পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি: জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক ও উদ্বেগ
বাংলাদেশে উৎপাদিত পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি প্রকাশ পাবার পর থেকেই জনমনে একরকম আতঙ্ক ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এদিকে, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, এ সব প্রচারণার ফলে তাদের দুধের বিক্রি কমে গেছে।
এ অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারে পরিচালিত দ্বিতীয় দফার পরীক্ষায় ১০টি সংগৃহীত নমুনার সবগুলোতেই ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে।পরীক্ষার এ ফলাফল আজ শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগের বারের পাঁচটি কোম্পানির সাতটিতে পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের একই জায়গা থেকে সংগৃহীত নমুনা এবং একই জায়গা থেকে খোলা দুধের সংগৃহীত ৩টি নমুনা, অর্থাৎ সর্বমোট ১০টি নতুন নমুনায় এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি একই নিয়মে একই উন্নত ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর ফলাফল আগের মতোই উদ্বেগজনক। এবারও সবগুলো নমুনাতেই ৪টি ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিক শনাক্ত করা গেছে। এগুলি হচ্ছে-অক্সিটেট্রাসাইক্লিন,এনরোফ্লক্সাসিন,সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং লেভোফ্লক্সাসিন। এর মধ্যে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন এ দু’টি প্রথম বারের পরীক্ষায় ধরা পরেনি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ১০টি নমুনার মধ্যে ৩টিতে এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ৪টি, ৬টিতে এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ৩টি এবং ১টিতে এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ২টি। এ সংক্রান্ত একটি রীটের শুনানী আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।
এর আগে , গত ৯ জুলাই হাইকোর্ট দুধ নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ায়, এমন প্রতিবেদন ও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে পন্যের মান ও গুনাগুন নির্ধারনকারী সরকারী সংস্থা বাংলাদেশ ষ্টান্ডার্ড এন্ড টেষ্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) কে নির্দেশ দিয়েছে।
আদালত ৯ জুলাই শুনানিকালে বিএসটিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘দুধ পরীক্ষার প্রতিবেদন নিয়ে আমরা কোনও আদেশ দেইনি, মতামতও প্রকাশ করিনি। অথচ আপনি মিডিয়ার সামনে আদালতের সন্তোষ প্রকাশের কথা বললেন। আপনার এই বক্তব্যের পর প্রাণ গ্রুপ গণমাধ্যমে হাইকোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে তাদের পণ্যের গুণগান প্রচার করছে। এই দুধ খেয়ে যদি কেউ অসুস্থ হয়, তার দায় কে নেবে?’’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর সেফ ফুড-এর সভাপতি ড: মো: রফিকুল ইসলাম জানান দুধের পুষ্টি গ্রহন না করে কোন সমাজই টিকতে পারে না । তাই নিরাপদ দুধ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের বিশেষায়িত বিভাগ গুলোকেই নিয়মিত দুধের গুণ ও মানের পরীক্ষা চালাতে হবে তা তা জনগণকে জানাতে হবে যাতে তারা এ ব্যাপারে আস্থা অর্জন করতে পারে।
এর আগে গত বছরের প্রথম দিকে পাস্তুরিত দুধ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষণা প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়-বাজারে থাকা ৭৫ শতাংশ পাস্তুরিত দুধেই ভেজাল ধরা পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি।
এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর হমেদ হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন । ওই রিট আবেদনের প্রক্ষিতে হাইকোর্ট গত বছরের ২১ মে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন এবং বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন । খাদ্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালককে দেওয়া এই নির্দেশের পর গত ২৫ জুন বিএসটিআইয়ের আইনজীবী ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে আশঙ্কাজনক বা ক্ষতিকর কোনও কিছুই পাওয়া যায়নি।
কিন্তু একইদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ ও বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের গবেষকগণ এক সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করে যে, পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার কোনোটিতেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রার সলিড নট ফ্যাট’পাওয়া যায়নি। বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী দুধে ‘ফ্যাট ইন মিল্ক’ ৩.৫ শতাংশ থাকার কথা থাকলেও এগুলোতে আছে ৩.৬ থেকে ৩.৬১ শতাংশ। এসব দুধে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে, যা মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।