ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তন
নাম বদলালেও নিবর্তন কমবে না, সাইবার আইনের অপব্যবহারের শংকা
অবশেষে বহুল বিতর্কিত ও সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তনের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে জানিয়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বাতিল নয়, পরিবর্তিত হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮।
দেশে-বিদেশে বহু সমালোচনার পর এ উদ্যোগে প্রথমত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ নামটিই বদলে ফেলা হচ্ছে। তার বদলে নতুন নাম হবে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’। বলা হচ্ছে এ আইনের অধিকাংশ ধারা নতুন আইনে থাকছে। তবে বিতর্কিত বিভিন্ন ধারায় বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যেসব ধারা নিয়ে বেশি বিতর্ক ছিল, কয়েকটির ক্ষেত্রে সেগুলোর সাজা কমিয়ে আনা হয়েছে। ‘জামিন অযোগ্য’ কয়েকটি ধারাকে করা হয়েছে ‘জামিন যোগ্য’। মানহানি মামলায় কারাদণ্ডের বিধান বাদ দিয়ে রাখা হচ্ছে শুধু জরিমানার বিধান। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে কমানো হচ্ছে সাজা। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেকগুলো ধারায় দ্বিতীয়বার অপরাধ করলে দ্বিগুণ সাজার বিধান ছিল, নতুন আইনে দ্বিতীয়বার সাজার বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। এরপরেও এ আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া কিংবা উদ্যোগ নিয়ে, বিভিন্ন চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিলে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল টিআইবি সতর্ক সাধুবাদ জানিয়েছে। বলেছে সাইবার নিরাপত্তা আইন যেন ডিএসএ-এর রূপান্তর না হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেছেন, এটা মূলত আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর চাপে লোক দেখানো একধরনের পরিবর্তন কিংবা সংশোধন। এর ফলে গণমাধ্যমের কিংবা বিরোধীমতের ওপর নিপীড়ন কমবে না।
আর মানবাধিকার কর্মী আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান লিটন মনে করেন, আইনটি মূলত নাম পরিবর্তনটাই বেশি হয়েছে, কার্যকারিতার ক্ষেত্রে নিবর্তন কতটা কমবে তা কিন্তু নিশ্চিত করে এখনো বলা যায় না। আর এধরনের আইনের পরিবর্তনে অংশীজনের অংশগ্রহণ ও মতামত নেয়াকে জরুরী বলে মনে করেন এই মানবাধিকার কর্মী।
এদিকে, বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস এ কথা জানিয়েছেন।
এসময় তিনি বলেন, নতুন আইনে যা পরিবর্তন হয়েছে বলে জানা গেছে, তা যেন কার্যকর হয় সে ব্যাপারে আশাবাদী তারা।
এসময় আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সংশোধনও না, রহিতও না; এটি পরিবর্তন করা হয়েছে। আইনটিতে এত বেশি পরিবর্তন হয়েছে যে, পুরনো নামটি রাখলে সংশোধনীই বলতে হতো। আর এতে করে মানুষ বিভ্রান্ত হতো। তাই আইনের ব্যাপ্তি বাড়ানোর জন্যই নামটি রাখা হয়েছে সাইবার সিকিউরিটি আইন।#
পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/৮