জামায়াতের সংস্কারপন্থীদের নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ, ১৯ দফা কর্মসূচি
https://parstoday.ir/bn/news/bangladesh-i69896
১৯ দফা কর্মসূচি ও ‘জন–আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ স্লোগানে একটি রাজনৈতিক মঞ্চের ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াত ইসলামীর সংস্কারপন্থী নেতারা। তারা, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের’ দায়ে জড়িতদের বিচারও দাবি করেছেন।
(last modified 2025-07-09T12:00:31+00:00 )
এপ্রিল ২৭, ২০১৯ ১৫:২৩ Asia/Dhaka
  • জামায়াতের সংস্কারপন্থীদের নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ, ১৯ দফা কর্মসূচি

১৯ দফা কর্মসূচি ও ‘জন–আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ স্লোগানে একটি রাজনৈতিক মঞ্চের ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াত ইসলামীর সংস্কারপন্থী নেতারা। তারা, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের’ দায়ে জড়িতদের বিচারও দাবি করেছেন।

জামায়াতে ইসলামী থেকে সম্প্রতি বহিষ্কৃত শুরা সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু আজ (শনিবার) সকালে রাজধানীর বিজয়নগরের একটি হোটেলে নতুন এই রাজনৈতিক উদ্যোগের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। তিনি বলেন, তাঁরা কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠন করবেন না। তাদের উদ্যোগ হবে ‘জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য, উন্মুক্ত একটি প্ল্যাটফর্ম।

জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ শীর্ষক ছয় পৃষ্ঠার ঘোষণাপত্রের শিরোনাম ছিল ‘স্বাধীন সত্তার বিকাশে অধিকার ও কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি’; আর স্লোগান ছিল ‘জন-আকাঙ্ক্ষার নতুন রাজনীতি’। এ জন্য তাঁরা ১৯ দফা ভিত্তিক একটি কর্মসূচিও দিয়েছেন। উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য পাঁচটি কমিটির গঠন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ‘জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’-এর সমন্বয়ক মজিবুর রহমান মঞ্জু জামায়াতে ইসলামীর একাত্তরের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী একমাত্র দল না হলেও পরবর্তী সময়ে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান আর দলীয় ভূমিকা নিয়েই বেশি প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দল হিসেবে জামায়াত মুক্ত ও স্বাধীন বাংলাদেশে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মুক্তিযুদ্ধের সময়ের দলীয় ভূমিকার জন্য দায়-দায়িত্ব স্বীকার এবং ঐতিহাসিক ক্ষত উপশমের আক্ষরিক উদ্যোগ গ্রহণের দাবিকে বরাবরই অগ্রাহ্য করেছে। এই রাজনৈতিক অবস্থানের বোঝা একাত্তর পরবর্তী প্রজন্মের বহন করা উচিত নয় বলে আমরা বিশ্বাস করি। মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সকালের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার। একে বিভেদ বিভক্তি ও সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহারের যেকোনো প্রবণতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন  মজিবুর রহমান মঞ্জু

জামায়াতে ইসলামীর ভেতর সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই কি নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ নেয়া হলো কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আমি, আমরা আর অতীতে ফিরতে চাই না। আমরা আর পিছনের দিকে যেতে চাই না। এটা সম্পূর্ণ নতুন উদ্যোগ।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত কেউ নতুন এই উদ্যোগের সঙ্গে আছে কি না, জানতে চাইলে সংগঠনটির সাবেক এই শুরা সদস্য বলেন, ‘আমার সঙ্গে কে আছে, কে নাই- সেটা বিষয় না। যারা আমাদের চিন্তাকে সমর্থন করেন, তাঁরা আমাদের সঙ্গে আছেন। এখানে সব দল-মত, ধর্মের লোকজন আছে। আমরা অধিকারকেন্ত্রিক রাজনীতির কথা বলব।

মঞ্জু আরো বলেন, ‘আমাদের আদর্শ ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা। আমরা বলে দিয়েছি, জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ। যেমন মুক্তিযুদ্ধে সব দল-মতের লোক ছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে থাকায় তাদের দলের লোক ভারি ছিল। আমাদের অনুপ্রেরণা সাম্য ও উদারতা।

নতুন এই উদ্যোগকে জামায়াতে ইসলামী ভাঙন হিসেবে দেখছেন কি না, জানতে চাইলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘আমরা ভাঙা-গড়ার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। ভাঙা-গড়ার রাজনীতির অতীত অভিজ্ঞতা ভালো না। তাই আমাদের এই উদ্যোগ সম্পূর্ণ নতুন। কারো ভাঙা-গড়ার দায়িত্ব আমরা নেব না।

যত দ্রুত সম্ভব রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হবে এবং সেটা নিয়ে কাজ করছেন জানিয়ে মঞ্জু এই উদ্যোগের সঙ্গে সরকারের কোনো ধরনের যোগসাজশও উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কারো মদদ বা কারো চিন্তা বা কর্ম বাস্তবায়ন করতে আসিনি।

অনুষ্ঠানের মঞ্চে অন্য অনেকের সঙ্গে জামাতপন্থী আইনজীবী হিসেবে আদালতপাড়ায় পরিচিত অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামও ছিলেন। তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে জামায়াতের সাবেক নেতার কাতারে ফেলবেন না। আমি জামাতের আইনজীবী ছিলাম তাদের দলের লোক না।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাওলানা আবদুল কাদের, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের আইনজীবী হিসেবে কাজ করা তাজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী নজমুল হুদা অপু, সাবেক বিমান বাহিনী কমকর্তা সালাহ উদ্দিন, জুবায়ের হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. কামাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মোস্তফা নূর, গোলাম ফারুক, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি এহসান জুবায়ের প্রমুখ।

দলের সংস্কার ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া নিয়ে সম্প্রতি জামায়াতে বিরোধ দেখা দেয়। এর রেশ ধরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন প্রভাবশালী নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। তিনি দলের জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি ছিলেন। একই বিষয়ে প্রকাশ্য অবস্থান নেয়ায় দল থেকে বহিষ্কার হন মজিবুর রহমান। তিনি নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গঠনের কাজ শুরু করলেও আবদুর রাজ্জাক এ ধরনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত না থাকার কথা বলেছেন। মঞ্জুও বলেছেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক এ মুহূর্তে তাদের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নন।#

 পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৭