মে ০৮, ২০২১ ১৭:১৪ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর কোনো কোনো নামের মধ্যে ভিন্নতা দেখা গেলেও সেসব পরস্পরের মোকাবেলায় লিপ্ত নয়।

যেমন, আলিম ও ক্বাদির। কিন্তু আল্লাহর কোনো কোনো নাম পরস্পরের সঙ্গে দ্বান্দ্বিক। মহান আল্লাহর ক্বাবিদ্ বা ক্বাবিয্‌ নামটি বাসিত্ব নামের সঙ্গে দ্বান্দ্বিক। ক্বাবিদ দান ও দয়ার পথে বাধা, কিন্তু বাসিত্ব দান ও দয়া-দাক্ষিণ্যে মশগুল। আজ আমরা মহান আল্লাহর আরও দুই দ্বান্দ্বিক নাম মুয়িজ্জু ও মুযিল্লু নিয়ে আলোচনা করব।

মুয়িজ্জু শব্দের অর্থ সম্মানদাতা ও সাহায্যকারী। আর মুযিল্লু অর্থ অপমানকারী বা হেয়কারী। যারা আল্লাহর হুকুম মেনে চলে ও তাঁর অনুগত তারা বাহ্যিক দৃষ্টিতে দরিদ্র হলেও মহান আল্লাহ তাদের সম্মান দান করেন। যে মানুষ যত বেশি মাত্রায় আল্লাহকে মেনে চলেন ও আল্লাহর ওপর নির্ভর করেন এবং খোদাহীন বা খোদাবিমুখ বিষয় বা ব্যক্তি হতে দূরত্ব বজায় রাখেন মহান রাব্বুল আলামীন তাকে ততই বেশি সম্মান দান করেন। কারণ সম্মান একমাত্র আল্লাহরই হাতে নিবদ্ধ। মহান আল্লাহ সুরা নিসার ১৩৮-১৩৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন,

'সেসব মুনাফিককে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব যারা মুসলমানদের বর্জন করে কাফেরদেরকে বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে, অথচ যাবতীয় সম্মান কেবল আল্লাহরই জন্য।-

তাই যে মহান আল্লাহর মুয়িজ্জু ও মুযিল্লু হওয়ার বিষয়টি মনে রাখে তার কাছে সব কিছুই মহান আল্লাহর প্রকাশ বা তাঁরই মহিমার নিদর্শন বলে মনে হবে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ভাবনা তার মাথায় আসবে না। এ ধরনের ব্যক্তির চোখের সামনে থেকে সেইসব পর্দা সরে যায় যা উচ্চতর উপলব্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

আর এ ধরনের উচ্চতর উপলব্ধি মানুষকে পৌঁছে দেয় পূর্ণতার শীর্ষে। ফলে সে মহান আল্লাহর এই আহ্বানে সাড়া দেয় যে আহ্বানে মহান আল্লাহ বলছেন: হে প্রশান্ত আত্মা! ফিরে আস তোমার প্রতিপালকের দিকে এমন অবস্থায় যখন তুমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনিও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। সুরা ফাযর্‌-২৭-২৮

ইমাম হাসান মুজতাবা (আ) বলেছেন, যখনই কেউ পরিবার ও ক্ষমতার মাধ্যম ছাড়াই সম্মান আর গৌরব প্রত্যাশা করে সে যেন মহান আল্লাহর নাফরমানি করার মত অপমানজনক অবস্থা ত্যাগ করে আল্লাহর আনুগত্য করার সম্মানের দিকে আসে।

সুরা আলে ইমরানের ২৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর মুয়িজ্জু ও মুযিল্লু গুণের কথা তুলে ধরে বলছেন:  বলুন ইয়া আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমান কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল। এ আয়াত থেকে বোঝা যায় একমাত্র মহান আল্লাহই সম্মানদাতা ও অপমানকারী। মহান আল্লাহ তাঁর আনুগত্যের মধ্যে রেখেছেন সম্মান ও তাঁর অবাধ্যতার মধ্যে বা পাপাচারের মধ্যে রেখেছেন অপমান  আর লাঞ্ছনা। আল্লাহর আনুগত্য হচ্ছে এমন এক নুর যা ব্যবধান বা দূরত্বের পর্দাগুলো সরিয়ে দেয়। অন্যদিকে পাপাচার আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সৃষ্টি করে দূরত্ব বা ব্যবধান। তাই যে প্রকৃত সম্মান চায় তার উচিত আল্লাহর আনুগত্য ও দাসত্বের মধ্যেই তা সন্ধান করা। আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ) বলেছেন, যে আল্লাহর আনুগত্য করে সে-ই সম্মান পায় এবং সে-ই হয় শক্তিশালী।

মহান আল্লাহ তার শত্রুদেরকে নিজের পরিচিতি বা মারেফাত থেকে বঞ্চিত করে তাদের অপদস্থ করেন। এভাবে মহান আল্লাহর মুযিল্লু নাম বা গুণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মহান আল্লাহ যখন কাউকে অপছন্দ করেন তখন তাকে ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত করেন। তার মধ্যে তখন কু-প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ তথা শয়তানের নিয়ন্ত্রণ জোরদার হয়। আর আল্লাহ তাকে তার এ অবস্থার মধ্যে ছেড়ে দেন। ফলে আল্লাহ ও তার মধ্যে দেখা দেয় অনন্ত বিচ্ছেদ বা দূরত্ব। বনি ইসরাইলকে মহান আল্লাহ এত বিপুল নেয়ামত দেয়া সত্ত্বেও তারা অকৃতজ্ঞ হয়ে বাছুর পূজায় লিপ্ত হয়। ফলে আল্লাহও তাদের পাপাচারের জন্য তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেন এবং তাদেরকে লাঞ্ছনা আর অবমাননার শিকার করেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সুরা বাকারার ৬১ নম্বর আয়াতে বলেছেন,  আর তাদের ওপর আরোপ করা হল লাঞ্ছনা ও দারিদ্র বা পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হলো এ জন্য যে, তারা আল্লাহর বিধি-বিধান মানতো না এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান  সীমালংঘকারী।

কেউ সম্মান পেতে চাইলে তার উচিত বিজয় ও সম্মানের আসল উৎস মহান আল্লাহর একনিষ্ঠ আনুগত্য করা। আল্লাহ সুরা ফাতিরের দশ নম্বর আয়াতে বলেছেন, 'যে কেউ সম্মান চায় সে জেনে রাখুক সব সম্মান কেবলই আল্লাহর।' আল্লাহ এমন সম্মান তার প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের দান করে থাকেন। ফলে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে তাদের প্রশংসা। যেমন, হযরত ইমাম হুসাইন (আ) ইয়াজিদের সেনাদলের হাতে পরাজিত হলেও তিনি যেহেতু আল্লাহর জন্যই সংগ্রামে নামেন এবং তাতে নিজের সব কিছুই কুরবানি করেন। তাই আল্লাহ তাঁকে এমন উচ্চতর সম্মান দান করেছেন যে তিনি কেবল মুসলমানদের মধ্যেই নয় বিশ্ববাসীর মধ্যেই উচ্চতর সম্মানের অধিকারী। 

যারা সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে চায় তারা প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে না, বরং ওইসব মেকি সম্মান তাদের ধ্বংস করে। চাটুকার লেখক, শিল্পী ও কবিদের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। যে সম্মান আল্লাহর নুরের আলোয় আলোকিত নয় তা প্রকৃত সম্মান নয়। অজ্ঞ রাজা-বাদশাহরা এ ধরনের সম্মান নিয়ে গৌরব করলেও তারা মানুষের কাছে ও নিজেদের কাছেও গাধা আর গরু-ছাগলের মতই অসম্মানের অধিকারী।

লোকমান হাকিমের মতে কেউ যদি এই দুনিয়ার সমস্ত সম্মানের অধিকারী হতে চায় তাহলে তার উচিত মানুষের কাছে যা আছে সে সম্পর্কে লোভ না করে। নবী-রাসুলরা এমনই নির্লোভ থেকেই সম্মানের অধিকারী হয়েছেন। তারা কখনও সম্পদ ও পদের লোভ করেননি। তাই খোদায়ি সম্মান লাভের অন্যতম পথ হল অল্পে-তুষ্টি।#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ০৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।