আন্তর্জাতিক আল-কুদ্স দিবসে ঢাকায় সেমিনার ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, জাতীয় অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে যারা জড়িত, এমন প্রত্যেক জাতির জন্য একটি মাইলফলক হলো আল-কুদস দিবস। আল-কুদসের সাথে শুধু ধর্মীয় অনুভূতি নয়, জড়িত আছে ন্যায় ও অধিকারের প্রশ্ন। মসজিদুল আকসাসহ পবিত্র ভূমিকে যারা অবরুদ্ধ করে রেখেছে, তারা শুধু ইসলাম বিদ্বেষী নয়, তারা মানবতাবিদ্বেষী।
শনিবার আন্তর্জাতিক আল-কুদ্স দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। তেলাওয়াত করেন মাহে রমজান উপলক্ষে ইরান থেকে মেহমান হিসেবে বাংলাদেশে আগত তরুণ ক্বারী ড. মোস্তফা কাশেমী।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ফিলিস্তিনকে শুধু স্বীকৃতিই দেননি, বরং সবসময় মজলুম ফিলিস্তিনি জনতার পাশে থাকার যে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তা আজও অনুসরণ করে চলেছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন।
রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি বলেন, ইরানি জাতি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে সব সময় থাকবে কারণ ইরান এটাকে জাতীয় চেতনা ও ধর্মীয় অঙ্গীকার মনে করে। ইরানের সফল ইসলামী বিপ্লবের একটি অবিচ্ছেদ্য মেনিফেস্টো’ মনে করে। আল কুদস উদ্ধার মুসলিম জাতি হিসেবে একটি আবশ্যকীয় কর্তব্য মনে করে। কারণ এ ঘোষণা দিয়েছেন 'বিপ্লবের রূপকার আয়াতুল্লাহ খোমেনি (র)। উনার নেতৃত্ব যে বিপ্লব ইরানি জাতিকে বিশ্বময় একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র অবস্থান দিয়েছে এবং দিয়েছে আত্মসম্মান। রাহবার সাইয়েদ আলী খামেনেয়ী ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে দৃঢ় নৈতিক অবস্থানে রয়েছেন।

অপর বিশেষ অতিথি ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'মুসলমানদের অনৈক্যই ফিলিস্তিন সংকট জিইয়ে রেখেছে। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে বলছি পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর সংগ্রাম, স্বাধীনতা, ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষণার প্রতি আমার আগ্রহই আমাকে সামান্য অভিজ্ঞতা দান করেছে। এর আলোকে বলছি মুসলমানদেরকে নানা ভাবে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। শিয়া-সুন্নী তেমন একটা। এছাড়া বিভিন্ন দেশ ভাষা ও বর্ণের বিভক্তিও আছে। এসব বিভেদ ভুলে একটা মানবিক নৈতিক অবস্থানে আমাদেরকে থাকতে হবে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকথার একটি অসামান্য ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বলেই আজ এ আলোচনা বিশ্বময় হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে ড. কাউসার মোস্তফা আবুল ওলায়ী অতিথি, বক্তা এবং সুধী ভাই ও বোনদের ধন্যবাদ দেন প্রখর খরতাপের ভেতরেও রোজা রেখে উপস্থিত হওয়ার জন্যে। তিনি উল্লেখ করেন কষ্ট স্বীকার করে যারা এসেছেন তারা ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্যে আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাবেন। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত কোন সরকারই ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ছিলো না এখনো নেই। এখন জাতীয় ভাবে এই চেতনা আরো জোরদার হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান অধ্যাপক ড. আবদুস সবুর খান, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভাষ্যকার কবি জামাল উদ্দীন বারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক লেখক গবেষক অনুবাদক ড. মুমিত আল রশীদ, ঢাকাস্থ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের কালচারাল কাউন্সিলর সাইয়্যেদ রেজা মির মুহাম্মদী, সাংবাদিক ও কবি জামান সৈয়দী, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতা আহমদ আতিক, ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম আবদুল কুদ্দুস বাদশা, হুজ্জাতুল ইসলাম আশরাফ উদ্দীন খান, ইসলামী গবেষক জবাব মাঈনুদ্দীন, তরুণ আলেম আবু সালেহ, ক্বারী আলমগীর হোসেন মোল্লাহ, আসিফুর রহমান, লেখক গবেষক জনাব সাইদুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের পূর্বে বিকেল ৩:০০ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আল কুদস মুক্তির দাবিতে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। আল কুদস কমিটি বাংলাদেশ এর সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফা তারেকুল হাসান-এর সভাপতিত্বে উক্ত মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন মাওলানা ফারুক আহমেদ, এস এম আলী হায়দার, সাংবাদিক ও ডা. মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, কবি রফিক হাসান রিক, ক্বারী কণ্ঠশিল্পী মাওলানা হাবিবুর রহমান, কবি আমিন আল আসাদ, হাসান জুবায়ের ও মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৬