ঈদযাত্রা
ঈদযাত্রায় যাত্রীদের চাপে মহাসড়কে তীব্র যানজট, আছে মর্মান্তিক দূর্ঘটনাও
মহামারী করোনার কারণে গত দু’ বছর ঈদে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামে স্বজনদের সাথে মিলিত হতে পারেনি। পরিস্থিতি উন্নতি হবার কারণে তাই এবারের ঈদযাত্রায় ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। পথের বিড়ম্বনা আর ভোগান্তি ঠেলে পথে নেমেছে ঘরমুখো লাখো মানুষ।
নৌ, রেল ও সড়ক পথের কোনো যানবাহনেই তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শুক্রবার ভোর থেকেই বাস-লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশন লোকে লোকারণ্য। এ অবস্থার মধ্যে তীব্র গরমের মধ্যে কেউ কেউ সাওয়ার হয়েছেন বাস, ট্রেন ও লঞ্চের ছাদে। পণ্যবাহী ট্রাক-মিনিট্রাক এমনকি কাভার্ডভ্যানেও গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরছে নিম্নআয়ের মানুষ। প্রাইভেট কার মাইক্রোবাস আর মোটর সাইকেলে চেপেও মানুহ পথে নেমেছে।
রাজধানীর বাস টার্মিনাগুলিতে আস যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। অধিকাংশ যাত্রীই পথের যানজট এড়াতে ভেঙে ভেঙে যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্বল্প দূরত্বের টিকিট সংগ্রহ করছেন। আবার বিভিন্ন দূরপাল্লার বাসের টিকিটও সহজেই মিলছে। যাত্রীরা জানিয়েছেন, কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই এসি, নন এসি বাসের টিকিট কিনতে পারছেন। টিকিট কাউন্টারের বিক্রেতারা বলছেন, সকালে ভিড় কম থাকলেও দুপুরের দিকে কিছুটা বেড়েছে। এ বছর ঈদের আগে-পরে ১০ দিন পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখায় সড়কে যানজট কিছুটা কম। পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ভারি বর্ষণসহ বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কম হবে ।
তবে, আবহাওয়া্র পুর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ থেকে ৪ মে পর্যন্ত সারা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে বজ্রসহ ঝড়-বৃষ্টির একই সঙ্গে কিছু কিছু অঞ্চলে মৃদুতাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক -সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও আশা করেছেন, এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিতেই কাটবে। এবারের অবস্থা অতীতের যেকোনা সময়ের চেয়ে ভালো। আজ শনিবার বেলা ১১টায় ঈদযাত্রা পরিস্থিতি দেখতে রাজধানীর মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে এসে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এবারের অবস্থা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। এমনকি গাজীপুরের যেসব এলাকায় সংকট হতো, সেখানেও গাড়ি চলাচল করছে। সারা দেশেই সড়ক, মহাসড়ক প্রস্তুত আছে। আমার তো মনে হয়, এবার স্বস্তিতেই কাটবে।’
তবে সেতুমন্ত্রীর স্বস্তির তোয়াক্কা না করেই, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত সড়কে থেমে থেমে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। চালকদের দাবি, এ সড়কের হাতিয়া থেকে সেতু পূর্ব পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে অধিকাংশ যানবাহনকে সময় গুনতে হচ্ছে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা।
পোশাক কারখানাগুলিতে একযোগে ছুটি ঘোষণায় গত দুদিনের চেয়ে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। অতিরিক্ত মানুষের চাপে মহাসড়কে বেড়েছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। ফলে গাড়ি বিকলসহ ঘটছে দুর্ঘটনা। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের।এর ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পাড় পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার সড়কে থেমে থেমে যানজটে সৃষ্টি হচ্ছে। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ঘরে ফেরা মানু্ষদের।

এ ছাড়া কদিন থেকেই ঢাকা-সিরাজগঞ্জ সড়কে অন্তত ২৪ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট চলছে। এতে দুর্ভোগে পড়েন ঘরমুখো মানুষ। সিরাজগঞ্জ জেলার ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ, চান্দাইকোনা এলাকায় একটি সেতুতে সমস্যা ও পাঁচলিয়াতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে কিছুক্ষণ যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে যানজট তৈরি হয়। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা সহ বিভিন্ন অংশে শুক্রবার সকাল থেকে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। এ সময় তীব্র গরমে যানজটে আটকা পড়ে চালক ও যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বিশেষ করে নন-এসি পরিবহণের যাত্রীদের নাভিশ্বাস ওঠে। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, ঈদকে সামনে রেখে মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহন চলায় তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ছোটখাটো সড়ক দুর্ঘটনা ও গণপরিবহণ চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালোনা এ সংকট আরও বেড়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতুর টোলপস্নাজা পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটারে সকাল ১০টা থেকে থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ঈদে ঘরমুখী বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা গরমে ঘেমে নেয়ে ওঠেন। যানবাহনে থাকা নারী ও শিশু যাত্রীরা প্রচন্ড গরম ও খাবার পানির সঙ্কটে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ঈদের আনন্দ শোক যাত্রায় পরিনত
তবে সড়ক এবং নৌপথে দুর্ঘটনায় বেশ কিছু প্রাণহানির কারনে অনেকের ঈদের যাত্রা পরিবারের জন্য শোকে পরিনত হয়েছে।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের শ্রীনগরে বাস-পিকআপভ্যানের ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ঘটনাস্থলেই পিকআপ ভ্যান আরোহী তুষার রাজবংশী (৪৫) নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে শ্রীনগর উপজেলার চালতিপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে মাজড়া নামক স্থানে শনিবার সকালে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।
নিহত ব্যক্তি একজন সেনা সদস্য। তার নাম ইমরান হোসেন (২০)। তিনি ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে মোটরসাইকেল যোগে গ্রামের বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দারাজহাট যাচ্ছিলেন। রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে ট্রাক ও প্রাইভেটকারের সংঘর্ষে প্রাইভেটকারের চালক মাহবুবর রহমান নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকালে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া ইউনিয়নের আমতলা মোড় এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে সিএনজি-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে গণি বেপারী (৫৫) নামে এক মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুরে গফরগাঁও-ভালুকা সড়কে হাটুরিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাসের সাথে সংঘর্ষে মোটর সাইকেলের চালক আল আমিন (৩০) নিহত হয়েছে। শনিবার ভোরে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে কাঁচপুর সিনহা গার্মেন্টের সামনে এ দূর্ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় বাস ও ব্যাটারি চালিত রিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন। শনিবার (৩০ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে হাটহাজারী-নাজিরহাট সড়কে খণ্ডলিয়ার ঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পদ্মায় উল্টে গেছে স্পীড বোট
ওদিকে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের পদ্মা সেতুর কাছে বাংলাবাজারগামী একটি স্পিডবোট ঢেউয়ের ধাক্কায় উল্টে যায়। স্পিডবোটটিতে ১১ জন যাত্রী ছিলেন। খবর পেয়ে স্থানীয় জেলেনৌকা ও নৌপুলিশের টিম গিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার করে। তবে স্থানীয়দের ধারণা, এখনো কয়েকজন নিখোঁজ থাকতে পারে।#
পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/এমবিএ/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।