জুলাই ১০, ২০২১ ১৭:২৭ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: ১০ জুলাই শনিবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি।

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবরের শিরোনাম:

  • রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি চারিদিকে পোড়া ধ্বংসস্তূপ,হাতে ছবি, ছোখে পানি–মানবজমিন
  • জানালার পাশে পোড়া মরদেহ দেখে বুক কেঁপে ওঠে স্বেচ্ছাসেবী রোজিনার -প্রথম আলো
  • রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি-নিহত শ্রমিকদের সারাজীবনের আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দাবি-কালের কণ্ঠ
  • সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান-এমডিসহ আটক ৮-যুগান্তর
  • অগ্নিকাণ্ডে দায়ীদের ছাড় দেয়া হবে না-র্যাব ডিজি-ইত্তেফাক
  • দুর্নীতিতেও রাজনীতিকদের হারিয়ে দিচ্ছেন আমলারা-বাংলাদেশ প্রতিদিন

এবার ভারতের কয়েকটি খবরের শিরোনাম:

  • মোদি মন্ত্রিসভার ৯০ শতাংশ কোটিপতি, ৪২ শতাংশের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলা-আনন্দবাজার
  • মধ্যরাতে রাজ্যপাল ধনখেড়র টুইট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসির পাত্র -আজকাল
  • বিধানসভায় ব্যর্থতার জের, বঙ্গ বিজেপির রাশ নিজেদের হাতে নিতে চাইছে আর এসএস-সংবাদ প্রতিদিন

এবার বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডির ফলোআপ খবরে আজকের প্রায় সবগুলো দৈনিক পাখির চোখ করে নানা শিরোনাম সামনে এনেছে। যুগান্তরের শিরোনাম সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান-এমডিসহ আটক ৮। খবরে বলা হয়েছে,নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ হত্যা মামলা করেছে। ঐ ঘটনায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ  ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকালে হাসেম ফুডসের ওই কারখানায় আগুন লাগে। এরই মধ্যে ৫২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার উদ্ধার অভিযান চলছে। মৃত্যুপুরীতে চলছে লাশের খোঁজ। সেখানে নিখোঁজ রয়েছেন অর্ধশাতাধিক শ্রমিক। 

রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেড কারখানায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। আজ সকালে ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় লাশের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে সকাল ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন লাশের সন্ধান পাননি তারা। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানার সামনে অপেক্ষা করছেন নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা। রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি নিহত শ্রমিকদের সারাজীবনের আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দাবি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের।

জানালার পাশে পোড়া মরদেহ দেখে বুক কেঁপে ওঠে স্বেচ্ছাসেবী রোজিনার-প্রথম আলো

চারতলায় দক্ষিণ-পূর্ব কোণের জানালার পাশে অনেকগুলো পোড়া মরদেহ দেখে বুক কেঁপে উঠেছিল স্বেচ্ছাসেবী রোজিনা খাতুনের। পোড়া মরদেহ দেখে কিছুই বোঝার উপায় ছিল না। একজন নারীর পুড়ে যাওয়া মুখাবয়ব এখনো চোখে ভাসছে রোজিনার।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপের পুড়ে যাওয়া হাসেম ফুডস লিমিটেড কারখানায় উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়েছেন রোজিনা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহুদিন থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছি। তবে হাসেম ফুডসের কারখানার চারতলায় পুড়ে অঙ্গার হওয়া এতগুলো মানুষের মৃতদেহ দেখিনি। পোড়া মানুষগুলো নারী না পুরুষ, তাও চেনার কোনো উপায় নেই। পুড়ে অঙ্গার হওয়া পা মৃতদেহের পাশে পড়ে ছিল।’এত পোড়া দেহ দেখেননি তাঁরা

২৫ বছর বয়সী যুবক আনোয়ার রানা বহুদিন থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে আসছেন।আনোয়ার রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছাসেবী, ঠিক আছে। কিন্তু আমি তো মানুষ। এমন মৃত্যু যে মানুষগুলো চেনার কোনো উপায় নেই। পুড়ে যাওয়া মানুষটি কি নারী না পুরুষ, তাও কেউ বুঝতে পারবে না। একসঙ্গে এত পোড়া মানুষ আমি দেখিনি। এমন মৃত্যু মানা যায় না।’

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর হাসেম ফুডস কারখানায় আগুনের সূত্রপাত। কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, ছয়তলা ভবনের নিচতলায় প্রথমে আগুন লাগে। পরে মাত্র ২০ মিনিটে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। তখন ভবনে আটকে পড়া শ্রমিকেরা বাঁচার জন্য কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন। তবে ভবনে যে এতগুলো মানুষ আটকে ছিল, এতগুলো মানুষ পুড়ে অঙ্গার হয়ে পড়ে আছে, সে তথ্য সবার সামনে আসে আগুন লাগার ২০ ঘণ্টা পর। আগুন লাগার পর নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধানে ছবি হাতে নিয়ে স্বজনেরা কারখানা ও হাসপাতালে ঘুরছেন।কারখানা থেকে উদ্ধার করা ৪৯ জনের মরদেহ রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে। নিখোঁজ শ্রমিকদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সিআইডির বিশেষ সুপার (ফরেনসিক) রোমানা আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মরদেহ থেকে দাঁত ও হাড় সংগ্রহ করব। দাঁত ও হাড়ের মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করতে কমপক্ষে ২১ দিন সময় লাগবে।’

এদিকে দৈনিকটি লিখেছে, নারায়ণগঞ্জে আগুনে ৫২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।তবে পুড়ে যাওয়া মরদেহ শনাক্তে ৩৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। হাসপাতালের সামনে স্বজনদের ভীড়।

কলকারখানায় দুর্ঘটনা এড়াতে ‘ভবন নিরাপত্তা’ নিশ্চিত জরুরি-প্রথম আলো

করোনা প্রকোপে ধুঁকছে দেশ। সঙ্গে রয়েছে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ে প্রাণহানি এবং প্রিয়জন হারানোর মর্মন্তুদ আহাজারি। মগবাজারে অনাকাঙ্ক্ষিত বিস্ফোরণে প্রাণহানির রেশ কাটতে না কাটতেই ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি হয়েছে অর্ধশতাধিক শ্রমিকের। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়। ততক্ষণে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করেছে ৫২টি তাজা প্রাণ।

গত দুই সপ্তাহে রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পৃথক একাধিক অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬০ জন, আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। তাঁদের বেশির ভাগই কলকারখানার শ্রমিক। একদিকে করোনা, অন্যদিকে কলকারখানায় অনাহূত অগ্নিকাণ্ডে নিভে যাচ্ছে শ্রমিকের জীবনপ্রদীপ। অগ্নিনির্বাপকযানের সাইরেন আর অসহায় মানুষের আর্তচিৎকারে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বলি হচ্ছেন সাধারণ শ্রমিক।

আগুন জ্বলছে কারখানায়। তখনো ভেতরে আটকা শ্রমিকেরা। বাইরে উদ্বিগ্ন স্বজনদের আহাজারি। গতকাল সকাল ৯টায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাশেম ফুডস লিমিটেডের কারখানার সামনে। 

আগুন জ্বলছে কারখানায়। তখনো ভেতরে আটকা শ্রমিকেরা। বাইরে উদ্বিগ্ন স্বজনদের আহাজারি। গতকাল সকাল ৯টায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাশেম ফুডস লিমিটেডের কারখানার সামনে। 

২০১৩ সালের রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডাইফ), আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সমন্বিত উদ্যোগে গ্রহণ করা হয় জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনা (এনটিপিএ)। ২০১৮ সালে এসব প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের জন্য রিমেডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল (আরসিসি) গঠন করা হয়। বায়ার জোটভিত্তিক সংগঠনের বহির্ভূত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেড় হাজারের অধিক তৈরি পোশাক কারখানার দুর্ঘটনা রোধকল্পে কাজ করছেন সরকারি কারেক্টিভ অ্যাকশন প্ল্যান (ক্যাপ) বাস্তবায়ন প্রকল্পের ৬০ জন বিশেষায়িত প্রকৌশলী। নাজুক অবকাঠামো, ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, কারখানার ডিজাইন ড্রয়িং, তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ইত্যাদি তদারক করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম জেলাকেন্দ্রিক তৈরি পোশাক কারখানার পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন ক্যাপ বাস্তবায়ন প্রকল্পের প্রকৌশলীরা। তাঁদের নিবিড় তদারকিতে এই ১ হাজার ৫০০ তৈরি পোশাক কারখানায় করোনাকালসহ গত তিন বছরে শূন্য প্রাণহানি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে আরসিসি।

মহামারি করোনা সম্পর্কিত খবরে ইত্তেফাক লিখেছে,সাতক্ষীরায় করোনা উপসর্গে ৬ নারীসহ আরও ১০ জন মারা গেছে।বরিশাল শেবাচিমের করোনা ইউনিটে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে মারা গেছে ১৮ জন। খুলনায় আরো ১০।

মতামত-স্বাস্থ্যসেবার তথ্য কেন তাঁরা লুকিয়ে রাখতে চান-প্রথম আলো

৯ জুলাই পত্রিকায় স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পর্কে দুটি ভিন্নমুখী খবর ও বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। একটি হলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনাকালে কত বেশি কাজ করেছে, বিজ্ঞাপন আকারে তার বয়ান। আরেকটি ঢাকা জেলার সিভিল সার্জনের নির্দেশ। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞাপনে করোনার ভয়াবহতা ঠেকাতে বিধিনিষেধ ‘আন্তরিক ও কঠোরভাবে’ পালনের জন্য দেশবাসীর কাছে আকুল আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে তাদের এ বয়ান আবেদনের মধ্যে সীমিত ছিল না। সংসদের ভেতরে ও বাইরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কে যেসব ‘ভুল’ তথ্য ও ঢালাও সমালোচনা করা হয়েছে, তার সমুচিত জবাব দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে করোনাকালে তারা কী কী কাজ করেছে, আরও কী কী করার পরিকল্পনা আছে, তারও বিশদ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে এতে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞাপনে বলা হয়: গত কয়েক মাসে তারা ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ডোজ টিকা কিনেছে, ৬৫ লাখ ৬ হাজার ৭৮১ জনের কোভিড পরীক্ষা করেছে, বিভিন্ন হাসপাতালে ১ লাখ করোনা রোগীর চিকিৎসা হয়েছে, সারা দেশে ১০০টি অক্সিজেন সেন্ট্রাল লাইন স্থাপন, ১৭টি ল্যাব স্থাপন করেছে বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বাংলাদেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসাবে পাক্কা পাঁচ মাস হয়েছে। এই সময়ে ১ কোটি ডোজ টিকা দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আত্মসন্তুষ্টির শেষ নেই। আর ভারতে এক দিনেই ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষকে টিকা দিয়েছে। আমাদের করোনার পরীক্ষার অবস্থাও নাজুক। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তার খুব কমই পরীক্ষা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বস্তি এলাকায় জরিপ করে দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এর অর্থ এদের কোনো না কোনো সময় করোনা হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা করা হয়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, করোনাকালে তারা ৪০ হাজার লোকবল নিয়োগ দিয়েছে। এই ৪০ হাজার লোকবলের মধ্যে ২১ হাজারই টিকার স্বেচ্ছাসেবক। ১৪ হাজার নার্স ও ৪ হাজার চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু তারা বলেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কত হাজার পদ এখনো খালি আছে। সম্প্রতি পত্রিকান্তরের খবরে বলা হয়, ৪২ হাজার পদ খালি আছে। গত বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সমকাল প্রতিবেদন করেছিল, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ২০ হাজার ৩৮৩টি এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে ৮ হাজার ৫৯টি নন-মেডিকেল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। শুক্রবার ইত্তেফাক-এর খবরে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জের ৫০ শয্যার সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মাত্র তিনজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে।

কেবল লোকবল নয়, হাসপাতালগুলোতে অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির ঘাটতিও আছে। গত ১ এপ্রিল প্রথম আলোর খবর ছিল, করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ৩১ জেলার মধ্যে ১৫টিতেই নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) নেই। গত বছরের ২ জুন একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রতিটি হাসপাতালে ভেন্টিলেটর স্থাপন ও উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা বাড়াতেও বলা হয়েছিল। ১০ মাসেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি।

উল্লেখ্য, শ্বাসতন্ত্রের রোগ কোভিড-১৯-এর জটিল রোগীদের জন্য আইসিইউ ও কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার সুবিধা বা ভেন্টিলেশন জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৪০ শতাংশের উপসর্গ থাকে মৃদু। মাঝারি মাত্রার উপসর্গ থাকে ৪০ শতাংশের। তীব্র উপসর্গ থাকে ১৫ শতাংশের। আর জটিল পরিস্থিতি দেখা যায় বাকি ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে। তীব্র উপসর্গ ও জটিল রোগীদের প্রায় সবার এবং মাঝারি উপসর্গ রয়েছে এমন অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। জটিল প্রায় সব রোগীর আইসিইউ শয্যার পাশাপাশি ভেন্টিলেশন দরকার হয়।

শুক্রবার প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ‘আইসিউ জোটেনি, চলে গেলেন রূপা’ শিরোনামের খবরটি পড়ে মন বিষণ্ন হলো। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন রূপা খাতুন নামের এক নারী। এক মাসের বেশি সময় ধরে তিনি সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা গুরুতর। কিন্তু আইসিউতে যেতে পারছিলেন না শয্যাসংকটের কারণে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা আছে মাত্র ২০টি। অপেক্ষমাণদের তালিকায় রূপার অবস্থান ছিল ৯৫। কিন্তু আইসিইউতে নেওয়ার আগেই বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যে কর্তাব্যক্তিরা বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেছেন, তাঁরা কি জানেন আইসিইউর শয্যা না থাকায় আমরা কত রূপাকে হারিয়েছি? স্বাস্থ্যসেবা তো পরিসংখ্যান নয়। স্বাস্থ্যসেবা হলো মানুষকে বাঁচানো।

করোনা মহামারি চলাকালে তথ্য গোপন করতে বলার এ নির্দেশ কেবল তথ্য অধিকার আইনের পরিপন্থী নয়, মানবতাবিরোধীও।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেছেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে আমাদের মৌলিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহে অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার ঘাটতি আছে। সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসায় অনেক জেলায় আইসিউ নেই। এসবের ফলে রোগীর মৃত্যু বাড়ছে। (প্রথম আলো, ৮ জুলাই ২০২১)

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যখন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সাফল্যের তথ্য জনগণকে জানাচ্ছে, তখনই ঢাকা জেলার হাসপাতালগুলোর করোনা রোগীদের তথ্য গণমাধ্যমকে না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মাঈনুল আহসান। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) ঢাকা জেলার হাসপাতাল, জেলার সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, সব ধরনের মাতৃসদন কেন্দ্র, হেলথ ক্লিনিকসহ এ ধরনের সব প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল অফিসারদের এ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, ঢাকা জেলার হাসপাতালগুলোতে বিরাজমান কোভিড-১৯ মহামারিকালীন পরিস্থিতিতে সিভিল সার্জন ছাড়া অন্য কাউকে টিভি চ্যানেল কিংবা কোনো প্রকার প্রিন্ট মিডিয়ার কাছে স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক কর্মকাণ্ড অথবা রোগ ও রোগীদের সম্পর্কে কোনো ধরনের তথ্য আদান-প্রদান বা মন্তব্য না করার অনুরোধ করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে প্রিন্ট মিডিয়ার ব্যক্তিদের রোগীর ছবি তোলা, ভিডিও করা অথবা সাক্ষাৎকার ধারণ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা যাচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গের শামিল। কোনো তথ্য-উপাত্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে ঢাকা সিভিল সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলো। (বাংলা ট্রিবিউন, ৯ জুলাই ২০২১)

করোনা মহামারি চলাকালে তথ্য গোপন করতে বলার এ নির্দেশ কেবল তথ্য অধিকার আইনের পরিপন্থী নয়, মানবতাবিরোধীও। মানুষ গণমাধ্যমের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের হালনাগাদ তথ্য পেতে চায়, সিভিল সার্জনদের দপ্তরে দপ্তরে গিয়ে তাদের পক্ষ তথ্য সংগ্রহ সম্ভব নয়। আর ঢাকা সিভিল সার্জন কি না বলে দিলেন গণমাধ্যম বা সাংবাদিকদের কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না। কথা বলা বারণ। তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বোচ্চ ব্যক্তি নন। তিনি যেভাবে তাঁর অধীনদের তথ্য না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, তার ওপরে যাঁরা আছেন, তঁারাও তো অনুরূপ নির্দেশ দিয়ে বলতে পারেন, সিভিল সার্জন কোনো তথ্য দিতে পারবেন না। তথ্য পেতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কিংবা মন্ত্রী-সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

এর অর্থ স্বাস্থ্যসেবার তথ্য থেকে জনগণকে বঞ্চিত করা। সেই অধিকার সিভিল সার্জনকে কে দিয়েছে? এটি কি ঢাকার সিভিল সার্জন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দিয়েছেন, না নির্দেশিত হয়ে, সেটাও জানা দরকার। গত বছর করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে যখন করোনা রোগীর চিকিৎসা নিয়ে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে হযবরল অবস্থা চলছিল, তখনো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ রকম নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল।

যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজেকে ‘সফল ও বহির্বিশ্বে বিপুলভাবে প্রশংসিত’ দাবি করে, তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এত লুকোচুরি কেন? কেন তারা স্বাস্থ্যসেবার তথ্য লুকিয়ে রাখতে চায়?

ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত

মোদি মন্ত্রিসভার ৯০ শতাংশ কোটিপতি, ৪২ শতাংশের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলা-রিপোর্ট-আনন্দবাজার পত্রিকার এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে,বুধবার নয়া মন্ত্রিসভা ঘোষণার পরই মন্ত্রীদের নির্বাচনী হলফনামার তথ্য তুলে এ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে পর্যবেক্ষণ সংস্থা এডিআর।

এদিকে দৈনিকটির অপর এক খবরে লেখা হয়েছে, করোনার মধ্যেই কেরলে জিকা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলা সতর্ক। এ বিষয়ে বৈঠকে বসবে বিশেষজ্ঞ দল বলে জানানো হয়েছে।আর তামিলনাড়ুতে লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে ১৯ জুলাই করা হয়েছে।

মধ্যরাতে রাজ্যপাল ধনখেড়র টুইট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসির পাত্র- আজকালের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে,মধ্যরাতে সাংবিধানিক দায়িত্ব নিয়ে রাজ্যপাল ধনখড়ের টুইট। এখানে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই একাধিকবার রাজ্য সরকারের সাথে সংঘাতে জড়িয়েছেন রাজ্যাপাল।বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে সেই সংঘাত চরমে পৌঁছেছে। সম্প্রতি বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের ভাষণ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বে সরগরম হয়ে উঠেছিল বঙ্গ রাজনীতি।তারপর দিল্লিাতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করলেন-রাজ্যের সাংবিধানিক কাঠামো ভে    ঙে পড়েছে। এবার মধ্যরাতে সাংবিধানিক দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে আচমক টুইট করায়-রাজনৈতিকমহল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করলেও নেটিজেনদের একাংশ মশকরা করেছেন রাজ্যপালকে নিয়ে। তারা বলছেন এতরাতে ঘুম না আসার কারণেই রাজ্যপালের এ টুইট।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ