ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের তদন্ত ও ব্যবস্থা চান ড. আরেফিন সিদ্দিক
(last modified Fri, 15 Mar 2019 17:27:01 GMT )
মার্চ ১৫, ২০১৯ ২৩:২৭ Asia/Dhaka

ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার যে ঘটনা ঘটেছে তা দুঃখজনক। আর ওইসব ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে ও অনশনে বসেছে। ফলে এসব বিষয়ে খতিয়ে একান্ত জরুরি। রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছে তাতে দেশবাসী মর্মাহত হয়েছে।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ডাকসু নির্বাচনে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ৭০ টি ভোট বাক্স প্রেরণ করা খুব কঠিন কাজ ছিল না। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের দাবি ছিল প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের। সেটা করা হয়নি।

ডাকসু নব নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর

ডাকসু নির্বাচনে কুয়েত মৈত্রী হল, রোকেয়া হলসহ কয়েকটি হলে যেসব অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে সেসব খতিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব, আরেফিন সিদ্দিক, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ ডাকসু নির্বাচন হয়ে গেল। আপনার দৃষ্টিতে কেমন হলো এ নির্বাচন?

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক: দেখুন, দীর্ঘ প্রায় ২৯ বছর পর ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এটা আমাদের সকলের দীর্ঘ দিনের একটা প্রত্যাশা ছিল যে ডাকসুকে আবার সক্রিয় করা দরকার। আর সেই প্রত্যাশাকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদ্যোগ নেয়, তফসিল ঘোষণা করা হয় ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উদ্যোগকে শুধু আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্ররা শুধু নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সারা দেশের মানুষও অত্যন্ত আগ্রহের সাথে ডাকসু নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করছিল।

হ্যাঁ ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নানা বাধাবিঘ্ন ছিল। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বিন্দ্বীতা করেছে তাদের নানা অভিযোগ ও দাবি ছিল। তারপরও কিন্তু ১১ মার্চ ২০১৯ তারিখ সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হলো। আমরা সবাই মনে করলাম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচনটি শেষ হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটিই সত্য এবং বাস্তব যে ডাকসু নির্বাচনে কয়েকটি জায়গায় এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের যে সম্মান, ভাবমূর্তি ও মর্যাদা-সেটি দারুনভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।

আমি মনে করি যেসব জায়গায় নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে তা অতি দ্রুত তদন্ত করে কারা এরজন্য দায়ী, কি কারণে অনিয়মের ঘটনা ঘটল, কারও দায়িত্ব অবহেলার কারণে নাকি অযোগ্যতার কারণে নাকি কোনো চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্রের কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে! এসব বিষয় স্পষ্ট করা দরকার এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি সারা দেশের জন্য একটা অমূল্য সম্পদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংসদের অতীতের যে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল সেটাকে কোনোভাবে ম্লান হতে দেয়া যায় না। তো সার্বিকভাবে আমি মনে করি ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যে প্রশ্নগুলো উঠেছে সে সম্পর্কে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সার্বিক চিত্রটি সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থাপিত হওয়া দরকার।

রেডিও তেহরান: নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ছাত্রলীগ বাদে ৫ প্যানেল নতুন নির্বাচনের দাবি করেছে- আপনিও আপনার আলোচনায় সেসবের কিছু চিত্র তুলে ধরলেন। কিন্তু ভিসি ড. আখতারুজ্জামান বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে। ভিসির এই দাবিকে কী করে ভুল বলা সম্ভব?....তিনি তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিতা সমতুল্য।

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক: দেখুন, তিনি আমার দীর্ঘ দিনের সহকর্মী। ফলে তাঁর কোনো বক্তব্য নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। তবে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আমি যা দেখেছি এবং গণমাধ্যমে যা উপস্থাপিত হয়েছে সে বিষয়ে বলতে চাই। আজকে তথ্য প্রযুক্তির যুগে গণমাধ্যমের দৃষ্টি থেকে কোনো কিছুকে লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ডাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছে আমার তো মনে হয় সারা দেশবাসী এসব ঘটনা দেখে মর্মাহত হয়েছে। এসব বিষয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা করা উচিত যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।

কুয়েত মৈত্রী হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ডাকসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাৎসরিক ক্যালেন্ডার ইভেন্ট। ১৯৭৩ সালে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু যে আদেশ আমাদের দিয়ে গেছেন সেই আদেশ বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা হয়ে থাকে। আদেশ ১৯৭৩' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো দিয়েছে। এখানে শুধু ডাকসু নির্বাচনই নয়; ভিসিকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হয়। সিনেট এবং সিন্ডিকেটে নির্বাচন হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ীরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদগুলোর নেতৃত্বদানকারী ডিনরাও নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যত নির্বাচন হয়েছে কোনো নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। অথচ এবারের ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর যেহেতু প্রশ্ন উঠেছে ফলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ধরে রাখা আমাদের সবচয়ে বড় দায়িত্ব এবং কর্তব্য। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কে কোন প্রেক্ষিত থেকে কি বলছেন তার সবতো আমার জানা নেই তবে এরইমধ্যে ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার যে ঘটনা ঘটেছে তা দুঃখজনক। আর ওইসব ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে অনশনে বসেছে। ফলে আমি আবারও বলব এসব বিষয়ে খতিয়ে একান্ত জরুরি।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক ড. আরেফিন সিদ্দিক, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড আর ছাত্ররা জাতি গঠনের ভবিষ্যত কারিগর’। সাম্প্রতিক ডাকসু নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে আদর্শিক এ বক্তব্যকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক: দেখুন, আমি সব সময় আশাবাদী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন প্রক্রিয়া যখন শুরু হলো অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখন তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করলেন তখন থেকে দেশের প্রায় সব সংবাদপত্রে এবং মিডিয়ায় এ সম্পর্কিত খবর যেভাবে এসেছে তাতো মোটামুটি একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছিল কোথায় কোথায় সমস্যা হতে পারে এবং কোথায় কোথায় অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। যেমন ধরুন- দাবি উঠেছিল নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনগুলো ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের। ব্যালট বাক্স নির্বাচনের দিনে হলে পাঠানোর দাবি করেছিল তারা। শুধু তাই নয় প্রশাসন থেকেও আগে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সকালে ব্যালট বাক্স হলে যাবে।

আমি একটি উদাহরণ দিতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশাল কর্মযজ্ঞের সময় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়ার সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই শুধু নয় ঢাকা শহরের অন্যান্য স্থানে ভর্তি পরীক্ষার যেসব কেন্দ্র থাকে সেসব জায়গায় পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্নপত্র  ও পরীক্ষার সরঞ্জাম প্রেরণ করি।

Image Caption

অতএব এবারের ডাকসু নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ৭০ টি ভোট বাক্স প্রেরণ করা খুব কঠিন কাজ ছিল না। এটা সকালেই পাঠানো সম্ভব ছিল। আমি এখানে আরও একটি বিষয় তুলে ধরতে যাই- তরুণ বিষয় বলেছিল। ফলে এসব ক্ষেত্রে যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হতো তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথা ছিল না। আর সে জায়গাতেই আমি আশাবাদী যে আমাদের তরুণ শিক্ষার্থীরা যেখানে সমস্যাগুলো নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিল সেখানে প্রশাসনের কার অবহেলায় বা কার অযোগ্যতার কারণে ওইসব ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। ১১ মার্চ ২০১৯ এর ডাকসু নির্বাচনে কুয়েত মৈত্রী হল, রোকেয়া হলসহ কয়েকটি হলে যেসব অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে সেসব খতিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তবে হয়তো দেখা যাবে যে একেবারেরই সীমিত সংখ্যক বা দুই একজনের কারণে অপ্রিয় ঘটনাগুলো ঘটেছে। আর সেই জায়গায় সতর্ক থাকা দরকার।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৫