ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১ ২০:৩০ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর আরেকটি বিখ্যাত নাম হল মুহাইমিন। এ শব্দের অর্থ সংরক্ষক ও নিরাপত্তা দানকারী এবং দেখাশুনাকারী তথা তিনি বান্দাহদের তৎপরতা দেখেন ও তাদের ওপর লক্ষ্য রাখেন বা তাদের যত্ন নেন।

সুরা হাশরের ২৩ নম্বর আয়াতে এ শব্দটি মহান আল্লাহর নাম হিসেবে এসেছে। এই আয়াতের অর্থ হল :তিনিই আল্লাহ তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, সব ত্রুটি থেকে পবিত্র,  তিনি কারো ওপর জুলুম করেন না। তিনি মুমিনদের নিরাপত্তা দান করেন।  বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর সংরক্ষক। শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, সব কিছুর ওপর পরাক্রান্ত ও অপরাজেয়, তিনি তার অদম্য ইচ্ছার মাধ্যমে সব কিছুকে সংশোংশন করেন। তিনি প্রতাপান্বিত,গৌরবান্বিত ও মাহাত্যশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা আলা তা থেকে পবিত্র।

মুহাইমিন নামের ওপর ভরসা করার অর্থ তিনি আমাদের সহায়তাকারী ও রক্ষাকারী। তাঁর সাহায্য ছাড়া কোনো কাজই করা সম্ভব নয়। আমরা যা গোপন রাখি মনের ভেতরে তাও তিনি জানেন। ঢেকে-থাকা বা গুপ্ত সব কিছুও তিনি দেখেন ও জানেন। কোনো কিছুই তার কর্তৃত্ব বা জ্ঞানের বাইরে নেই।  অন্য কথায় মহান আল্লাহ মুহাইমিন অর্থ তিনি সৃষ্টিকুলের সব কিছুর ওপর কর্তৃত্ব রাখেন ও সব কিছুই তাঁর কাছে নতজানু। 
সূর্যের দিকে লক্ষ্য করুন। মহান আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সূর্য সব সময় পূর্ব দিকে উদয় হওয়া ও পশ্চিমে অস্ত যাওয়ার নিয়ম মেনে চলছে। গ্রীষ্মে দিচ্ছে বেশি উত্তাপ ও শীতকালে দিচ্ছে কম উত্তাপ। আকাশের তারকারাজি মরুভূমির যাত্রী ও সাগরের যাত্রীদের পথ ও দিক দেখায়।  আমাদের চোখ, কান ও জিহ্বা, ফুসফুস এবং হৃদপিণ্ড থেকে শুরু করে অন্য সব অঙ্গই মহান আল্লাহর বেঁধে-দেয়া নিয়মের বাইরে যেতে পারে না। এসবের কাজেও কোনো বিঘ্ন ঘটছে না।

 সুরা ইয়াসিনের ৩৭ থেকে ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

''তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়। সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ। চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন পর্যায় বা মনযিল নির্ধার করেছি। অবশেষে সে পুরাতন ও বাঁকানো খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়। সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের, প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সাঁতার কাটছে''

মহান আল্লাহর কাছে কারো কোনো কিছুই গোপন নয়। মানুষের রিজিক ও উপার্জনও আল্লাহর হাতে। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কারো রিজিক ও আয়ু সামান্য পরিমাণে কম বা বেশি হয় না।

সুরা হাশরের ২৩ নম্বর আয়াতে 'মুহাইমিন' শব্দের পরে 'মুমিন' শব্দটি এসেছে। এ থেকে বোঝা যায় মহান আল্লাহ নিরাপত্তা দান করেন এবং তিনিই মানুষের ওপর নজর রাখছেন ও তাদের রক্ষা করছেন। তিনি মানুষের জন্য এমন এক সীমারেখা নির্ধারণ করেছেন যে মানুষ যদি তা মেনে চলে তাহলে সে নিরাপদ থাকবে। আর এই সীমারেখা লঙ্ঘন করলে বিভ্রান্ত ও ধ্বংস হয়ে যাবে। সুরা ইউসুফের ৬৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহকে সর্বোত্তম রক্ষাকারী হিসেবে ও দয়ার্দ্রদের মধ্যে সবচেয়ে দয়ার্দ্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। -এ বিষয়টি মনে রাখলে একজন মানুষ কখনও সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার ক্ষেত্রে যত বাধাই আসুক না কেন ভীত-সন্ত্রস্ত হবে না
সুরা মায়েদার ৪৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:
আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববতী গ্রন্থগুলোর সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী।

লক্ষ্যণীয় যে মহান আল্লাহর সুরক্ষার কারণেই পবিত্র কুরআন ১৪০০ বছর পরও এখনও পুরোপুরি অবিকৃত রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা থাকবে কিয়ামতের আগ পর্যন্ত। এ ছাড়াও অতীতের ধর্মগ্রন্থগুলোর বক্তব্য বা বিষয়বস্তু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কুরআনকে সত্যায়নকারী ও সেসবের সংরক্ষণকারী তথা মুহাইমিন হিসেবে উল্লেখ করেছেন মহান আল্লাহ। অন্য কথায় কুরআন অতীতের আসমানি ধর্মগ্রন্থগুলোর মূলনীতিকে সত্যায়িত করে ও যা যা বিকৃত হয়েছে তার পরিবর্তে আসল বক্তব্যগুলোকে তুলে ধরে এবং এভাবে অতীতের সেইসব ধর্মের বাস্তবতাকে রক্ষা করে।  
 এভাবে কুরআন অন্য আসমানি ধর্মগ্রন্থগুলোর তুলনায় শ্রেষ্ঠ। আর যেসব ধর্মগ্রন্থ আসমানি নয় সেসবের তুলনায় শ্রেষ্ঠ হওয়ার বিষয়ে সামান্যতম সন্দেহ সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। আর নবী-রাসুলদের জন্য শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম মাপকাঠিও হল এইসব ধর্মগ্রন্থ। হযরত মুসা তাওরাতের আলোকে, হযরত ঈসা ইঞ্জিলের আলোকে প্রজ্জ্বোল। আর সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআনের আলোকে অন্য সব নবী-রাসুলের চেয়ে বেশি যোগ্যতা ও মর্যাদার অধিকারী।  আর মহানবী নিজেও অতীতের ধর্মগুলোর মুহাইমিন বা সংরক্ষক।

প্রখ্যাত ইসলামী দার্শনিক মহিউদ্দিন আরাবির মতে কুরআন যেমন অতীতের ধর্মগুলোর ক্ষেত্রে মুহাইমিন বা সংরক্ষক তেমনি মুসলমান জাতিও শ্রেষ্ট জাতি। আর এই শ্রেষ্ঠ জাতির জন্যই নাজিল হয়েছে শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ কুরআন।  মুসলমানরা কিয়ামতের দিন কুরআন পরিবেষ্টিত হয়ে হাশরের ময়দানে আসবে। তারা থাকবে অন্য উম্মতদের চেয়ে অগ্রভাগে। কুরআনের ক্বারিবৃন্দ থাকবেন সবার সামনেকুরআন আবৃত্তিকারীদের মিন্বর হবে কুরআনের আয়াতের সংখ্যার সমসংখ্যক ধাপ উর্ধ্বে। জনগণ কুরআনকে নিজ জীবনে ঠিক যতটা বাস্তবায়ন করেছে তত সিড়ি ওপরে হবে তাদের অবস্থান। কোনো কোনো মিন্বরের অবস্থান হবে কুরআনের শব্দের সংখ্যার আলাকে, কোনোকোনোটির অবস্থান হবে কুরআনের অক্ষরের সংখ্যার আলোকে। খোদাভীরু আলেম ও কুরআনের আমলকারীদের অবস্থান হবে সেসবেরও উপরে!
তাই আমাদেরও উচিত হবে মুহাইমিনের গুণ বা রঙে নিজেদের রাঙিয়ে তোলা যাতে আমরা নিজ ঈমান ও ধর্মকে রক্ষা করতে পারি। অন্যদেরকে যেন নিজ ঈমান ও ধর্মের ওপর আঘাত হানার সুযোগ না দেই। নিজ নিজ সামাজিক অবস্থান ও সুযোগ-সুবিধার আলোকে সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্বগুলো পালন করা আমাদের দায়িত্ব

 মহানবী (সা) বলেছেন, তোমরা সবাই রাখালের মত দায়িত্বশীল। রাখল তার ভেড়াগুলোর হেফাজত করে। অধীনস্থদের ব্যাপারে তোমাদের দায়িত্ব খুব কঠিন। স্বামী তার স্ত্রী ও সন্তানদের পথ প্রদর্শক ও প্রশিক্ষক। স্ত্রীর দায়িত্ব স্বামী ও সন্তানদের রক্ষা করা এবং দেখাশুনা করা। সেবক মালিকের সম্পদ ও মালিকের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। এভাবে প্রত্যেকেই অন্যদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে নিজ নিজ দায়িত্বগুলো পালন করার তৌফিক দিন। #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।