বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি খাত (তৃতীয় পর্ব)
'প্রবাসীদের অধিকার ও সম্পদের সুরক্ষা ছাড়া জনশক্তি রপ্তানি খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়'
মা ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান সব দেশে ফেলে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে গেছে দূরদেশে চলে। দিনে ঝরে গায়ের ঘাম রাতে চোখের জল ভবিষ্যতের স্বপ্নে ওরা বাড়ায় মনের বল। কাব্যিক দৃশ্যপটের এ মানুষগুলোই প্রবাসী। যাদের ঘামে শ্রমে আজ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন। কিন্তু দেশ স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও এই হতভাগা প্রবাসীরা স্বাধীনতার বিন্দুমাত্র স্বাদ পাননি। তাদের ঘাম ঝরানো রেমিট্যান্স মাস শেষ হওয়া মাত্রই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন।
বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যমতে, রেমিট্যান্স আয়ের প্রায় ৬৩ শতাংশ ব্যয় হয় দৈনন্দিন খরচের খাতে। এতে ওই পরিবারগুলো দারিদ্র্য দূর হয়। রেমিট্যান্স পাওয়ার পরে একটি পরিবারের আয় বাড়ে আগের তুলনায় ৮২ শতাংশ ।কিন্তু বাংলাদেশে প্রবাসীদের হয়রানির শিকার হয় শুরু থেকেই। বেসরকারি এজেন্সির দৌরাত্ম্য থেকেই ভোগান্তির উদ্ভব হয়। এরপরে বিদেশ থেকে ফিরেও নানা মুখি ভোগান্তিতে পড়েন রেমিটেন্স যোদ্ধারা।
মালয়েশীয়া প্রবাস বন্ধু সংগঠনের সভাপতি নাজমুল হুদা চৌধুরী রেডিও তেহরানকে বলেন, বাংলাদেশ বিমানবন্দরে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয় প্রবাসীরাই। পাসপোর্ট তৈরি থেকেই প্রবাসীদের হয়রানি শুরু হয়। দালালদের দৌরাত্ম্য, মধ্যসত্বভোগীদের বাগরা দেওয়া। সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি। বিমানের টিকিটের মূল্যবৃদ্ধিসহ সঠিক সময়ে বিদেশে এসে নির্ধারিত কাজ না পাওয়া। বাংলাদেশ মিশনগুলোর গাফিলতি, সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিদেশে এসেও হয়রানির শিকার হয়,নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থ হয় বলে অভিযোগ করেন প্রবাসী সংগঠনের এ নেতা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে একমত পোষণ করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) প্রেসিডেন্ট আবুল বাশার। রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যাদের শ্রমেঘামে দেশের রিজার্ভ সুরক্ষিত, তাদের প্রাপ্য সম্মান দেয়া এখন জাতি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। তবে বিমান বন্দরের যাত্রী সেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে জানিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেছেন, প্রবাসীদের প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ।আর যাত্রীদের সঙ্গে বিমানবন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের আচরণগত উন্নয়নের বিষয়েও দেয়া হচ্ছেন প্রশিক্ষন। একই সাথে ট্রলি সমস্যার সমাধানও ইতোমধ্যে করা হয়েছে বলে জানান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক। তবে লাগেজে মাল বহনের বিষয়ে কিছু পরামর্শও দেন তিনি। এদিকে, রিফিউজি এন্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট রামরুর প্রোগ্রাম পরিচালক মেরিনা সুলতানা রেডিও তেহরানকে বলেছেন,প্রবাসীরা নিজ পরিবারেও অনেক সময় শুধু অর্থ আয়ের মেশিনে পরিণত হচ্ছেন। অনেকের নিজস্ব সুখ শান্তি পরিত্যাগ করে পরিবারও সমাজের জন্য কাজ করে যখন তারা প্রাপ্য সম্মান বঞ্চিত হচ্ছে তখন তাদের কর্ম স্পৃহা কমে যায়। ফলে এর বিরুপ প্রভাব পড়ে অর্থনৈতিক খাতেও। তাই প্রবাসীদের প্রাপ্য সম্মান দিতে এখন প্রয়োজন সমন্বিত সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ। #
পার্সটুডে/নিলয় রহমান/বাবুল আখতার/৩১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন