জুন ১৫, ২০২১ ১৮:৩০ Asia/Dhaka

শিরাজে ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেমন কারিমখানী দূর্গ, তিনটি মসজিদ-ওয়াকিল মসজিদ, শোহাদা মসজিদ এবং আতিক মসজিদ।

এছাড়াও রয়েছে এরাম বাগিচা, কোরআন গেইট প্রভৃতি। কারিমখানী দূর্গটি খোশ্‌ক বা মরানদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। কারিমখানী ছিলেন যান্দ রাজবংশের প্রথম শাসক। ১৭৪৭ সালে যখন নাদের শাহকে হত্যা করা হয়, তখন শিরাজের অধিকাংশ ঐতিহাসিক ভবন ধবংস হয়ে যায়। এরপর যান্দ রাজবংশের প্রথম শাসক এই করিম খানের শাসনামলেই শিরাজ পুণরায় গড়ে ওঠে এবং পুণরায় ইরানের রাজধানী হিসেবে নির্বাচিত হয়।

করিম খানের শাসনামলে শিরাজের অধিকাংশ সুন্দর সুন্দর ভবন নতুন করে নির্মিত হয়েছে। আবার কোনো কোনো ভবনের সংস্কারও করা হয়েছে। করীম খান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা স্বরূপ কেন্দ্রীয় শহরেই এই দূর্গটি নির্মাণ করেন। কালক্রমে তাঁর নামেই দূর্গটি পরিচিতি পায়। দূর্গটি দেখতে বেশ সুন্দর। উঁচু-উঁচু প্রাচীর বেষ্টিত এই দূর্গটি অনেকটা বর্গাকৃতির। দূর্গের চার কোণায় চারটি বৃত্তাকার টাওয়ার দেয়ালের সীমা পেরিয়ে আরেকটু উপরে উঠে গেছে। টাওয়ারগুলো ব্যাপক কারুকার্য খচিত। যান্দ শাসনামলে দূর্গ এলাকাটি শহরের একটি প্রধান এলাকা ছিল। এই দূর্গের বিপরীত দিকে বিস্তীর্ণ বাগান দূর্গটিকে আরো বেশী আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বর্তমানে দূর্গের সংস্কার করা হয়েছে। এর একটি প্যাভেলিয়নকে যাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে। এই যাদুঘরের নাম দেয়া হয়েছে পার্স যাদুঘর।

পার্স যাদুঘরে পরিণত করা প্যাভেলিয়নটি আগে রিসিপশান হল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তারপর খুব অল্প সময়ের জন্যে হলটি করিম খানের সমাধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অল্প সময়ের জন্যে বলার কারণ হলো করিম খানকে এখানে সমাধিস্থ করার অল্প পরেই কাজার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আগা মোহাম্মদ খান করিম খানের মৃতদেহ ঐ সমাধিস্থল থেকে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন । যার ফলে সমাধিস্থলটি আর সমাধি হিসেবে থাকলো না। পরে এই ঐতিহাসিক হলটিই যাদুঘরে পরিণত হয়। আর দূর্গের মূল ভবনটি বর্তমানে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচেছ । দুঃখজনক দিকটি হলো এটি এখন আর জনগণের জন্যে উন্মুক্ত নয় ।

শিরাজে প্রচুর মসজিদ আছে। এগুলোর মধ্যে ওয়াকিল মসজিদটি বেশ বিখ্যাত। ওয়াকিল বাজারে প্রবেশ করতে গেলেই এই মসজিদটি দেখতে পাওয়া যাবে। মসজিদটি আপনার ঐতিহাসিক দৃষ্টিকে দুইশো একত্রিশ বছর পেছনে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবো। সেই ১৭৭৩ খ্রীস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল মসজিদটি। অবশ্য ঊনবিংশ শতাব্দিতে অর্থাৎ কাজার শাসনামলে মসজিদটি পুণরায় সংস্কার করা হয় । এই মসজিদটি বেশ কয়েকটা কারণে বিখ্যাত। প্রথমত এর ভেতরকার নামাজের মূল জায়গাটি বেশ বড়ো। লম্বায় এটি পঁচাত্তর মিটার। আর প্রস্থে ছত্রিশ মিটার । দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যটি হলো নামাজের পুরো জায়গাটির উপরিভাগে রয়েছে সুন্দর সুন্দর গম্বুজ। আটচল্লিশটি কলামের উপরে এই গম্বুজগুলো স্থাপিত। গোলাকার কলামগুলোতে পাকানো দড়ির মতো পেঁচানো টাইলসের কারুকাজ নয়ন মুগ্ধকর।

তৃতীয় যে বৈশিষ্ট্যটি এই মসজিদটিকে দর্শনীয় করে তুলেছে , তা হলো সংস্কারকৃত এই মসজিদ কমপ্লেক্সের মাঝ উঠোনে পুরোণো জুমা মসজিদটির অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান রয়েছে। ঐ মসজিদটিকে বলা হয়ে থাকে খোদা খানা অর্থাৎ আল্লাহর ঘর। এই আল্লাহর ঘর বা খোদা খানার ডিজাইন মক্কার পবিত্র কাবাঘরের অনুকরণে করা হয়েছে। কাবাঘরের অনুসরণে নির্মাণ করার কারণে এর প্রতি মুসলমানদের আকর্ষণ এবং শ্রদ্ধা ব্যাপক বেড়ে গেছে। যাই হোক , মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী - বিশেষ করে এর ভেতর বাইরের বিচিত্র কারুকাজ , সেইসাথে মসজিদটির বিশালত্ব তাকে বিখ্যাত করে তুলেছে। শিরাজের ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে বর্তমানে তাই মসজিদ-ই ওয়াকিল বা ওয়াকিল মসজিদের নামটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

মসজিদ ই ওয়াকিল ছাড়াও শিরাজের আরো দুটি মসজিদ বেশ নামকরা। এগুলোর একটি হলো মসজিদ-ই শোহাদা, আরেকটি হলো মসজিদ-ই আতিক। মসজিদ-ই শোহাদা দ্বাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে নির্মিত হয়। তৎকালীন স্থানীয় শাসক সা'দ ইবনে জঙ্গী এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। এটিও ইরানের প্রাচীন বৃহত্তম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো। তবে দুঃখজনক ব্যাপারটি হলো ভয়াবহ ভূমিকম্প এই মসজিদটির সকল গর্ব ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে। এখন সেখানে এর স্মৃতিমূলক অস্তিত্বই কেবল অবশিষ্ট আছে।

মসজিদ-ই আতিক শিরাজের প্রাচীনতম মসজিদগুলোর মধ্যে আরেকটি দর্শনীয় স্থাপত্য। এটি ছিলো প্রাচীন জুমা মসজিদ। আটশো চুরানববই খ্রীস্টাব্দে মসজিদটি প্রথম নির্মিত হয়। এই মসজিদটিও বেশ কয়েকবার ভূমিকম্পের কবলে পড়েছিলো। যারফলে এর মূল কাঠামো প্রায় বিনষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমান যে কাঠামোটি লক্ষ্য করা যায় তার অধিকাংশই সপ্তদশ শতক বা তার পরে নির্মিত হয়েছে। এই মসজিদটির দর্শনীয় দিকটি হলো এর কোরআন ভবন। মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতরেই অর্থাৎ এর উঠোনের মাঝখানে একটি চারকোণা ভবন রয়েছে। প্রত্যেক কোণে এক একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এটি চতুর্দশ শতাব্দীতে তৈরী করা হয়েছিলো। তবে বিংশ শতাব্দীতে কোরআন ভবনের সংস্কার করা হয়। এখানে মহামূল্যবান কোরআনের কিছু কপি সংরক্ষিত আছে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ