পিআইবি প্রধান বনজের বিরুদ্ধে সাবেক এসপি বাবুলের মামলার আবেদন
(last modified Thu, 08 Sep 2022 08:53:58 GMT )
সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২২ ১৪:৫৩ Asia/Dhaka
  • পিবিআই প্রধান বনজ কুমার ও  সাবেক এসপি বাবুল আক্তার
    পিবিআই প্রধান বনজ কুমার ও সাবেক এসপি বাবুল আক্তার

বাংলাদেশ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন স্ত্রী হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। পিবিআই হেফাজতে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দাবি করে আজ (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছার আদালতে তিনি মামলার আবেদনটি করেন।

বাবুল আক্তারের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “মামলায় নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৫ (১) ধারা এবং সংশ্লিষ্ট আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। সময়কাল বলা হয়, ২০২১ সালের ১০ মে সকাল পৌনে ১০টা থেকে ১৭ মে সকাল ১০টা পর্যন্ত।

তিনি আরও বলেন, “মামলার আবেদনের শুনানি হয়েছে। আদালত আদেশের জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন।”

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার এসপি মো. নাজমুল হাসান, মেট্রো এসপি নাঈমা সুলতানা, খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা, সিএমপির ডিবি বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার একেএম মহিউদ্দিন সেলিম ও পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার ইন্সপেক্টর কাজী এনায়েত কবির।

মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১০ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে পিবিআই জেলা অফিস ও মেট্রো রুমে আটকে রাখা হয়। এসময় আসামিরা বাদীকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি না দিলে বিপদ আছে বলে হুমকি দেয়। এছাড়া পরিবারের বিপদ আছে বলেও শাসায়। এরপর ১২ তারিখে রিমান্ডে নেওয়া হয়। এই সময় হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ও চোখ বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদের নামে স্বীকারোক্তি দিতে রাজী করানোর জন্য বাবুল আক্তারের সঙ্গে নিষ্ঠুর, অমানবিক  ও লাঞ্ছনাকর আচরণ করা হয়।

আবেদনে আরও বলা হয়েছে, রিমান্ডে থাকাকালে তদন্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা বাদীকে গালিগালাজ ও অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করতো। এভাবে ১৭ তারিখ পর্যন্ত স্বীকারোক্তি আদায়ের উদ্দেশ্যে সারাক্ষণ চোখ বেঁধে, হ্যান্ডকাপ পরিয়ে, না ঘুমাতে দিয়ে, গোসল করতে না দিয়ে, পরিবারের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে না দিয়ে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও লাঞ্ছনাকর আচরণ করে তাকে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট দিয়ে নির্যাতন করা হয়।

সপরিবারে বাবুল আক্তার

উল্লেখ, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম (মিতু)। এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। এক পর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নেয় পিবিআই।

পরে গত বছরের ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। রিমান্ড শেষে প্রথমে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে জবানবন্দি দেননি বাবুল। পরে তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়।

চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি মিতু হত্যার ঘটনায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে পিবিআই। সংস্থাটি জানায়, একই ঘটনায় বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্ত এগিয়ে নিতে মিতুর বাবার মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। একই ঘটনায় দুটি মামলা চলতে পারে না। সম্প্রতি আদালত এটিকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করেন। তাই আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে ও বিধিবিধান অনুসারে মিতুর বাবার দায়ের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাবুলের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলবে।

মিতু হত্যার ঘটনায় দুটি মামলাই তদন্ত করছেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। এর মধ্যে বাবুল আক্তারের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলছে। অধিকতর তদন্ত চলাকালে আদালতের আদেশে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি বাবুল আক্তারকে নিজের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার যে মামলাটি দায়ের করেছিলেন, সেটির তদন্ত শেষ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন না নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৮  

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ