পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনার তথ্য আছে: শেখ হাসিনা
(last modified Wed, 15 Jun 2022 11:19:27 GMT )
জুন ১৫, ২০২২ ১৭:১৯ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনার তথ্য আছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছিল তারা এমন কিছু ঘটাতে পারে যাতে আমরা উদ্বোধনটা করতেই না পারি।

আজ (বুধবার) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায় আগুনের ঘটনাকে রহস্যজনক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে আমাদের নজর রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শফিকুর রহমানসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, তিন বাহিনী প্রধান, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও এসএসএফের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, একটি ব্যাংকের এমডি পদের জন্য দেশের সঙ্গে বেঈমানি করেছিল ড. মোহাম্মদ ইউনূস। তার কারণেই বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল।

বিএনপি যা বলছে

এদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, বেগম জিয়ার শাসন আমলে পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই ও ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি কার্যালয়ে জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় মির্জা ফখরুল এমন দাবি করে  বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রাথমিক চিন্তাভাবনা শুরু হয় ১৯৯৪-৯৫ সালে। সেই সময় বিশ্বব্যাংক ও জাপানের সঙ্গে আলোচনা হয়। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতেই পদ্মা সেতুর প্রাথমিক ফিজিবিলিটি (সম্ভাব্যতা যাচাই) রিপোর্ট তৈরি হয় ২০০৪-০৫ সালে। সেখানেই সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়। এ বিষয়গুলো আপনারা একটু পড়াশোনা করলেই জানতে পারবেন

মির্জা ফখরুল বলেন, পদ্মা সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। পরে তা বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। তাহলে এত টাকা কোথায় গেল?’

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ভারতের আসাম রাজ্যে লোহিত নদীর ওপর নির্মিত ভূপেন হাজারিকা সেতু নির্মাণ হয়েছে মাত্র ৮ হাজার কোটি টাকায়। এটি ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম সড়ক সেতু।  বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয় দিয়ে আরও তিনটি পদ্মা সেতু বানানো যেত।’

‘সরকার জনগণের জন্য উন্নয়ন করছে না। নিজেদের পকেট ভরতে ও টাকা পাচার করতে উন্নয়ন করছে। সেখানে সাধারণ জনগণের কোনো উন্নয়ন নেই।’ অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আপনারা যাবেন কি না— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ প্রশ্ন ওবায়দুল কাদের সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেন। তাঁর নেত্রী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়া যদি পদ্মা সেতুতে যায় সেখান থেকে তাকে যদি টুস করে ফেলে দেওয়া যায় তাহলে ঠিক হয়! এখন আপনি তাঁকে হত্যার হুমকি দেবেন আর তিনি সেখানে হত্যার হুমকির মুখে নিয়ে সেখানে যাবেন— এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। যে সেতু থেকে বেগম জিয়াকে ফেলে দিয়ে হত্যার হুমকি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেই অনুষ্ঠানে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’

পদ্মা সেতু

২৫ জুন সেতু উদ্বোধন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জুন সকাল ১০টায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে নামফলক উন্মোচন ও সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন তিনি। এর পর গাড়িতে চড়ে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে আরেকটি উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বেলা ১১টায় মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ীর ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাট এলাকায় আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেবেন। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উন্মোচন করা হবে। মাওয়া প্রান্তে থাকবে প্রধানমন্ত্রীর ম্যুরাল। 

অন্যদিকে কাঁঠালবাড়ী প্রান্তে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের জনসভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতি থাকবে। সেখানে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকবে। 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, কাঁঠালবাড়ীর জনসভা ঘিরে শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষের সমাগম ঘটানো হবেচিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন জানিয়েছেন, এ জনসভাসহ অন্যান্য আয়োজন হবে বর্ণাঢ্য ও ঐতিহাসিক।

দেশব্যাপী সর্বাত্মক সতর্কতা

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে বিভ্রান্তিকর তথ্য কিংবা গুজব যাতে কেউ ছড়াতে না পারে, সে জন্য সাইবার প্যাট্রোলিং পুরোপুরি সজাগ। প্রস্তুত ডগ স্কোয়াড; তৈরি হয়ে আছে পুলিশের বিশেষ অস্ত্র এবং কৌশল ইউনিট-সোয়াট। পুলিশের বিভিন্ন বিশেষায়িত ইউনিট সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬ হাজার সদস্য থাকবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায়। সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কড়া নজর। এই পটভূমিতে সেতু উদ্বোধন নির্বিঘ্ন করতে গতকাল মঙ্গলবার থেকেই সারাদেশে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) হায়দার আলী খান বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে আগেও নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছিল। শুরু থেকে অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজেদের অর্থায়নের এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। উদ্বোধন ঘিরে মানুষের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক উদ্দীপনা। বিদেশে বসবাসরত বাঙালিরাও উচ্ছ্বসিত। এ ধরনের একটি মহা আয়োজন সুন্দরভাবে শেষ করতে দেশজুড়ে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। সেতুর উদ্বোধনস্থল ছাড়াও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারের কাছে গেছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। গতকাল পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাঠানো হয় এ নির্দেশনা। 

জমকালো আয়োজনের ঘোষণা এসেছিল আগেই। ৬৪ জেলায় থাকবে ডিজিটাল ডিসপ্লে। সেতু উদ্বোধনের আগে-পরে ও অনুষ্ঠানের দিন যাতে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। অতীতেও নানা সময় বড় ধরনের উৎসব আয়োজন ঘিরে রয়েছে অপ্রীতিকর ঘটনার নজির। শুরু থেকে পদ্মা সেতু ঘিরে যেহেতু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল, তাই এই আয়োজন নিয়ে থাকছে তীক্ষষ্ট নজরদারি। এরই মধ্যে চট্টগ্রামে ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড, একাধিক ট্রেনে পরপর আগুনের ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা, নাকি নাশকতা, তা নিয়েও তদন্ত চলছে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ