ওমিক্রন আতঙ্কে সারাবিশ্ব: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র হুঁশিয়ারি, সতর্ক বাংলাদেশ
সারা বিশ্বে এখন নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া এ ধরনটি ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরবসহ ডজন খানেক দেশে বিস্তার লাভ করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে অত্যন্ত দ্রুত এবং সহজে সংক্রমিত করতে সক্ষম। যার ফলে এর বিরুদ্ধে টিকা কম কার্যকর হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এ নিয়ে দেশে দেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছেই।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ২৪০ জন প্রবাসী নিখোঁজ
এদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ইতোমধ্যে ২৪০ জন প্রবাসী দেশে এসেছেন। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, মোবাইলও বন্ধ। তবে তাদের কাউকে ছাড়া হচ্ছে না, খুঁজে বের করা হবে।’
গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাইগামী যাত্রীদের টেস্টিং ফ্যাসিলিটিস পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহিদ মালেক বলেন, এখন থেকে যাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের পাঠানো হবে, তাদের পাসপোর্ট জমা রাখা হবে। এছাড়া কোনো হোটেল থেকে কোয়ারেনটাইনে থাকা কেউ পালিয়ে গেলে ওই হোটেলকেও জরিমানা করা হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন হলে, সামরিক বাহিনীর তদারকিতে রাখব, আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ টপ সুপারভিশনে রাখবে।
বাংলাদেশে অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ
তাছাড়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত রাতে একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে সরকার সাময়িকভাবে অন-অ্যারাইভাল ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সাময়িকভাবে অন-অ্যারাইভাল ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে যাদের ভিসা থাকবে না এবং অন-অ্যারাইভাল ভিসা প্রত্যাশা করবেন, কোনো এয়ারলাইনস যেন তাদের বোর্ডিং পাস না দেয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
দক্ষিণ আফ্রিকা ও আশেপাশের দেশগুলোতে যারা রয়েছেন তাদের দেশে আসার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করার জন্য সবগুলো মিশনকে বলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্টমন্ত্রী। তিনি জানান, যাদের দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া আছে এবং টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ থাকবে তারা দেশে এলে, তাদের ১৪ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
ভ্রমণসংক্রান্ত বিধি-নিষেধ জারি
এ অবস্থায় করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে নতুন কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ভ্রমণসংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তি জারি বেবিচক জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, লেসোথো, বতসোয়ানা, ইসোয়াতিনি, ঘানা ও নামিবিয়া- এই সাতটি আফ্রিকান দেশ থেকে বাংলাদেশে আগত যাত্রীদের বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ খরচে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এই সাত দেশ থেকে কেউ বাংলাদেশে আসতে চাইলে উড়োজাহাজে ওঠার আগেই কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য সরকার নির্ধারিত হোটেল নির্বাচন করতে হবে।
বাংলাদেশে পৌঁছার পর কোয়ারেন্টাইনে থাকার সময়ে যাত্রীকে সাত দিন পর একবার এবং ১৪ দিন পর দ্বিতীয়বার করোনার পরীক্ষা করা হবে। এ দুইবারের করোনা পরীক্ষার খরচ যাত্রীকেই বহন করতে হবে।
নতুন নির্দেশনা অনুসারে, হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় সপ্তম দিনে করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এলে যাত্রীকে আলাদা করে আইসোলেশনে পাঠানো হবে। আর নেগেটিভ রিপোর্ট এলে হোটেলে বাকি সাত দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়ে। ১৪তম দিনে দ্বিতীয় করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট এলে যাত্রী কোয়ারেন্টাইন সেন্টার ত্যাগ করতে পারবেন।
বেবিচকের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে , যেকোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে আসতে হলে যাত্রার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ সনদ থাকতে হবে। এর আগে এ সময়সীমা ছিল ৭২ ঘণ্টা। তবে ১২ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে করোনা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক নয়।
বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশনসের সদস্য গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী এম জিয়া উল কবির স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, এ নির্দেশনা আগামীকাল শনিবার থেকে কার্যকর হবে।
ভারতে পৌঁছে গেছে ওমিক্রন
ওদিকে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ভারতেও পৌঁছে গেছে। ভারতের কর্ণাটকে দুই ব্যক্তির দেহে ওমিক্রন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, করোনার নতুন ধরন শনাক্তের আগে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিয়েছিল ভারত। কিন্তু এখন সে পরিকল্পনা বাতিল করে পুনরায় নতুন তারিখ নির্ধারণ করবে দেশটি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোকে করোনা পরীক্ষা বৃদ্ধি করতে বলেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র হুঁশিয়ারি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন মোকাবেলায় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোকে সতর্ক করে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক তাকেশি কাসাই আজ শুক্রবার ম্যানিলা থেকে একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন বলেছেন, করোনার নতুন ধরন মোকাবিলায় প্রত্যেকটি দেশ ও সম্প্রদায়কে অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ওমিক্রন মোকাবিলায় শুধু সীমান্ত সম্পর্কিত পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করা উচিত হবে না। দ্রুত সংক্রমণশীল এ ধরন ঠেকাতে প্রস্তুতির বিকল্প নেই। প্রস্তুতি হিসেবে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সক্ষমতা বাড়ানো ও টিকা কর্মসূচি ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন ডব্লিউএইচও’র আঞ্চলিক পরিচালক।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।