গার্ডারকাণ্ডে শেখ হাসিনা মর্মাহত: দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ
বাংলাদেশের রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় ৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করতে এবং শাস্তির আওতায় আনতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকের পর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরার ঘটনায় মর্মাহত ও কষ্ট পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, ঠিকাদারের দায়িত্ব হলো, এ ধরনের কাজ যথাযথভাবে করা। তারা নিরাপত্তা না নিয়ে কীভাবে এ ধরনের কাজ করতে পারে? সড়ক বন্ধ না করে তারা কীভাবে এ কাজ করল। কেন এটা হলো, এটা ক্ষতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।’
গতকাল (সোমবার) বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর উত্তরার জসীমউদ্দীন এলাকায় ক্রেন থেকে পড়ে বিআরটি প্রকল্পের গার্ডারের নিচে ওই প্রাইভেটকার চাপা পড়ে।
এরপর এক্সক্যাভেটর দিয়ে গার্ডারটি সরিয়ে প্রাইভেটকারটিতে থাকা পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, একটি বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাড়িটি আশুলিয়া যাচ্ছিল। কিন্তু, পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার দুর্ঘটনার স্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের সব ধরনের কাজ বন্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, ঢাকায় বিআরটি, মেট্রোরেলসহ অনেকগুলো প্রকল্পের কাজ চলমান। সব প্রকল্পের পরিচালকদের আগামী বৃহস্পতিবার নগর ভবনে ডাকা হয়েছে। তারা নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করলেই কাজ শুরু করতে পারবে।
ইতোমধ্যে, হাইকোর্টের তিনজন আইনজীবী দুর্ঘটনাটি নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনলে আদালত আইনজীবীদের এ বিষয়ে রিট আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পরামর্শ দেন।
অপরদিকে, উত্তরায় গার্ডার চাপা ঘটনায় জামালপুরের ইসলামপুর ও মেলান্দহে নিহত পরিবারের স্বজনদের পরিবারে চলছে মাতম।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী ইউনিয়নের ঢেংগার গ্রামের ফাহিমা (৪০) ও ঝর্ণা বেগম (৩০), ঝর্ণার মেয়ে জান্নাতুল (৬) ও ছেলে জাকারিয়া (২) এবং ফাহিমার বেয়াই রুবেল মিয়া (৫০)।
জানা যায়, নিহত ফাহিমার মেয়ের বৌভাত অনুষ্ঠান শেষে সবাই বাসায় ফেরার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। গার্ডারটি গাড়িটির দুই-তৃতীয়াংশ জায়গার ওপরে পড়ে। বামপাশের দুজন বেঁচে গেলেও রুবেল মিয়া, ফাহিমা বেগম, তার বোন ঝর্ণা বেগম এবং ঝর্ণার দুসন্তান ঘটনাস্থলে মারা যায়। শুধুমাত্র বেঁচে ছিল নতুন দম্পতি হৃদয় ও রিয়া মনি।
আজ সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য ওই পাঁচজনের মরদেহ নেওয়া হলে নিহতের রুবেলের লাশের দাবিতে হাসপাতালের মর্গের সামনে হাজির হয়েছেন স্ত্রী দাবিদার সাতজন নারী। সঙ্গে তাদের ছেলে-মেয়েরাও ছিল।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রুবেলের প্রথম স্ত্রীর নাম রেহানা। তার সঙ্গে ৩০ বছর আগে বিয়ে হয় রুবেলের। সেই ঘরের প্রথম ছেলে হৃদয় সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরেছেন।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।