জানুয়ারি ৩০, ২০২১ ১৭:৩০ Asia/Dhaka

মহানবীর (সা) আবির্ভাব কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে এনেছে আধ্যাত্মিক বিপ্লব এবং তার একত্ববাদের দাওয়াত মানুষকে জ্ঞান, মনুষ্যত্ব ও উন্নত নৈতিক চরিত্র অর্জনে উৎসাহ যুগিয়েছে।

বিশ্বনবীর প্রচারিত খাঁটি একত্ববাদের আলো সারা বিশ্বে ইসলামকে কালোত্তীর্ণ ও বিশ্বজনীন ধর্মের গৌরব এনে দিয়েছে যে আলো বিশ্বকে আলো যোগাচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৪০০ বছর ধরে। বর্তমান বিশ্বেও মুহাম্মাদ নামটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সন্তানদের নাম হিসেবে এ নামের ব্যবহারই সবচেয়ে বেশি।  

মহানবী (সা), কুরআন ও ইসলাম সম্পর্কে পাশ্চাত্যের যেসব মনীষী প্রশংসনীয় ও আকর্ষণীয় মন্তব্য করেছেন ইতালীয় প্রাচ্যবিদ অধ্যাপক মিসেস লোরা ভাকসিয়া ভাগলিরি তাদের অন্যতম। ইতালির ন্যাপোলস বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্য ও ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের এই অধ্যাপক ইসলাম বিষয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন। ইসলামের দ্রুত বিস্তার শীর্ষক তার বইটি বেশ বিখ্যাত। এ বইয়ে তিনি মহানবীর (সা) জীবন সম্পর্কে বেশ জ্ঞানগর্ভ ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করেছেন। 

অধ্যাপক মিসেস লোরা ভাকসিয়া ভাগলিরি তার বইয়ে লিখেছেন: এই সংস্কারকের তথা মুহাম্মাদের (সা) তৎপরতা ছিল কতই না সভ্রান্ত  ও গৌরবময় এবং এ সংস্কারকই কয়েক বছরের মধ্যে মূর্তিপূজারী ও বন্য স্বভাবের জনগণকে একত্ববাদী এক ঐক্যবদ্ধ সমাজে রূপান্তর করেন। এ ছাড়াও তিনি এই লোকদেরকে সবচেয়ে উন্নত নৈতিক চরিত্রের অনুভূতিসম্পন্ন করে গড়ে তোলেন।

অধ্যাপক মিসেস লোরা ভাকসিয়া ভাগলিরি আরও লিখেছেন, মহানবী (সা) সবচেয়ে খাঁটি ও পবিত্র একত্ববাদকে তুলে ধরেন কুসংস্কার ও জাদু-টোনার পূজারিদের কাছে এবং ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীদের কাছে যে দুই ধর্মের পুরোহিতরা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল! মিসেস লোরার মতে মুহাম্মাদ (সা) প্রকাশ্যেই প্রতিক্রিয়াশীল ও পুরনো কুপ্রথার পূজারীদের মোকাবেলায় রুখে দাঁড়ান। প্রতিক্রিয়াশীল ও পুরনো কুপ্রথার পূজারীরা শির্ক বা অংশিবাদিতায় জড়িত হত। মহানবী পরিপূর্ণ নম্রতা ও কোমলতা নিয়ে স্বার্থপরতা ও প্রবৃত্তিপূজা ধ্বংসের জন্য রুখে দাঁড়ান। তিনি একজন ধর্মপ্রচারক ও আল্লাহর দ্বীনের আহ্বায়ক হিসেবে ব্যক্তিগত শত্রুদের প্রতি ছিলেন ক্ষমাশীল ও দয়ার্দ্র। মহানবীর মধ্যে একদিকে যেমন ছিল ন্যায়পরায়নতার গুণ ও তেম্নি সমপরিমাণে ছিল দয়া যা মানবীয় আদর্শের কাছে শ্রদ্ধাভাজন।

মহানবীর (সা) সবচেয়ে বড় মুজিজা পবিত্র কুরআনের বাণীর তিলাওয়াত শুনে কঠোর-হৃদয় কুরাইশ নেতারাও হতভম্ব হয়ে যেত অথবা প্রভাবিত হতে গভীরভাবে এর উন্নত জ্ঞানগর্ভ ও কাব্যময় বাণীর জাদুময় আকর্ষণে এবং তারা বুঝত যে মুহাম্মাদের মোকাবেলায় বিজয়ী হওয়া খুব কঠিন বা অসম্ভব।  সেই পবিত্র কুরআন আজও গভীর প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। এ প্রসঙ্গে  অধ্যাপক মিসেস লোরা লিখেছেন: ‌ইসলামের আসমানি গ্রন্থ এক মহাবিস্ময় বা মুজিজা। কুরআন এমন এক বই যা নকল করা সম্ভব নয়। আরবি সাহিত্যে কুরআনের মত উন্নত সাহিত্যের কোনো নজির ও স্টাইলও ছিল না। পবিত্র কুরআনের স্টাইল ও বাচনভঙ্গী মানুষের আত্মার ওপর যে প্রভাব ফেলে তা ঘটনাক্রমিক কোনো সহায়তা ছাড়াই এর শ্রেষ্ঠত্বেরই ফল মাত্র।... আর এমন এক অলৌকিক মহাগ্রন্থ রচনা করা কি মুহাম্মাদের (সা) পক্ষে সম্ভব হতে পারে যে মুহাম্মাদ (সা) পড়াশুনা শেখা ব্যক্তি ছিলেন না এবং জীবনে তিনি দু’বার বা তিন বার কবিতা রচনা করেছেন। কিন্তু এসব কবিতার মধ্যে ক্ষুদ্রতম কাব্যিক প্রখরতাও নেই।

অধ্যাপক মিসেস লোরা আরও লিখেছেন: আমরা পবিত্র কুরআনের মধ্যে এমন সব জ্ঞানের খনি দেখছি যা সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যক্তি ও শ্রেষ্ঠ দার্শনিক এবং সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনীতিবিদের প্রতিভা ও যোগ্যতারও অনেক উর্ধ্বের বিষয়। আর তাই পড়াশুনা শেখা ছিল না এমন এক ব্যক্তির রচনা কোনোভাবেই হতে পারে না কুরআন। মহানবী (সা) রিসালাত লাভের আগে এমন এক অধার্মিক সমাজে জীবন কাটিয়েছেন যে সমাজ ছিল শিক্ষিত ও ধার্মিক ব্যক্তিদের সমাজ থেকে বহু যোজন দূরে! মুহাম্মাদ (সা) নিজেই সব সময় জোর দিয়ে বলতেন যে তিনি অন্যদের মতই মানুষ! অর্থাৎ ফেরেশতা বা অলৌকিক কোনো সত্ত্বা তিনি নন। তাই সর্বশক্তিমান আল্লাহর সহায়তা ছাড়া কোনো অলৌকিকতা দেখাতে পারতেন না মহানবী মুহাম্মাদ (সা)। ইসলামের নবীর সবচেয়ে বড় মু’জিজা হল পবিত্র কুরআন। এতে রয়েছে নানা ঘটনা ও কাহিনীর বর্ণনা এবং সুনিশ্চিত কিছু সংবাদ। কুরআনের উৎস কেবলই হতে পারেন এমন এক সত্তা যার হাতের মুঠোয় রয়েছে আকাশ ও জমিনগুলোর তথা অস্তিত্বের জগতের সব কিছুর জ্ঞান।

কুরআন ও ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণার অভিজ্ঞতার অধিকারী অধ্যাপক মিসেস লোরা আরও বলেছেন, পবিত্র কুরআন সারা মুসলিম বিশ্বে বার বার পড়া হয়। কিন্তু বার বার পড়েও মুসলমানরা ক্লান্ত বা বিরক্ত হয় না কুরআনের প্রতি! বরং কুরআন দিনকে দিন তাদের কাছে আরও প্রিয় হয়! কুরআন পড়ে বা শুনে পাঠক বা শ্রোতা কুরআনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। কুরআন প্রথম যেভাবে নাজিল হয়েছিল এখনও এতসব শতাব্দি পরও সেই আগের মতই অবিকৃত রয়েছে এবং যতদিন আল্লাহ চাইবেন ও বিশ্ব জগত টিকে থাকবে ততদিন কুরআনও অবিকৃতভাবে টিকে থাকবে।

অধ্যাপক মিসেস লোরা ইসলাম সম্পর্কে জানার বিষয়ে নিজ অনুভূতি তুলে ধরে বলেছেন, কুরআন ও ইসলামের প্রাণ-সঞ্চারক শিক্ষা আর প্রজ্জ্বোল জ্ঞান আমার মধ্যে সৃষ্টি করেছে নতুন ও গভীর প্রজ্ঞা এবং বিশ্ব-সৃষ্টি ও দর্শন ও অস্তিত্বের জগত সম্পর্ক আমার চিন্তা-ভাবনা পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছি যে ইসলামের শিক্ষা খ্রিস্ট ধর্মের শিক্ষার বিপরীতে মানুষকে ব্যক্তিত্ব-সম্পন্ন ও শ্রদ্ধাভাজন বলে মনে করে। ইসলাম মানুষকে জন্মগতভাবেই অপবিত্র ও নোংরা মনে করে না। পবিত্র কুরআনে রয়েছে দুনিয়ার ভোগ্য বিষয়গুলোকে কাজে লাগানোর বিধানসহ জীবন-বিধান। আর এসব বিষয় অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও প্রজ্ঞাপূর্ণ ভঙ্গীতে তুলে ধরেছে কুরআন।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ৩০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ