যাশা। আমাদের সরকার এখনও পর্যন্ত সেটা নিশ্চিত করতে পারে নি। কারণ ৪০, ৪২,৪৩, ৩৭ কিংবা ৫২ করোনায় মুত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন এরমধ্যেই আছে। সেটা আগেও ছিল এখনও আছে। এই অবস্থাটা একইরকম কেন রয়েছে সেটি সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যে ধরনের পদক্ষেপ জনগণ আশা করে সেই ধরণের পদক্ষেপ তারা নিতে পারেন নি। তারা তাদের রুটিন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। হাসপাতাল থেকে তথ্য পাচ্ছেন তাই বলছেন। দেখুন, করোনার শুরু থেকেই টেস্টের কথা বলা হয়েছে। এক শ্রেণির মানুষ টেস্ট করতে যান না। কেন মানুষ টেস্ট করাতে যান না তারও একটা গবেষণা হওয়া দরকার। পাশাপাশি মৃত্যু কিংবা আক্রান্ত প্রায় সংখ্যার দিক থেকে একইরকম রয়েছে। কেন একই রকম রয়েছে তা নিয়ে তো সরকারকে চিন্তাভাবনা করতে হবে। আমার মনে হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এইসব কাজগুলো যথেস্ট গুরুত্ব করছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করে না।
রেডিও তেহরান: তো জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে এর প্রভাব নিয়ে রেডিও তেহরানের সঙ্গে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সৈয়দ আবুল মকসুদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।