জুন ১৭, ২০২১ ১৭:০৮ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! স্বাগত জানাচ্ছি রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে আমি গাজী আবদুর রশীদ। স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে গেলেই দৈহিক এবং মানসিক দুটি স্বাস্থ্যের বিষয় সামনে আসে। দু’রকমের স্বাস্থ্যের বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। তবে মানসিক স্বাস্থ্যকে সাধারণত মানুষ কম গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। অথচ মানসিক স্বাস্থ্য দৈহিক স্বাস্থ্যের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং বেশিই বলা চলে।

আমরা আজকের স্বাস্থ্যকথার আসরে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করব। আর এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য আমাদের সাথে রয়েছেন বিশিষ্ট সাইকোসোস্যাল কাউন্সিলর- ডা. নাসিমা বেগ ঝুনু। তিনি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরের স্বদেশ হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড এ কর্মরত আছেন। তো ডা. নাসিমা বেগম ঝুনু রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্য কথার আসরে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: ডা. নাসিমা বেগম ঝুনু- স্বাস্থ্য কথাটির সাথে- দৈহিক ও মানসিক দু’টি বিষয় আছে। মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি আসলে কি? বিষয়টি যদি স্পষ্ট করে বুঝিয়ে বলেন?

ডা. নাসিমা বেগম ঝুনু: ধন্যবাদ আপনাকে এবং রেডিও তেহরানের শ্রোতা, পাঠক ও দর্শকদের প্রতি আমার সালাম। আপনি চমৎকার একটি প্রশ্ন করছেন। যে প্রশ্নটি আসলেই বর্তমান সমাজের মানুষদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। স্বাস্থ্যের অন্যতম উপাদান হচ্ছে-মনের সুস্থতা বা মানসিক স্বাস্থ্য। আমরা সুস্থতা বলতে বুঝি রোগমুক্ত সুস্থ শরীর। কিন্তু শুধু তাই নয়-বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো,স্বাস্থ্য হলো শারীরিক, মানসিক এবং শান্তি-এই তিন অবস্থার একটা সু-সমন্ময়। যে মন সমাজের নানাবিধ চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে পারবে এবং যে মন পারবে তার চিন্তা এবং আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে। এই সবকিছু মিলেই মানসিক স্বাস্থ্য। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সময়ে বিপর্যয়ের সন্মুখীন হতে হয়। সেটা কর্মজীবনে হোক কিংবা ব্যক্তি জীবনে। অনেক সময় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আমাদের মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায়। আমাদের মনে অবসাদ ও বিষণ্ণতা আসে। স্বাভাবিক কাজগুলো স্বাভাবিকভাবে করতে পারি না, ব্যাহত হয়। তখনই মানসিক অসুস্থতার প্রশ্নটা আমাদের সামনে দেখা দেয়। সেই সময় প্রয়োজন মানসিক সুস্থতা। আর মানসিক সুস্থতার জন্যই প্রয়োজন মানসিক চিকিৎিসা।

রেডিও তেহরান: ডা. নাসিমা বেগম ঝুনু, মানসিক স্বাস্থ্য আসলে কি সে বিষয়টি আপনি চমৎকারভাবে বললেন। আপনি মনের সুস্থতার কথা নিয়ে এসেছেন। তাহলে কি মানসিক স্বাস্থ্য বলতে মনের কথা বললেন। তাহলে কি মন অসুস্থ হতে পারে?  আর মনের অুসস্থ হওয়া মানে কি মনের রোগ বা মানসিক রোগ? মনে শান্তি না থাকা মানে সেটি একটি অসুস্থতা-তাইতো?

ডা. নাসিমা বেগম ঝুনু: জ্বি, আপনি চমৎকারভাবে বিষয়টি ধরেছেন এবং প্রশ্নটি করেছেন। মনের দুটো স্তর আছে। একটি হচ্ছে- কনসাস মাইন্ড এবং অপরটি সাব-কনসাস মাইন্ড।

মনের স্তর দু'টি:

সচেতন মনের স্তরের ক্ষমতা বা শক্তি হচ্ছে- শতকরা ১০ ভাগ। আর সাব কনসাস মনের স্তরের ক্ষমতা বা শক্তি হচ্ছে শতকরা ৯০ ভাগ। একথাটি বলেছেন মনোবিজ্ঞানী সিগমন ফ্রাইড। আমাদের যত স্মৃতি(মেমোরি) আছে  সব সাব-কনসাস মাইন্ডে-গিয়ে জমা হয়। আর সেই সাব-কনসাস মনের স্তর থেকে অতীতের কোনো দুঃখ স্মৃতি রিলে হয়ে যখন আমাদের বর্তমান সময়ে চলে আসে তখন তা আমাদের মনকে অস্থির করে দেয়। এরফলে মনে চলে আসে একটা অস্থিরতা এবং বেদনা। তখনই মন অসুস্থ হয়ে পড়ে। একে তখন আমরা বলি মানসিক অসুস্থতা। আর এই যে মানসিক অসুস্থতা সেটা আমাদের শারীরিক অসুস্থতায় রুপান্তর হয়। এই রোগটির নাম হচ্ছে রুপান্তরধর্মী মানসিক রোগ বা ‘কনভারশন ডিসঅর্ডার’। মানুষ তার মনে অতীতের কোনো দুঃখজনক স্মৃতি বয়ে বেড়ায়। এতে দেখা যায় ঐ মানুষটির মধ্যে সবসময় একটা ব্যথা একটা পেইন কাজ করবে। মাইগ্রেনের পেইন হবে, ব্যাগ পেইন হবে, অস্থির লাগবে, মনটা তাঁর চঞ্চল হয়ে উঠবে। আর সেই চঞ্চলতা তাকে স্বাভাবিক কাজ কর্মে সমস্যা সৃষ্টি করবে। ফলে মনের এই অসুস্থতাই মানসিক অসুস্থতার অন্যতম কারণ।

ডা. নাসিমা বেগম ঝুনু, আপনি বললেন মনের অসুস্থতাই মানসিক অসুস্থতার অন্যতম কারণ।

তো শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! আপনারা এতক্ষণ মানসিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক রোগ কি সে সম্পর্কে বিশিষ্ট সাইকোসোস্যাল কাউন্সিলর- ডা. নাসিমা বেগম ঝুনুর মূল্যবান আলোচনা শুনলেন। আগামী আসরে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব নিয়ে বিশিষ্ট এই মনো চিকিৎসক আলোচনা করবেন সে আসরেও আপনাদের সঙ্গ পাওয়ার আশা রাখছি।

আজকের এ অনুষ্ঠানটির সাক্ষাৎকারগ্রহণ ও তৈরি করেছেন আমি গাজী আবদুর রশীদ।

সবশেষে-মার্গারেট ফুলারের একটি বক্তব্য তুলে ধরছি।'যদি জীবনকে সুন্দর করতে চাও, তবে স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাসগুলোকে নিষ্ঠার সাথে পালন করো।

সবাই ভালো ও সুস্থ থাকুন এই প্রত্যাশা করে স্বাস্থ্যকথার আজকের আসর এখানেই গুটিয়ে নিচ্ছি।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৭

ট্যাগ