এপ্রিল ১২, ২০২১ ১৭:৫৬ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র কুরআনে বারবার উল্লেখিত নাম আলিম। এর অর্থ জ্ঞানী।

 

যিনি জানেন এবং যিনি জ্ঞান ও উপলব্ধির অধিকারী তাকে বলা হয় জ্ঞানী বা আলিম। মহান আল্লাহ নিজের সত্ত্বার বিষয়সহ সব বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন। অথচ মানুষসহ অন্য অনেক জীব নিজের সম্পর্কেই বেশ সীমিত বা অপূর্ণাঙ্গ জ্ঞানের অধিকারী। মহান আল্লাহ সৃষ্টিকুলের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতসহ সব কিছু জানেন। সৃষ্টিকুল সৃষ্ট হওয়ার আগের অবস্থা ও সৃষ্টিকুল সৃষ্ট হওয়ার পরের অবস্থা – এসবই তিনি জানেন। সুরা সাবার তৃতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

কাফেররা বলে আমাদের উপর কেয়ামত আসবে না। বলুন কেন আসবে না? আমার পালনকর্তার শপথ-অবশ্যই আসবে। তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে তাঁর আগোচরে নয় অণু পরিমাণ কিছু, না তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এবং না বৃহৎ-সমস্তই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে।

আমীরুল মুমিনিন হযরত আলীর বক্তৃতামালার সংকলন নাহজুল বালাগায় মহান আল্লাহ'র জ্ঞান সম্পর্কে অনেক শিক্ষণীয় ও চিন্তা-উদ্দীপক বর্ণনা রয়েছে। ১৭৮ নম্বর খোতবার একাংশে আমিরুল মু'মিনিন বলেছেন,

'এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় প্রবেশ করতে আল্লাহকে কোন কিছুই প্রতিহত করতে পারে না। সময় তার কোন পরিবর্তন আনতে পারে না। স্থান তাকে করতে পারে না চিহ্নিত এবং ভাষা তাঁকে বর্ণনা করতে অক্ষম । পানির বিন্দুর সংখ্যা, আকাশে তারকার সংখ্যা বা শূন্যে বায়ু-স্রোতের সংখ্যা-কোন কিছুই তাঁর অজানা নয়। পাথরের ওপর দিয়ে পিপীলিকার চলাচল অথবা অন্ধকার রাতে কীট-পতঙ্গের বিশ্রামস্থল বা আশ্রয়স্থল-এসবও তাঁর অজানা নয়। এমনকি তিনি জানেন কোথায় গাছের পাতা ঝরে পড়ে এবং চোখের মণির গোপন নড়াচড়াও তার অজানা নয়।'

মহান আল্লাহর আলিম বা জ্ঞানী নামের অর্থ সবখানে অনুভব করা যায়। এটা স্পষ্ট যে মহান আল্লাহ সৃষ্টিকুলের ও অস্তিত্ব জগতের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়সহ ও জটিল সব বিষয়সহ সব কিছুই জানেন। এই বিশ্ব জগতের এতসব বিস্ময়কর ও বৈজ্ঞানিক প্রজ্ঞাজনিত জটিল গঠনের সৃষ্টিকে কোনো অজ্ঞ ব্যক্তি বা সত্ত্বা সৃষ্টি করতে পারেন না। সুরা মুলক-এর ১৩ ও  ১৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, তোমরা তোমাদের কথা গোপনে বল অথবা প্রকাশ্যে বল, তিনি তো অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত। যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি করে জানবেন না? তিনি সূক্ষ্ম জ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত।

-মহান আল্লাহ অদৃশ্য জগতের সব কিছুর জ্ঞান রাখেন এবং এমনকি কিয়ামত বা পুনরুত্থানের নির্দিষ্ট সময় ও তারিখও একমাত্র মহান আল্লাহই জানেন।

সুরা লুকমানের ৩৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:  নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।

প্রকাশ্য ও গোপন সব কিছুর বিষয়ে মহান আল্লাহর জ্ঞান সম্পর্কে সুরা তাগাবুনের ৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা আছে, তিনি তা জানেন। তিনি আরও জানেন তোমরা যা গোপনে কর এবং যা প্রকাশ্যে কর। আল্লাহ অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।-

কোনো মানুষ যখন জানে যে আল্লাহ সব কিছু জানেন তখন সে সুখে-দুঃখে সব সময়ই এবং এমনকি চরম দরিদ্র ও অসুস্থ অবস্থায়ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে ও ধৈর্যশীল হবে। আল্লাহ সব বিষয়ে সম্যক জ্ঞানী ও সব কিছু করতে সক্ষম -এই বিশ্বাস মানুষের মধ্যে দায়িত্বশীলতা বাড়িয়ে দেয় এবং এ বিশ্বাসের কারণে আচার-আচরণ কথা-বার্তায় ও লেন-দেনে তথা সর্বাবস্থায় সে কোনো অন্যায় কাজ করতে ও পাপ করতে সাহসী হবে না। এমনকি মনের মধ্যেও কোনো খারাপ চিন্তার ঠাঁই দেবে না সে।

মহান আল্লাহ ইহলোক ও পরলোকের সব কিছুর নিরঙ্কুশ মালিক -এই জ্ঞান ও বিশ্বাস মানুষকে দেয় এমন অপার প্রশান্তি যে সে এই বিশ্বাসের আলোকে সৎ থাকার পাশাপাশি সব সময় মহান আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল ও আস্থাশীল হবে এবং হারানো বিষয়গুলোর জন্য যেমন তার কোনো দুঃখ থাকবে না তেমনি ভবিষ্যত নিয়েও তার কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না। বরং সৎ কাজের প্রতি তার আগ্রহ ও অঙ্গীকার বাড়তেই থাকবে।

মহান আল্লাহর আলিম নাম পবিত্র কুরআনে ১৬২ বার এসেছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই নাম অন্য নামের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন, আল্লাহর সামি নামের পর আলিম নাম এসেছে। সামি শব্দের অর্থ শ্রবণকারী। যখন বলা হয় আল্লাহু সামিউন আলিম। এর অর্থ শ্রবণযোগ্য সব বিষয়েও আল্লাহ জ্ঞানী ও তিনি সব কিছু  শোনেন বা শুনতে পান। সুরা আনকাবুতের ৬০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,  এমন অনেক জন্তু আছে, যারা তাদের খাদ্য সঞ্চিত রাখে না। আল্লাহই রিযিক দেন তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

অর্থাৎ মহান আল্লাহ সব সৃষ্টির রিযিক যোগান যথাসময়ে। তিনি রিযিকপ্রার্থীতা বুঝতে পারেন ও শোনেন তা তারা মুখের ভাষায় বলুক, বা কাজের ভঙ্গিতে কিংবা অন্তরের ভাষায় বলুক।  মহান আল্লাহ জানেন প্রত্যেকের রিযিক কতটুকু ও তা কি কি !

আমরা যদি মহান আল্লাহর আলিম নামের রঙে রঙিন হতে চাই তাহলে আমাদেরও উচিত জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট হওয়া। অবশ্য মানুষের জ্ঞানের উৎসও হচ্ছে মহান আল্লাহর জ্ঞান। মহান আল্লাহ সাধারণ মানুষকে তাদের ধারণ-ক্ষমতা ও ইচ্ছা আর প্রচেষ্টার আলোকে জ্ঞান দান করেন। তবে নবী-রাসুল ও পবিত্র ইমামগণকে অদৃশ্যেরও অনেক জ্ঞান দান করেন। নবী-রাসুল ও পবিত্র ইমাম এবং আল্লাহর ওলিগণ মানুষকে সুপথ দেখানোর দায়িত্ব পালন করেন বলে তাদের জ্ঞান অন্যদের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। কোনো সাধারণ মানুষের জ্ঞান যদি নবী-রাসুল বা ইমামের জ্ঞানের চেয়ে বেশি হত তাহলে তাকে নবী-রাসুল বা ইমামের অনুসারী হতে বলাটা হত অন্যায়। তাই সাধারণ মানুষকে নবী-রাসুল ও ইমামদের চেয়ে অনেক কম জ্ঞান দেয়া হয়েছে।

শিয়া ও সুন্নি সূত্রের হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা) বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝ থেকে চলে যাচ্ছি, কিন্তু আমি তোমাদের কাছে দুটি ভারি ও দামি বিষয় রেখে যাচ্ছি। আর তা হল: আল্লাহর কুরআন ও আমার পবিত্র আহলে বাইত। তোমরা যতক্ষণ এ দুই আকড়ে ধরবে ততক্ষণ বিভ্রান্ত হবে না। - এ হাদিসে মহানবীর আহলে বাইতকে পবিত্র কুরআনের সম-মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আর পবিত্র কুরআন সম্পর্কে বলা হয়েছে :

এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। অন্য কথায় কুরআন পুরোপুরি সত্য ও বাস্তব। আর কুরআন যখন শতভাগ সত্য ও নির্ভুল তখন তার সঙ্গীও ও সমমানের ব্যক্তিরাও হবেন নির্ভুল ও পবিত্র তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মহানবী (সা) তাই বলেছেন, আমার আহলে বাইত হচ্ছে পবিত্র কুরআনের মত এবং তারা কখনও কুরআন থেকে পৃথক হবেন না। তাই যারা মহানবীর আহলে বাইতের অনুসরণ করবে তারা কুরআনের লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হবে এবং সব ধরনের বিচ্যুতি থেকে মুক্ত হবে। ইমামগণ যে আলিম তাও এই হাদিস থেকে স্পষ্ট। মহান আল্লাহ আমাদের অন্তরকে জ্ঞান ও দূরদর্শিতা, উপলব্ধি এবং মারেফাতের আলোয় আলোকিত করুন।

: اَللّهُمَّ اجْعَلْ لی فی قَلْبی نُوراً وَ بَصَراً وَ فَهْماً وَ عِلْماً اِنَّکَ عَلی کُلِ شَیءٍ قدی

 

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।