অক্টোবর ১৯, ২০২০ ১৬:৫০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা ইরানের কৃষিপণ্যের মধ্যে আনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে বলেছিলাম। বিশেষ করে ডালিম গাছের ফুল সম্পর্কে বলেছিলাম যে সাধারণত ডালিমের রঙের মতোই দেখতে এই গাছের ফুল।

তবে লাল রঙ ছাড়াও আরও দুই রঙের ফুল দেখতে পাওয়া যায়। গোলাপি রঙ এবং কমলা রঙ। গাছে ফুলগুলোকে দুইভাবে দেখতে পাওয়া যায়। কখনো একেবারে পৃথক পৃথকভাবে একটা একটা ফুল আবার কখনো বেশ কয়েকটি ফুল একসাথে।

আবার আনারের স্বাদেও রয়েছে বৈচিত্র্য। হালকা টক, হালকা মিষ্টি মেশানো টক এই দুই স্বাদের আনার রয়েছে। ডালিম ফল কৃষি খাতের অন্যতম উদ্যানজাত একটি পণ্য। ডালিমের ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে যে, এই ফলটি ইরানে অন্তত চার হাজার বছর আগে থেকে চাষ হয়ে আসছে। গবেষকদের বিশেষ করে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের বেশিরভাগই মনে করেন ডালিম গাছের আদি নিবাস হলো ইরান। ইরানে এখন বছরে এক মিলিয়ন মানে দশ লাখ টন আনার উৎপাদিত হয়। উৎপাদনের পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে ইরান প্রথম স্থানে রয়েছে। রপ্তানিও হয় সারা বিশ্বে। ইরানের বিভিন্ন প্রদেশে সাত শ'রও বেশি প্রকারের আনার উৎপাদিত হয়। যেসব দেশে ইরানের আনার রপ্তানি করা হয় সেসব দেশের সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা তুলে ধরা অসমীচীন হবে না। ইরানের আনার হল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যঅন্ড, সুইডেন, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরাক এবং পারস্য উপসাগরীয় দেশ কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের আরও বহু দেশে রপ্তানি হচ্ছে। আনারের পর আজ আমরা বাগিচাপণ্য আঙুর নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো। আঙুর একটি রসালো এবং সুস্বাদু ফল। এই ফলের নাম উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে চকচকে হীরক দ্যুতিময় একটি লোভনীয় ফল। যাই হোক আমরা বরং কথা না বাড়িয়ে আঙুরের রসালো বাগানেই সরাসরি প্রবেশ করি।                 

বাগ-বাগিচায় উৎপন্ন কৃষিপণ্যের খাদ্যমূল্য এবং রপ্তানির দিক থেকেও বেশগুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। ইরানের এরকম একটি বাগিচা পণ্য হলো আঙুর। যেসব ফল স্থায়ী গাছপালা বা উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন হয় আঙুর সেই গোত্রীয় একটি ফল।  সাধারণত এ জাতীয় ফলের গাছ ফল প্রদান শেষে মরে যায় না মানে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মতো উদ্ভিদ বা গাছের কিছুটা অংশ অবশিষ্ট থাকে মাটিতে এবং পরের বছর ওই গাছই সবুজ, সুজলা, সুফলা হয়ে ফল দেয়। মাল্টা, অ্যাফ্রিকট, আঙুর, আপেল এবং আনার এই জাতীয় বাগিচা পণ্যগুলোকে উৎপাদনের বিচিত্র পরিস্থিতি বিবেচনায় যেমন আবহাওয়াগত দিক থেকে, উষ্ণমণ্ডলীয়, আধা উষ্ণমণ্ডলীয়, নাতিশীতোষ্ণ এবং ঠাণ্ডা মণ্ডলীয় দিক থেকে বিভক্ত করা হয়।

পেস্তা বাদাম, চা, কলা, আনার, ডুমুর, জয়তুন বা অলিভ, এনাব, খোরমাসহ সাইট্রাস ফল মানে যেসব ফলে সাইট্রিক এসিড আছে যেমন মাল্টা, নারঙ্গি বা কমলা, প্রিফ ফ্রুটস, মিষ্টি লেবু, টক লেবু, আম, কিভি ইত্যাদি ফল গরম এবং জলীয় বাষ্পময় এলাকা, অর্ধ উষ্ণ মানে গরম এবং অর্ধ জলীয় বাষ্পময় এলাকা থেকে গরম এবং শুষ্ক এলাকাগুলোতে উৎপাদিত হয়। আবার আবহাওয়াগত দিক থেকে যেসব এলাকা নাতিশীতোষ্ণ, ঠাণ্ডা এবং পার্বত্য যেমন ইরানের পশ্চিম এবং উত্তর পশ্চিমের ঠাণ্ডাপ্রবণ এলাকাগুলো রয়েছে সেসব এলাকায় আপেল, নাশপাতি, চালতা, আলুবোখারা, জার্দালু, অ্যাপ্রিকট, শালিল, শফতালু, ছোট বড় চেরি এবং চেরি জাতীয় অন্যান্য ফল, টমেটো, তুত ফল, শাহ তুত, ফান্দুক, আখরোট, অ্যালমন্ড বাদাম, সেনজেদ, জেরেশক, খোরমালু ইত্যাদি ফলগুলো উৎপাদিত হয়।

ইরানের বিশেষ জলবায়ু পরিস্থিতি এবং ইরানের বেশিরভাগ অঞ্চলে অসংখ্য মাইক্রো-ক্লাইমেটস এর অস্তিত্ব থাকার কারণে শীত, গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও শীতকালীন অঞ্চল, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন ধরণের উদ্যানজাত পণ্য উত্পাদন সম্ভব হয়েছে। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, ইরানের বিভিন্ন এলাকায় জলবায়ুগত বৈচিত্র্য এবং অসংখ্য মাইক্রোক্লাইমেটসের উপস্থিতি রয়েছে। সে কারণে ইরানের কেন্দ্রীয় মরুভূমির উপকণ্ঠের বেশিরভাগ গরম ও শুকনো অঞ্চলে যেমন, তেমনি শীতকালীন পার্বত্য জলবায়ুময় বেশিরভাগ এলাকাতেও উদ্যানজাত বিভিন্ন পণ্য উত্পাদন হচ্ছে।  ইরানে বাগ-বাগিচায় উৎপন্ন পণ্যের যত বৈচিত্র্য রয়েছে সমগ্র বিশ্বে তা নজিরবিহীন। উদ্যানজাত পণ্যের বৈচিত্রের দিক থেকে বিশ্বে ইরানের অবস্থান তৃতীয়। সারা বিশ্বে উদ্যানজাত যে পঁচিশটি পণ্য গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে পণরটি ইরানের বাগিচায় উৎপন্ন হয়।

উদ্যানজাত বিচিত্র পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইরানের কৃষি বিভাগ বেশ সমৃদ্ধ ও অগ্রসর। ইরানের পেস্তা বাদাম, খোরমা, ডুমুর, আপেল, জয়তুন, আঙুর, আনার এবং চেরি খুবই উন্নত মানের। সমগ্র বিশ্বে তাই ইরানের বাগানজাত এইসব ফলফলাদি গুণ ও মানের দিক থেকে বেশ সমাদৃতি পেয়েছে। বিগত কয়েক দশকে ইরানে গ্রিন হাউজ প্রোডাকশন ব্যাপক হারে বেড়েছে। শাকসব্জি যেমন শসা, টমেটো, বেগুণ, বরবটি, জুসিনি লাউসহ আরও বহু রকমের শাক সব্জির উৎপাদন বৃদ্ধির পরিমাণ চোখে পড়ার মতো। এইসব কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ইরানও।

ইরানের উদ্যানজাত পণ্যের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো বছরের বেশিরভাগ মওসুমে এসব পণ্য উত্পাদন করা যায়। ইরানে সাইত্রিশ মিলিয়ন হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। বিশ্বব্যাপী যে তেরটি আবহাওয়া মণ্ডল রয়েছে তার মধ্যে এগারো রকমের আবহাওয়া রয়েছে ইরানে। সে কারণে বিভিন্ন ধরণের উদ্যানজাত পণ্য উত্পাদন করার ক্ষমতা রাখে ইরান। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ