এপ্রিল ২৮, ২০২১ ১৭:৪৫ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম বাসিত। এই নামের অর্থ কাবিদ্‌ বা কাবিজ শব্দের বিপরীত।

গত পর্বের আলোচনায় আমরা জেনেছি মহান আল্লাহর জালালি তথা শক্তিমত্তা ও পরাক্রমের ঔজ্জ্বল্যে ভরপুর নামগুলোর অন্যতম ক্বাবিয বা ক্বাবিদ-এর অর্থ কোনো কিছুকে হাতের মুঠিতে নেয়া, সাধারণত কোনো বিষয়ের ওপর পরিপূর্ণ ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা আর কর্তৃত্ব বোঝাতে এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। ক্বাব্‌য্‌ বা ক্বা্‌বদ্‌ শব্দের আরো ক'টি অর্থ হল নেয়া বা গ্রহণ করা এবং কোনো কাজ ঠেকানো বা প্রতিরোধ করা। রুহ কবয্‌কারী, রিজিক প্রসারণ ও সংকোচনকারী অর্থেও কাবিয্ নাম ব্যবহার করা হয়।

অন্যদিকে বাসিত শব্দের আক্ষরিক অর্থ ছড়ানোকারী, বিস্তৃতকারী বা প্রসারকারী। রূপক অর্থে ক্ষমাশীলতাকে বোঝানো হয় এ শব্দের মাধ্যমে। মহান আল্লাহর জামালি নামগুলোর অন্যতম হল এই বাসিত। মহান আল্লাহর দয়া ও করুণাবাচক নামগুলোকে এক কথায় জামালি নাম বলা হয়। তাই বাসিত নামের মধ্যে মহান আল্লাহর দয়া, করুণা ও ক্ষমাশীলতা প্রোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মহান আল্লাহর এইসব গুণের কারণে মানুষ আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট হয় ও তাঁর অনুরাগী হয়। মহান আল্লাহ তাঁর বাসিত নামের সুবাদে তথা দয়া ও অনুগ্রহের বরকতে মানুষের রিজিক বাড়িয়ে দেন এবং এতে মানুষের অন্তরে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ ও প্রফুল্লতা। 

মহান আল্লাহর কাবিয্ ও বাসিত নাম সৃষ্টিকুলকে পরিচালনার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকে তুলে ধরে। ফলে এটা স্পষ্ট হয় যে একমাত্র আল্লাহই দান করেন কিংবা দানের পথে বাধা হন। মহান আল্লাহ যাকে চান তাকে অবারিত মাত্রায় দান করেন এবং যাকে চান না তার ক্ষেত্রে দানের পথে বাধা হন। আর মহান আল্লাহর দান করা ও না করার বিষয়ে রয়েছে এমন কৌশল বা রহস্য যা কেবল তিনিই জানেন।

যিনি বাসিত তিনি তাঁর দাসদের জন্য দান ও দয়া-দাক্ষিণ্য বাড়িয়ে দেন এবং অনুরাগীদের বক্ষকে করেন প্রশস্ত।  মহান আল্লাহও তা-ই করেন অর্থাৎ তিনি তারঁ রহমত ও অনুগ্রহ  বাড়িয়ে দেন বান্দাহদের প্রতি এবং বান্দাহ'র জন্য প্রয়োজনীয় বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক রুজি বা রিয্‌কের ব্যবস্থা করেন। 

সুরা আসরার ত্রিশ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,  নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা যাকে ইচ্ছা বেশি জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনিই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত ও সব কিছু দেখছেন।

মহান আল্লাহর অপার করুণা নানা ক্ষেত্রে নেমে আসে বান্দার ওপর। জ্ঞান, সম্পদ, সুস্বাস্থ্য, সন্তান-সন্ততি -এসবই যাকে ইচ্ছা তিনি ব্যাপক মাত্রায় দান করেন। অবশ্য বান্দার যোগ্যতা ও প্রতিভার বিষয়টি দেখেই আল্লাহ দান করে থাকেন। সুরা শুরার ২৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

যদি আল্লাহ তাঁর সকল বান্দাকে প্রচুর রিজিক দিতেন, তবে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় বা বিদ্রোহ সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি তাঁর প্রজ্ঞা বা হিকমাতের আলোকে যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ নাযিল করেন। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর বান্দাদের খবর রাখেন ও সবকিছু দেখেন। -

মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ ও রিজিক অনেক মানুষকে অহংকারী করে তোলে এবং তখন তারা মনে করে যে তারা সব কিছুর ওপর শক্তিমান। কারুন বহুকাল অভাবগ্রস্ত থাকার পর মহান আল্লাহ তাকে পরীক্ষা করার জন্য অনেক সম্পদ দান করেন। সে এইসব সম্পদকে সৎ কাজে ব্যয় করতে ব্যর্থ হয়। বরং সে এতটা গর্বিত ও অহংকারী হয়ে ওঠে যে মানুষকে সে বলত: আমি সবচেয়ে ধনী এবং এইসব ধন-সম্পদ আমি আমার জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমেই অর্জন করেছি। তার জাতির বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা যখন তাকে বিনীত ও দয়ালু হওয়ার পরামর্শ দিত তখন সে উল্টো তাদের পরিহাস করত! অন্যরা তাকে হিংসা করছে বলে সে অভিযোগ করত। এভাবে তার অহংকার ও ঔদ্ধত্য যখন চরমে পৌঁছে তখন আল্লাহ জমিনকে নির্দেশ দেন কারুন ও তার সম্পদকে গিলে ফেলতে।

 কারুন তার সম্পদসহ মাটির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় কারুনের মত অন্যান্য কৃপণ ও সম্পদ-লোভী ব্যক্তিরাসহ সবাই এটা বুঝতে পারে যে রিযক্‌-এর মালিক একমাত্র আল্লাহ এবং আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ ও অবাধ্য ব্যক্তিরা শাস্তি পায়। সুরা কাসাসের ৭৬ থেকে ৭৮ নম্বর আয়াতে এই কাহিনী এসেছে।

মোট কথা ধন-সম্পদ মানুষের জন্য পরীক্ষার মাধ্যম। এক ব্যক্তি মহানবীর (সা) কাছে আবেদন  জানান তার জন্য এমন দোয়া করতে যাতে মহান আল্লাহ তাকে বিপুল সম্পদ দান করেন। মহানবী (সা) তাকে বললেন: অল্প সম্পদ পেয়ে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া অনেক বেশি সম্পদ পেয়ে সেসবের জন্য কৃতজ্ঞ না হতে পারার চেয়ে উত্তম।

বাংলায় প্রাচুর্য অর্থে বেসাতি শব্দটির উৎস আরবি বিসত্‌ ও বাসিত। কখনও কখনও আরবিতে ইয়াদ বা হাত দিয়েও প্রাচুর্যকে বোঝানো হয়।

মহান নবী হযরত সুলায়মান ও দাউদ নবীর ব্যাপক সম্পদ ও সুবিশাল সাম্রাজ্য ছিল ইহুদিদের জন্য গর্বের কারণ।  কিন্তু পরবর্তী যুগে ইহুদিরা সম্পদ ও শক্তি অনেকাংশে হারিয়ে ফেলে। বিশেষ করে ইসলামের আবির্ভাবের ফলে ইহুদিদের শক্তিমত্তা কমে যাওয়ায় তারা ক্ষোভ দেখিয়ে পরিহাস করে বলত: আল্লাহর হাত এখন শেকলে বাধা বা তিনি কৃপণ! তাই তিনি আমাদের দিকে নজর করছেন না! সুরা মায়েদার ৬৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলছেন:

আর ইহুদীরা বলে: আল্লাহর হাত (শেকলে আটকে) বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ। একথা বলার জন্যে তাদের ওপর অভিশাপ পড়েছে। বরং আল্লাহর উভয় হস্ত উন্মুক্ত। তিনি যেরূপ ইচ্ছা ব্যয় করেন তথা দান করেন।

আরবিতে ইয়াদ বা হাত বলতে অনেক সময় নেয়ামত, ক্ষমতা, সরকার ও শাসন-ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব-এইসব অর্থও বোঝায়।

সুরা বনি ইসরাইলের ২৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

এবং তোমার হাত দু’টিকে তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে রেখ না  তথা দান করা বন্ধ কর না, আর তা সম্পূর্ণরূপে প্রসারিতও কর না তথা সীমাহীনভাবে দান কর না, নতুবা পরে তোমাকে নিন্দিত ও রিক্তহস্ত হয়ে বসে পড়তে হবে।

বেসাতির উৎস বিস্‌ত্‌ বলতে কখনও কখনও অন্যের জীবন ও সম্পদের ওপর আগ্রাসন চালানোকেও বোঝায়। যেমন, হাবিল তার ভাই কাবিলকে বলেছিলেন:

যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবে আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার দিকে হস্ত প্রসারিত করব না। কেননা, আমি বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করি।

অনেক মুফাসসির মনে করেন, এখানে হাবিলের বক্তব্যের অর্থ এই নয় যে তিনি নীরবে মার খেয়ে যাবেন ও কোনো প্রতিরোধ করবেন না, বরং এর অর্থ আগে আক্রমণকারী হবেন না। কারণ, প্রতিরক্ষা বা আত্মরক্ষা ওয়াজিব। উল্লেখ্য হাবিল যখন ঘুমে ছিলেন তখন কাবিল পাথর দিয়ে তাকে হত্যা করে।

আমরা যদি মহান আল্লাহর বাসিত নামের রঙে রঙিন হতে চাই তাহলে আমরা যেন দানশীল হই ও অন্যদের দুঃখ দানশীলতার মাধ্যমে দূর করি। অন্যদের জন্য আমাদের কথা যেন হয় দয়ার্দ্র ও হাত যেন দানের জন্য প্রস্তুত থাকে এবং মুখে থাকে হাসি।#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।