কাঁচা চামড়া নিয়ে চরম বিপাকে ব্যবসায়ীরা; আওয়ামী সিন্ডিকেটকে দুষছে বিএনপি
(last modified Tue, 13 Aug 2019 12:02:27 GMT )
আগস্ট ১৩, ২০১৯ ১৮:০২ Asia/Dhaka

সিলেটে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ঈদের দিন প্রায় ৮০০ পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছিল খাসদবির দারুস সালাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এ চামড়া বিক্রির আয় দিয়ে মাদ্রাসার কিছুটা খরচ চলবে বলে আশা করেছিল তারা। কিন্তু এবার চামড়ার ন্যায্য দাম না পেয়ে সেগুলো রাস্তায় ফেলে দিয়ে এসেছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, মাদ্রসার ছাত্ররা তাদের সংগৃহীত চামড়া নিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ আম্বরখানায় বিক্রি করতে গেলে ব্যবসায়িরা প্রতিপিস চামড়া মাত্র ২৫-৩০ টাকায় কিনতে চায়।  চামড়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ স্বরুপ ৮০০টি  চামড়া আম্বরখানায় ফেলে চলে যান মাদ্রাসার ছাত্ররা।

উল্লেখ্য, সরকার এ বছর গরুর কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে । সারা দেশে খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার নির্ধরিত দাম তো জুটছেই না, বরং  গত ৩১ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কমদামে বিক্রি হচ্ছে কোরবানীর পশুর চামড়া।বিগত বছরগুলোতে নামাজের পরপরই বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অসংখ্য মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীর ভিড় দেখা গেলেও এবার তাদের দেখা মেলেনি।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৩০০ টাকা দিয়ে কেনা চামড়া আড়তে ৫০ টাকায়ও বিক্রি করতে পারছেন না

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদশে হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাজী দেলোয়ার হোসনে সাংবাদিকদের বলেন, চামড়া কেনার মতো পর্যাপ্ত টাকাও ব্যবসায়ীদের কাছে নেই। তাই এবার মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সব চামড়া কেনা সম্ভব হবে না। তাছাড়া, লবণ দিয়ে চামড়া রাখার মতো ক্যাপাসিটি থাকলেই ব্যবসায়ীদের চামড়া কেনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সব মিলিয়ে এবছর চামড়াখাতে ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে। ট্যানারি মালিকরা সাড়ে তিনশ কোটি টাকার বেশি বকেয়া রেখেছেন। অর্থ সংকটের কারণে  এ বছর ২৪৫ জন আড়তদারের মধ্যে মাত্র ২০ থেকে ৩০ জন আড়তদার চামড়া কিনতে পারছেন। ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে না পারলে অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। 

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, চামড়ার পুরো বাজার নির্ভর করছে রফতানির ওপর। আগের চেয়ে রফতানি কমে গেছে। ফলে আমাদের চামড়া সংগ্রহও কমাতে হয়েছে। এছাড়া এবার ট্যানারি ব্যবসায়ীদের অনেকেই আগের বছরের চামড়া বিক্রি করে শেষ করতে পারেনি। আর অর্থের সংকট তো আছেই।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ

ওদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ আজ দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী সিন্ডিকেট চামড়ার দাম কমিয়ে ট্যানারি শিল্প ধ্বংস ও গরীব-মিসকিনদের হক নষ্ট  করেছে। 

রিজভী বলেন, চামড়ার মূল্যের এমন করুণ অবস্থা দেখে, নীরব প্রতিবাদ হিসাবে সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি না করে কোরবানির চামড়া মাটির নিচে পুঁতে রাখছেন অনেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার অজুহাতে আওয়ামী ব্যবসায়ী  সিন্ডিকেট চামড়া নিয়ে এ কারসাজি করছে গত কয়েক বছর ধরে। এই চক্রের স্বার্থ রক্ষা করছে নিশুতি রাতে ভোট করা সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়ার বর্গফুট প্রতি একটা হাস্যকর দাম বেধে দিয়ে তাদেরকেই সহায়তা করছে।

তিনি বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম হু হু করে বাড়লেও দফায় দফায় কমতে কমতে দশ ভাগের এক ভাগে নেমেছে গরীব-মিসকিনের হক এই কাঁচা চামড়ার দাম। এই অল্প দামের কারণে চামড়া ব্যাপকভাবে পাচার হচ্ছে পার্শবর্তী দেশে।##

পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।