নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে সংসদ উত্তপ্ত: বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে
(last modified Tue, 29 Mar 2022 12:04:41 GMT )
মার্চ ২৯, ২০২২ ১৮:০৪ Asia/Dhaka

বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আজ জাতীয় সংসদে বলেছেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে আসতে শুরু করেছে। আজ (মঙ্গলবার) স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে সরকারি দলের সদস্য শফিউল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা জানান।

তিনি বলেন, আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে পণ্য মূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে আসতে শুরু করেছে।

এর আগে গতকাল (সোমবার) ১৭তম অধিবেশনের প্রথম দিনেই নিত্যপণ্যের চড়া মূল্য ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জাতীয় সংসদ। সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। তবে সরকারর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ দাবি করেছেন, সরকারের পদক্ষেপের ফলে বাজারের নিত্যপণ্যের দাম কমে এসেছে। 

আজকেও জাতীয় পার্টির সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, দেশে প্রায়ই নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর দাম হঠাৎ করে উর্ধ্বমুখী হয়ে যায়। এর কারণ হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং অনেক সময় প্রাকৃতিক কারণে উৎপাদন ব্যাহত হলে দেশের অভ্যন্তরে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হয়ে থাকে বলে উল্লেখ করেন।

মন্ত্রী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় সভা, ‘দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্ভাবাস সেল’র মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশন, টিসিবি, এবং কৃষি বিপনন অধিদপ্তর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

এ ছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকাসহ সকল মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এই অধিদপ্তর প্রত্যেক মাসে সারাদেশে তিনশর বেশি বাজার পরিদর্শন ও অভিযান পরিচালনা করছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, পণ্যের মূল্য নিয়ে কেউ যাতে মনোপলি বা অলিগোপালি অবস্থার সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য প্রতিযোগিতা কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। 

সরকারি দলের সাংসদ এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সম্প্রতি দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।

পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পরিকল্পনা নেই সরকারের  

ওদিকে, মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে কৃষি সচিব মো. ছায়েদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আপাতত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পরিকল্পনা নেই সরকারের।   সামনে পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। এই সময়ে পেঁয়াজের দাম যাতে না বাড়ে, সেটিও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে থাকি। এখন পর্যন্ত কৃষক পেঁয়াজের ভালো দাম পাচ্ছে।

আমদানিনির্ভর পণ্যবাজার নিয়ে উদবিগ্ন সরকার

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশের আমদানিনির্ভর পণ্য বাজার নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে জ্বালানি তেল, গম ও ভুট্টা আমদানি নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।

যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। 'বাংলাদেশের আমদানিনির্ভর পণ্যের বাজারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব' সংক্রান্ত ওই বিশেষ প্রতিবেদনে সরকারের এ উদ্বেগ ফুটে উঠেছে।

প্রতিবেদনটি ২১ মার্চ বাণিজ্য, কৃষি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ টন গম আমদানি করে, যার দুই তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। আর মোট ভুট্টা আমদানির ২০ শতাংশ আসে এই দুই দেশ থেকে। যুদ্ধের কারণে ইউরোশিয়ার অন্যতম বাণিজ্যিক রুট কৃষ্ণ সাগরে কোনো ধরনের জাহাজ প্রবেশ করছে না। ফলে দেশ দুটি থেকে গম ও ভুট্টা আমদানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্পসহ দেশের কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে রাশিয়ার অর্থায়ন রয়েছে। রয়েছে কারিগরি বিষয় ও যন্ত্রপাতির সম্পৃক্ততা। বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল বা গ্যাস আমদানি করে না। তবে যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। যা অন্যান্য বাজারকে প্রভাবিত করে জ্বালানি তেল ও এলএনজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছয়টি সুপারিশ পেশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আগেই বিভিন্ন দেশ থেকে যথেষ্ট পরিমাণে গম ও ভুট্টা আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। রাশিয়ার ব্যবস্থাপনা ও অর্থায়নে দেশে চলমান প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি কৃষ্ণ সাগরের আশপাশের দেশগুলোতে যুদ্ধকালীন আকাশপথে পণ্য পরিবহন করা, দেশে বাড়তি গম ও ভুট্টা চাষের ব্যবস্থা করা এবং নতুন নতুন দেশে রপ্তানি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ ছাড়া যুদ্ধ নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যাতে 'অপপ্রচার' বা 'গুজব' ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এ খাতে অতিরিক্ত ভর্তুকি দিয়ে অথবা দাম বাড়িয়ে সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ