আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস: বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার চায় বিভিন্ন মহল
আজ ১৫ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘ গৃহীত আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। ২০০২ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, সুষ্ঠু নির্বাচন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, প্রশাসনের স্বচ্ছতা এবং স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৮ সাল থেকে দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে।
এ দিবসে এসে দেখা যাচ্ছে, গণতন্ত্র সংশ্লিষ্ট সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান পেছনের দিকে। সুশাসন, দুর্নীতি দমন, ইন্টারনেটে বাক-স্বাধীনতা- কোনো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে নেই।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ফ্রন্টিয়ার্সের মুক্ত গণমাধ্যম সূচক–২০২২ অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১০ ধাপ পিছিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬২তম দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) মাপকাঠিতে বাংলাদেশ একটি ‘হাইব্রিড’ শাসনব্যবস্থার দেশ।
পাঁচটি মানদণ্ডে ১০ পয়েন্ট ধরে বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি বিচার করে প্রতিবছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এগুলো হলো, নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারে সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার।
ইআইইউ’র প্রতিবেদনে অন্তর্ভূক্ত দেশগুলোর গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। তা হলো- পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, মিশ্র শাসন (হাইব্রিড) ও স্বৈরশাসন। 'ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র' এবং 'স্বৈরতন্ত্রের' মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে 'হাইব্রিড রেজিম'।
ইআইউ’র শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী, প্রায়শই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়া, দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ও দুর্বল আইনের শাসন, দুর্বল নাগরিক সমাজ ‘হাইব্রিড’ ধরনের শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য। এ ধরনের দেশে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা খর্ব করা হয়ে থাকে এবং সাংবাদিকদের হয়রানি ও চাপের মধ্যে রাখা হয়।
ইআইইউ ২০০৬ সালে যখন প্রথম এই সূচক প্রকাশ করে, তখন বাংলাদেশ ১০-এর মধ্যে ৬ দশমিক ১১ স্কোর নিয়ে চিহ্নিত হয়েছিল 'ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র' হিসেবে। কিন্তু পরের বছরই বাংলাদেশেকে 'হাইব্রিড রেজিম' বা মিশ্র শাসনের শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। তখন থেকে বাংলাদেশে বিরাজ করছে গণতন্ত্র আর স্বৈরতন্ত্রের মিশ্রিত রূপ ‘হাইব্রিড’ গণতন্ত্র।
গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে রেডিও তেহরানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। একটি জবরদস্তি সরকার দেশের বিরোধী দল ও জনসাধারণকে দমন নিপীড়ন চালিয়ে তাদের শাসন দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। তবে জনগণ সব রকমের দমন নিপীড়ন উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছে। একটা গণ আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে।
বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার রেডিও তেহরানকে বলেন, দেশে চলছে এমন রাজকীয় শাসন যেখানে জনগণের প্রতি সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। বাংলাদেশ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন করা হয়েছিল জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা জন্য। সে আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা না হলে তা হবে লাখো শহীদের সাথে চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সুজনের বার্ষিক সম্মেলনে আহ্বান জানিয়েছেন, সেখানে জনগণের অধিকার খর্ব করা হবে তার বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজকে সোচ্চার হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিদেশি সংস্থার সূচক দেখার দরকার নেই, দেশে বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন, বিরোধী দলগুলোর ওপর সরকারের দমননীতি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণহারে মামলা, সংসদে কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতি—এসবের মাধ্যমে দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে দেশ গণতন্ত্রের দিক দিয়ে পিছিয়ে গেছে।
অসামরিক শাসন আমলে এতটা পেছানোর ঘটনা ৫০ বছরের ইতিহাসে কখনোই ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘১৯৯১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সময়ে আমরা অনেক দূর এগিয়েছিলাম। ২০১৪ সালের পর থেকে ক্রমাগতভাবে পেছাচ্ছি।’#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৫