বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ও অর্থ-প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতার উদ্যোগ: প্রতিক্রিয়া
(last modified Fri, 07 Jun 2019 12:25:59 GMT )
জুন ০৭, ২০১৯ ১৮:২৫ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন  ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলধন বাবদ সরকারের কাছ থেকে জনগণের করের টাকা নিলে জবাবদিহি করতে হবে। তাদের মূলধনের অর্থ কিভাবে খরচ হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে। ঋণ বা বিনিয়োগের অর্থ কোথায় যাচ্ছে, ঋণ আদায় না হওয়ার কারণ কি এসব তথ্যও পর্যালোচনা করা হবে। 

সম্প্রতি  কয়েকটি ব্যাংকের মূলধন সংকট, বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ এবং  ব্যাংক থেকে  অর্থ লোপাটের ঘটনায়  উদ্বিগ্ন হয়ে  সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ সব   সিদ্ধান্ত নেয়া  হয়েছে। 

এরই আলোকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জবাবহিদিতা আদায় করার  উদ্যোগ নিয়েছে।

এতদিন  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে  ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে তদারকি চলছিল। 

নতুন  সিদ্ধান্ত আনুয়ায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে মাসিক-ভিত্তিতে এ সংক্রান্ত তথ্য জানাতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ, নির্বাহী ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকেও জবাবদিহি করতে হবে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে সংস্থার সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট স্থগিত থাকবে। দুর্নীতি করলে আটকে যাবে পেনশনের সুবিধা। 

সরকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ তদারকির নতুন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বাসদের কেন্দ্রী নেতা রাজেকুজ্জামান রতন রেডিও তেহরানকে বলেন,  এ ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংক, শেয়ারবাজার বা  অন্যান্য আর্থিক  সংগঠনকেও নিবিড় তদারকির মধ্যে আনা উচিত। 

তবে তিনি এটাও আশংকা করেছেন,  যে ক্ষমতার  বলয় থেকে যারা আর্থিক বিষয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি করছে, ব্যাংক লোপাট করেছে, শেয়ারবাজার লুট করেছে বা বড় অংকের ঋণ-খেলাপি হয়েছে-  এদেরকে আড়াল করার জন্য অথবা ভবিষ্যতেও তাদের দায়মুক্তি দেবার কৌশল হিসেবেও সরকার এসব  নতুন ফন্দি করতে পারে। 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন  কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলেও আর্থিক বাজারের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে না। অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

 এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক চাপ বেশি। রাজনৈতিক চাপমুক্ত খেকে  এগুলো পরিচালিত হলে অবস্থার উন্নতি হবে। একই সঙ্গে জবাবদিহিতা বাড়বে।

তিনি বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বাংলাদেশ ব্যাংক কাউকে পরিচালক বা এমডি নিয়োগ না দিলেও মন্ত্রণালয় তার নিজস্ব ক্ষমতায় নিয়োগ দিচ্ছে। এ প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে।

উল্লেখ্য,  সরকারি খাতের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূলধনের বড় অংশই সরকার জনগণের করের টাকা থেকে জোগান দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সরাসরি মূলধন হিসেবে অর্থ দেয়া, রাইট শেয়ার কেনার মাধ্যমে, বাজেটের মাধ্যমে বরাদ্দ রেখে। এসব অর্থ সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ হিসাবে বিনিয়োগ করে। কিন্তু ঋণ আদায় না হওয়ায় খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলধন সংকটে পড়েছে। এ সংকট মেটাতে সরকার থেকে আবারও অর্থের জোগান দেয়া হচ্ছে। এগুলো যাতে বন্ধ হয় সেজন্য তাদের কাছ থেকে জবাবদিহিতা আদায় করা হবে।

এর আগে সরকারি খাতের বেসিক ব্যাংক জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। হলমার্ক গ্রুপ জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দেয়। এছাড়া লোকসানের ভারে জর্জরিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাবিনকো। 

এ অবস্থার প্রেক্ষিতে সরকারী ব্যাংক ও আর্থিক  প্রতিষ্ঠানগুলিকে  সরকারের কাছে জবাবদিহি করানোর উদ্যোগই নেয়া হয়েছে।

বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে সরকারি খাতে বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে ৬টি, বিশেষায়িত ব্যাংক ২টি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২টি। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে আছে, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন, সমবায় ব্যাংক, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক ও কর্মসংস্থান ব্যাংক।

বর্তমানে কর্মসংস্থান ব্যাংক, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি তদারকি করতে পারে না। বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে তদন্ত করতে পারে। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব আইনে চলে। এগুলোকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এছাড়া,  আইসিবি তদারকি করছে  বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক তদারকি করে সমবায় অধিদফতর। কর্মসংস্থান ব্যাংক ও বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন তদারকি করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

অপরদিকে  ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক, জীবন বীমা কর্পোরেশন, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে সরকারের অর্থ রয়েছে। এর মধ্যে জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে তদারকি করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। এসব প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউস হিসেবে কাজ করে। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক তদারকি করে জাতীয় ডাকঘর। প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মালিক হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানে তদারকি জোরদার করবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।#

পার্সটুডে/ আবদুর রহমান খান/এমএএইচ/৭

ট্যাগ