তিতাস গ্যাসের পাইপলাইনের ‘টেকনিক্যাল লাইফ’ ২০ বছর আগে শেষ; ঝুঁকিতে নগরবাসী
https://parstoday.ir/bn/news/bangladesh-i122402-তিতাস_গ্যাসের_পাইপলাইনের_টেকনিক্যাল_লাইফ’_২০_বছর_আগে_শেষ_ঝুঁকিতে_নগরবাসী
মসজিদ থেকে বারবার গ্যাসের চুলা না জ্বালাতে আহ্বান করে ঘোষণা আসছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই নেমে এসেছিল রাস্তায়। কেউ বা ফোন করেছে ফায়ার সার্ভিসকে আবার কেউবা তিতাস গ্যাসের কল সেন্টারে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মালিবাগ, সিদ্ধেশ্বরী, খিলগাও, মগবাজার, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, মহাখালী, ইস্কাটন, রামপুরা, রাজাবাজার, ক্রিসেন্ট রোড, বাড্ডা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গ্যাসের তীব্র গন্ধে সোমবার রাতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় বাসিন্দাদের মধ্যে।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
এপ্রিল ২৫, ২০২৩ ১২:৫৩ Asia/Dhaka

মসজিদ থেকে বারবার গ্যাসের চুলা না জ্বালাতে আহ্বান করে ঘোষণা আসছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই নেমে এসেছিল রাস্তায়। কেউ বা ফোন করেছে ফায়ার সার্ভিসকে আবার কেউবা তিতাস গ্যাসের কল সেন্টারে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মালিবাগ, সিদ্ধেশ্বরী, খিলগাও, মগবাজার, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, মহাখালী, ইস্কাটন, রামপুরা, রাজাবাজার, ক্রিসেন্ট রোড, বাড্ডা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গ্যাসের তীব্র গন্ধে সোমবার রাতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় বাসিন্দাদের মধ্যে।

তবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় তাদের ফেসবুক পেইজে জানিয়েছে যে, ঈদের ছুটিতে বিভিন্ন কারখানা বন্ধ থাকায় গ্যাস সরবরাহ না হওয়ায়  অতিরিক্ত চাপেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। একই কথা জানিয়েছেন তিতাস গ্যাসের অপারেশন্স বিভাগের পরিচালক মো: সেলিম মিয়া। যদিও এখন গ্যাসের গন্ধ কমে গেছে অনেক এলাকায় নেই কোন গন্ধ।

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এভাবে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়াকে 'বিপজ্জনক' বলে মন্তব্য করেছেন। কমপক্ষে ২০ বছর আগে তিতাস গ্যাসের বেশিরভাগ পাইপলাইনের ‘টেকনিক্যাল লাইফ’ শেষ হয়ে গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ পাইপের বিভিন্ন স্থানের ছিদ্র দিয়ে ধীরে ধীরে গ্যাস বের হয়ে আশপাশের শূন্যস্থানে জমা হচ্ছে। আগুন, উচ্চতাপ বা অন্য কোনো গ্যাসের সংস্পর্শে এলেই ঘটতে পারে বিস্ফোরণ। এসব কারণে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস পাইপলাইনগুলো এখন একেকটি বোমায় পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তিনটি কারণে গ্যাসের পাইপলাইনে লিকেজ হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- অতি পুরোনো পাইপলাইন, পাইপলাইনে সঠিকভাবে জং প্রতিরোধী আবরণ না দেয়া এবং মানহীন পাইপ ব্যবহার।

জানা গেছে, ১৯৭০ সাল থেকে এসব পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস বিতরণ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মাটির ক্ষার ও লবণের কারণে পাইপগুলো ক্ষয় হয়ে অধিকাংশ জায়গায় ছিদ্র হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় জং ধরে পাইপ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তৈরি হয়েছে হাজার হাজার ছিদ্র। এসব ছিদ্রপথে প্রায়ই গ্যাস বের হচ্ছে। এছাড়া অবৈধভাবে ফুটো করে গ্যাস সংযোগ দেওয়ায় বেশিরভাগ লাইনের অবস্থা জরাজীর্ণ। এর বাইরে প্রায় ৫০ হাজার সংযোগ রয়েছে যেগুলো সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করা রয়েছে। কিন্তু সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও গ্রাহক আঙিনায় রাইজার রয়ে গেছে। তিতাসের অসাধু কর্মীরা রাতের আঁধারে এসব বিচ্ছিন্ন সংযোগ ফের চালু করে দিচ্ছে। যেগুলো পুরো তিতাস গ্যাসের নেটওয়ার্ককে বড় ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এসব কারণে প্রায়ই তিতাসের পাইপলাইনে বিস্ফোরণ ঘটছে। কিন্তু তারপরও গ্যাসলাইন সংস্কারের উদ্যোগ নেই সরকারের। হাত গুটিয়ে বসে আছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি। ২০১০ সাল থেকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় বেড়েছে অবৈধ সংযোগের সংখ্যা । সরকারও বাসাবাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগকে নিরুৎসাহিত করছে। এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিতরণ নেটওয়ার্কের দিকে নজর কম দিচ্ছে কোম্পানিটি। এতে ঝুঁকি আরও বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে গ্যাস পাইপলাইনে এক ধরনের গন্ধযুক্ত রাসায়নিক মেশানো হয়। যাতে কোথাও লিকেজ হলে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে এবং সাবধান হওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু এ কার্যক্রম এখন বন্ধ থাকায় লিকেজ থেকে গ্যাস ছড়িয়ে পড়লেও কেউই তা জানতে পারছে না। তাই বড় ধরনের ঝুকির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।#

পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/২৫