'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার করা উচিত’
বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনাকে 'পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে নির্মম ও জঘন্য গণহত্যা' বলে উল্লেখ করেছেন।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আজ (সোমবার) সকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এ গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।’ এছাড়াও তিনি আনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নসহ তিনটি সুপারিশ করেন।
মিয়ানমারের রাখাইনে মুসলমান নিধন অভিযান চলছে মন্তব্য করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে মিয়ানমার নৃশংস গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কিছু প্রভাবশালী রাষ্ট্রের মদদে আরাকানকে খালি করা হচ্ছে।
তিনি গত রবিবার থেকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে মিয়ানমারে গণহত্যা ও বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের করুণ বিবরণ শোনেন। কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নানা অসুবিধার বিষয়েও খোঁজ-খবর নেন মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান।
রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা 'জাতিগতভাবে নির্মূল' করার শামিল: জাতিসংঘ
এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রা'দ আল হুসেইন বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর যেভাবে পদ্ধতিগতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে, তা তাদের 'জাতিগতভাবে নির্মূল' করার শামিল।
সোমবার সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৩৬তম অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন।
জেইদ রাদ আল হুসেইন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে যেভাবে সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে, সেটি মনে হচ্ছে পাঠ্য বইয়ের জন্য 'জাতিগত নিধনের' উদাহরণ হয়ে থাকবে।
রাখাইনে রাজ্যে অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘের তদন্তকারীদের রাখাইন রাজ্যে ঢুকতে না দেয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি পুরোপুরি নির্ণয় করা যাচ্ছে না।
জেইদ রাদ আল হুসেইন বলেন, গত মাসের শেষ দিকে রাখাইনে সামরিক অভিযান শুরুর পর তিন সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের স্থলমাইন বসানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার।
রাখাইনে চলমান সহিংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা 'নাগরিকত্বের প্রমাণ' দিতে না পারলে তাদের আর মিয়ানমারে ঢুকতে দেয়া হবে না বলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যে ঘোষণা দিয়েছে সে বিষয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর'র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাও মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে সে দেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের জাতিগতভাবে নির্মূলের অভিযোগ তুলেছিলেন।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১১